বিষয়বস্তুতে চলুন

সাকীফার ঘটনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

৫৪ নং লাইন: ৫৪ নং লাইন:


== আসহাব ও কুরায়েশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবস্থান ==
== আসহাব ও কুরায়েশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের অবস্থান ==
আলী (আ.), মহানবির (স.) আহলে বাইত এবং মুহাজির ও আনসারদের একটি দল আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার  বিরোধিতা করেন। ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তিতে, আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব, ফজল বিন আব্বাস, জুবায়ের বিন আওয়াম, খালিদ বিন সাঈদ, মিকদাদ বিন আমর, সালমান ফারসি, আবুযার গিফারি, আম্মার ইবনে ইয়াসির, বাররা’ ইবনে আযেব ও উবাই ইবনে কা’ব প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। [৩০]
আলী (আ.), মহানবির (স.) [[আহলে বাইত (আ.)|আহলে বাইত]] এবং [[মুহাজির]] [[আনসার|আনসারদের]] একটি দল আবুবকরের হাতে [[বাইয়াত]] করার  বিরোধিতা করেন। ঐতিহাসিক বর্ণনার ভিত্তিতে, [[আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব]], [[ফজল বিন আব্বাস]], [[জুবায়ের বিন আওয়াম]], [[খালিদ বিন সাঈদ]], [[মিকদাদ ইবনে আমর|মিকদাদ বিন আমর]], [[সালমান ফারসি]], [[আবুযার গিফারি]], [[আম্মার ইবনে ইয়াসির]], [[বাররা’ ইবনে আযেব]] [[উবাই ইবনে কা’ব]] প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। [৩০]


কিছু কিছু আসহাব ও কুরায়েশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়ে আবুবকরের যোগ্যতার অভাবের প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন, সেগুলোর কয়েকটি নিন্মরূপ:
কিছু কিছু আসহাব ও কুরায়েশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন সময়ে মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার বিষয়ে আবুবকরের যোগ্যতার অভাবের প্রতিও ইঙ্গিত করেছেন, সেগুলোর কয়েকটি নিন্মরূপ:


'''ফাযল ইবনে আব্বাস:''' কুরাইশের বিরুদ্ধে প্রতারণা, সুযোগের সদ্ব্যবহর ও সত্য গোপন করার অভিযোগ তুলে মহানবির (স.) আহলে বাইত বিশেষ করে আলীকে (আ.) তাঁর (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য অধিক যোগ্য বলে ঘোষণা করেন।[৩১]
'''ফাযল ইবনে আব্বাস:''' কুরাইশের বিরুদ্ধে প্রতারণা, সুযোগের সদ্ব্যবহার ও সত্য গোপন করার অভিযোগ তুলে মহানবির (স.) আহলে বাইত বিশেষ করে আলীকে (আ.) তাঁর (স.) স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য অধিক যোগ্য বলে ঘোষণা করেন।[৩১]


'''সালমান ফারসি:'''  মুসলমানদের উদ্দেশ্যে করা মন্তব্যে তিনি সাকীফায় গৃহীত বাইয়াতকে ভুল এবং একে আল্লাহর রাসূলের (স.) আহলে বাইতের (আ.) অধিকার বলে আখ্যায়িত করেছেন; যাঁরা সমাজের জন্য কল্যাণকর।[৩২]
'''সালমান ফারসি:'''  মুসলমানদের উদ্দেশ্যে করা মন্তব্যে তিনি সাকীফায় গৃহীত বাইয়াতকে ভুল এবং একে আল্লাহর রাসূলের (স.) আহলে বাইতের (আ.) অধিকার বলে আখ্যায়িত করেছেন; যাঁরা সমাজের জন্য কল্যাণকর।[৩২]


'''আবুযার গিফারী:''' ঘটনার দিন আবুযার গিফারি মদিনায় উপস্থিত ছিলেন না এবং মদিনায় ফেরার পর আবুবকরের হাতে বাইয়াতের বিষয়টি জানতে পারেন। ঐতিহাসিক বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনা মোতাবেক তিনি সাকীফার ঘটনা শোনার পর তাৎক্ষণিক[৩৩] এবং আরেকবার উসমান ইবনে আফফানের যুগেও মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ততার বিষয়ে আহলে বাইতের (আ.) অধিকার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন।[৩৪]  
'''আবুযার গিফারী:''' ঘটনার দিন আবুযার গিফারি মদিনায় উপস্থিত ছিলেন না এবং মদিনায় ফেরার পর আবুবকরের হাতে বাইয়াতের বিষয়টি জানতে পারেন। ঐতিহাসিক বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনা মোতাবেক তিনি সাকীফার ঘটনা শোনার পর তাৎক্ষণিক[৩৩] এবং আরেকবার [[উসমান ইবনে আফফান|উসমান ইবনে আফফানের]] যুগেও মহানবির (স.) স্থলাভিষিক্ততার বিষয়ে [[আহলে বাইত (আ.)|আহলে বাইতের (আ.)]] অধিকার প্রসঙ্গে মন্তব্য করেছেন।[৩৪]  


