বারাআতের (সম্পর্কচ্ছেদের) আয়াত
বারাআতের আয়াত (মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের আয়াত); হচ্ছে সূরা তওবার প্রথম দিকের কয়েকটি আয়াত। এ আয়াতগুলোতে মুসলিম ও মুশরিকদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা এ আয়াত নাযিলের মাধ্যমে মহানবি (স.) ও মুসলমানদের প্রতি আদেশ জারি করেন যাতে তারা মুশরিকদের সাথে সব ধরনের সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়টি সুস্পষ্ট করে। মুশরিকদের সাথে যে সব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বিদ্যমান ছিল সেগুলো বাতিল ঘোষণা এবং যদি তারা ইসলাম গ্রহণ না করে তবে তাদের যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়। এ আয়াতগুলো আমিরুল মু’মিনিন আলী (আ.) কর্তৃক ঈদুল আযহার দিনে মুশরিকদের মাঝে ঘোষণা দেয়া হয়।
মুফাসসিরগণ এ সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন: মুশরিকদের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তিগুলো বাতিলের ঘোষণা বিনা কারণে ছিল না। বরং এ ঘোষণার পূর্বে মুশরিকরা কয়েকবার মুসলমানদের সাথে চুক্তিভঙ্গ করেছিল। এ কারণে যে সব মুশরিকরা মুসলমানদের সাথে চুক্তিভঙ্গ করে নি, এ আয়াতের ঘোষণা অনুযায়ী তাদের সাথে মেয়াদ পূর্তি পর্যন্ত উক্ত চুক্তিতে বহাল থাকার আদেশ দেয়া হয়। এছাড়া আরও বর্ণিত হয়েছে যে, মুশরিকদের সাথে প্রথম থেকেই উক্ত চুক্তিগুলো স্বল্পমেয়াদি ছিল।
বিশিষ্ট মনীষী ও মুফাসসির মুহাম্মাদ জাওয়াদ মুগনিয়ে এ আয়াতসমূহের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন: আয়াতে বারাআতে আরব ভূ-খণ্ডের তৎকালীন মুশরিকদের প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণের বাধ্যবাধকতা কিংবা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণার সাথে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাধীন হওয়ার বিষয় সম্পর্কিত পবিত্র কুরআনের অন্যান্য আয়াতের সাথে কোন বৈপরিত্য সৃষ্টি করে না। কেননা তৎকালীর আরবের মুশরিকরা বারংবার মুসলমান সাথে চুক্তিভঙ্গ করেছিল এবং তারা নবীন মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে একের পর এক চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। সুতরাং উক্ত আয়াতের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি কেবল উক্ত চুক্তিভঙ্গকারী ও চক্রান্তকারী মুশরিকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল।
বারাআতের আয়াত
সূরা তওবার প্রথম কয়েকটি আয়াত হচ্ছে বারাআতের বা মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের আয়াত নামে পরিচিত।[১] নিম্নে আমরা উক্ত আয়াতগুলোর মূল আরবি এবং সেগুলোর বাংলা অনুবাদ তুলে ধরছি-
بَرَاءةٌ مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى الَّذِينَ عَاهَدتُّم مِّنَ الْمُشْرِكِينَ فَسِيحُواْ فِي الأَرْضِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍوَاعْلَمُواْ أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللّهِ وَأَنَّ اللّهَ مُخْزِي الْكَافِرِينَ وَأَذَانٌ مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ إِلَى النَّاسِ يَوْمَ الْحَجِّ الأَكْبَرِ أَنَّ اللّهَ بَرِيءٌ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ وَرَسُولُهُ فَإِن تُبْتُمْ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُواْ أَنَّكُمْ غَيْرُ مُعْجِزِي اللّهِ وَبَشِّرِ الَّذِينَ كَفَرُواْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ إِلاَّ الَّذِينَ عَاهَدتُّم مِّنَ الْمُشْرِكِينَ ثُمَّ لَمْ يَنقُصُوكُمْ شَيْئًا وَلَمْ يُظَاهِرُواْ عَلَيْكُمْ أَحَدًا فَأَتِمُّواْ إِلَيْهِمْ عَهْدَهُمْ إِلَى مُدَّتِهِمْ إِنَّ اللّهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِينَ.