'''মিকদাদ ইবনে আমর:''' সাকীফার সিদ্ধান্ত মানার বিষয়ে মুসলমানদের আচরণকে আশ্চর্যজনক আখ্যায়িত করে মিকদাদ ইবনে আমর ইমাম আলী (আ.) এ বিষয়ের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হওয়ার বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছেন।[৩৫]
'''মিকদাদ ইবনে আমর:''' সাকীফার সিদ্ধান্ত মানার বিষয়ে মুসলমানদের আচরণকে আশ্চর্যজনক আখ্যায়িত করে মিকদাদ ইবনে আমর ইমাম আলী (আ.) এ বিষয়ের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হওয়ার বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছেন।[৩৫]


'''ওমর ইবনে খাত্তাব:''' জীবনের শেষ দিনগুলিতে ওমর ইবনে খাত্তাব জনসাধারণের উদ্দেশে প্রদত্ত খোতবায় বলেন, ‘আবুবকরের হাতে বাইয়াত ছিল একটি বিচ্যুতি ও ভুল; যা ঘটেছে এবং অতিক্রান্ত হয়েছে। হ্যাঁ এমনই ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ্ জনগণকে ঐ বিচ্যুতির অকল্যাণ থেকে রক্ষা করেছেন, যে-ই খলিফা নির্বাচনে এমন পদ্ধতি গ্রহণ করবে তাকে হত্যা করো।[৩৬]
'''ওমর ইবনে খাত্তাব:''' জীবনের শেষ দিনগুলিতে ওমর ইবনে খাত্তাব জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত খোতবায় বলেন, ‘আবুবকরের হাতে বাইয়াত ছিল একটি বিচ্যুতি ও ভুল; যা ঘটেছে এবং অতিক্রান্ত হয়েছে। হ্যাঁ এমনই ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ্ জনগণকে ঐ বিচ্যুতির অকল্যাণ থেকে রক্ষা করেছেন, যে-ই খলিফা নির্বাচনে এমন পদ্ধতি গ্রহণ করবে তাকে হত্যা করো।[৩৬]




[আল-ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ গ্রন্থে ইবনে কুতাইবাহ
[আল-ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ গ্রন্থে ইবনে কুতাইবাহ


বনি উমাইয়া উসমান ইবনে আফফানকে ঘিরে এবং বনি যোহরা সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফকে ঘিরে বসেছিল; তারা সকলে মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। যখন আবুবকর ও আবু উবাইদাহ তাদের কাছে এলেন এবং আবুবকরের হাতে মুসলমানদের বাইয়াতের কাজও সম্পন্ন হয়েছিল, ওমর ইবনে খাত্তাব মসজিদে সমবেতদের উদ্দেশে বললেন: তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বসেছো? ওঠো, আবুবকরের হাতে বাইয়াত করো, আমি তার হাতে বাইয়াত করেছি। ওমরের কথা শেষ হওয়ার পর উসমান ইবনে আফফান ও উপস্থিত বনি উমাইয়ার লোকেরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করে। একইভাবে সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফের সাথে যারা সমআকিদার অধিকারী ছিলেন তারাও।[৩৭]
বনি উমাইয়া উসমান ইবনে আফফানকে ঘিরে এবং বনি যোহরা সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফকে ঘিরে বসেছিল; তারা সকলে মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। যখন আবুবকর ও আবু উবাইদাহ তাদের কাছে এলেন এবং আবুবকরের হাতে মুসলমানদের বাইয়াতের কাজও সম্পন্ন হয়েছিল, ওমর ইবনে খাত্তাব মসজিদে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বসেছো? ওঠো, আবুবকরের হাতে বাইয়াত করো, আমি তার হাতে বাইয়াত করেছি। ওমরের কথা শেষ হওয়ার পর উসমান ইবনে আফফান ও উপস্থিত বনি উমাইয়ার লোকেরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করে। একইভাবে সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফের সাথে যারা সমআকিদার অধিকারী ছিলেন তারাও।[৩৭]


আবু সুফিয়ান: আবু সুফিয়ানকে মহানবি (স.) কোন কাজে মদিনার বাইরে প্রেরণ করেছিলেন। মদিনায় ফিরে আল্লাহর নবির (স.) ওফাত এবং সাকীফায় বাইয়াতের বিষয়ে অবগত হওয়ার পর এ সম্পর্কে আলী (আ.) ও আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলেন। তাদের দু’জনের নীরবে গৃহে অবস্থানের কথা জেনে তিনি বললেন: ‘আল্লাহর কসম, যদি তাদের জন্য জীবিত থাকি তাহলে তাদের পাগুলোকে (মিম্বেরের) উঁচু স্থানে নিয়ে যাব।’ তিনি আরও বললেন: ‘এমন ধূলোবালি আমি উড়তে দেখছি রক্তবৃষ্টি ছাড়া তা (বাতাস থেকে) পরিচ্ছন্ন হবে না।’[৩৮] বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, মদিনায় প্রবেশের পর আবু সুফিয়ান আলীর (আ.) খেলাফতের সমর্থনে এবং আবুবকর ও ওমরের তিরস্কারে কিছু পংতি আবৃতি করেন।[৩৯]
আবু সুফিয়ান: আবু সুফিয়ানকে [[মহানবি (স.)]] কোন কাজে মদিনার বাইরে প্রেরণ করেছিলেন। মদিনায় ফিরে আল্লাহর নবির (স.) ওফাত এবং সাকীফায় বাইয়াতের বিষয়ে অবগত হওয়ার পর এ সম্পর্কে [[আলী (আ.)]] [[আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব|আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের]] প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলেন। তাদের দু’জনের নীরবে গৃহে অবস্থানের কথা জেনে তিনি বললেন: ‘আল্লাহর কসম, যদি তাদের জন্য জীবিত থাকি তাহলে তাদের পাগুলোকে (মিম্বারের) উঁচু স্থানে নিয়ে যাব।’ তিনি আরও বললেন: ‘এমন ধূলোবালি আমি উড়তে দেখছি রক্তবৃষ্টি ছাড়া তা (বাতাস থেকে) পরিচ্ছন্ন হবে না।’[৩৮] বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, মদিনায় প্রবেশের পর আবু সুফিয়ান আলীর (আ.) খেলাফতের সমর্থনে এবং আবুবকর ও ওমরের তিরস্কারে কিছু পংতি আবৃতি করেন।[৩৯]


মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান: মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান এক চিঠিতে মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকরের উদ্দেশে (সাকীফার ঘটনার বহু বছর পর) লিখেছিলেন: ‘...তোমার পিতা ও ওমর ছিলেন আলীর অধিকার হরণকারী এবং তাঁর বিরোধিতাকারী প্রথম ব্যক্তি। তারা দু’জন পরস্পরের হাতে হাত মিলিয়ে আলীকে তাদের হাতে বাইয়াতের আহবান জানান। আর আলী যখন বাইয়াতের বিরোধিতা ও অস্বীকার করলো তখন তারা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিল এবং তার সম্পর্কে ভয়ংকর ভাবনা ভাবলো...।’[৪০]
মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান: মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান এক চিঠিতে [[মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকর|মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকরের]] উদ্দেশে (সাকীফার ঘটনার বহু বছর পর) লিখেছিলেন: ‘...তোমার পিতা ও ওমর ছিলেন আলীর অধিকার হরণকারী এবং তাঁর বিরোধিতাকারী প্রথম ব্যক্তি। তারা দু’জন পরস্পরের হাতে হাত মিলিয়ে আলীকে তাদের হাতে বাইয়াতের আহবান জানান। আর আলী যখন বাইয়াতের বিরোধিতা ও অস্বীকার করলো তখন তারা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিল এবং তার সম্পর্কে ভয়ংকর ভাবনা ভাবলো...।’[৪০]


এছাড়া, মসজিদে আবুবকরের জন্য বাইয়াত গ্রহণের সময় বনি উমাইয়া উসমানের চতুর্পাশে জড়ো হয়েছিল এবং কুরাইশের উপগোত্র বনি যোহরার লোকেরা আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ অথবা সা’দকে নির্বাচনের বিষয়ে একমত ছিল; কিন্তু ওমরের প্রচেষ্টায় তারা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে সম্মত হয়।[৪১]
এছাড়া, মসজিদে আবুবকরের জন্য বাইয়াত গ্রহণের সময় [[বনি উমাইয়া]] [[উসমান|উসমানের]] চতুর্পাশে জড়ো হয়েছিল এবং [[কুরাইশ|কুরাইশের]] উপগোত্র [[বনি যোহরার]] লোকেরা [[আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ]] অথবা [[সা’দ|সা’দকে]] নির্বাচনের বিষয়ে একমত ছিল; কিন্তু [[ওমর|ওমরের]] প্রচেষ্টায় তারা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে সম্মত হয়।[৪১]


== আলীর (আ.) প্রতিক্রিয়া ==
== আলীর (আ.) প্রতিক্রিয়া ==
confirmed, templateeditor
১,৯৬২টি

সম্পাদনা