অর্থ:(হে মুসলমানগণ!) যে মুশরিকদের সঙ্গে তোমরা (সন্ধির) চুক্তি করেছিলে, এখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে তাদের প্রতি সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা করা হল। সুতরাং তোমরা চার মাসকাল (নিরাপদে) পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর; আর জেনে রাখ, নিশ্চয় তোমরা আল্লাহকে অক্ষম করতে পারবে না এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসীদের লাঞ্ছিত করবেন। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে মহান হজ—এর দিন জনসাধারণের প্রতি ঘোষণা হল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুশরিকদের থেকে সম্পর্কহীন (চুক্তির দায়মুক্ত)। সুতরাং তোমরা যদি তওবা কর, তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; আর তোমরা যদি বিমুখ হও, তবে জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহকে অক্ষম করতে পারবে না। এবং যারা অবিশ্বাস করেছে, তাদের বেদনাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও। কিন্তু মুশরিকদের মধ্যে তারা ব্যতীত যারা তোমাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল, অতঃপর তারা কখনও তোমাদের সঙ্গে (প্রতিশ্রুতি পালনে) কোন ত্রুটি করে নি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্য করে নি, তাদের সঙ্গে কৃত চুক্তি নির্ধারিত সময় অবধি পূর্ণ করবে; নিশ্চয় আল্লাহ তাকওয়াধারীদের ভালবাসেন। (সূরা তওবা, আয়াত নং ১-৪)
বারাআতের আয়াতের শানে নুযুল ও আয়াতের প্রচার
বারাআতের আয়াত নবম হিজরীতে এবং মুসলমানরা যখন তাবুক যুদ্ধ শেষে মদীনায় ফিরে এসেছিল, সে সময় নাযিল হয়।[২] আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলের (সা.) প্রতি আদেশ দেয়া হয় যে, ঐ বছরের শেষে তথা জিলহজ্ব মাসে হজ্বের মৌসুমে যখন মক্কার মুশরিকরা সমবেত হবে তখন যেন এ আয়াতের ঘোষণা সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করা হয়।[৩]
এ আয়াতসমূহের শানে নুযুল সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে, অষ্টম হিজরীতে[৪] মুসলিম বাহিনী কর্তৃক মক্কা বিজয়ের পরও কিছু কিছু মুশরিক গোত্র ইসলামের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও বিরোধীতা অব্যাহত রেখেছিল।[৫] যে সব মুশরিকরা মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল, তারাও বারাংবার চুক্তিভঙ্গ করছিল।[৬] অপরদিকে এ সময় ইসলাম ও মুসলমানদের অগ্রযাত্রা ও বিজয় একের পর এক অব্যাহত ছিল।[৭] এমতাবস্থায় শিরক ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের আদেশ সম্বলিত উক্ত আয়াতে বারাআত নাযিল হয়।[৮]
এ আয়াতগুলো মুশরিকদের মাঝে প্রচার সম্পর্কে ইতিহাসের বর্ণনা এবং শিয়া ও সুন্নী সূত্রে বর্ণিত হাদীসসমূহে উল্লেখ করা হয়েছে: যখন সূরা তওবার প্রথম কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়, তখন মহানবি (স.) হযরত আবু বকর ইবনে আবু কুহাফাকে সেগুলো মুশরিকদের মাঝে প্রচারের উদ্দেশ্যে মক্কার অভিমুখে প্রেরণ করেন। কিন্তু হযরত আবু বকর মদীনা ত্যাগের পর হযরত জিবরাঈল নাযিল হয়ে রাসূলকে (সা.) উদ্দেশ্য করে বলেন: এ আয়াতগুলো আপনি নিজে অথবা আপনার নিকটাত্মীয়দের মধ্যে কেউ মুশরিকদের মাঝে প্রচার করবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে এ প্রত্যাদেশ আসার পর মহানবী (সা.) আবু বকরের স্থলে হযরত আলীকে (আ.) উক্ত আয়াতগুলোর প্রচারের দায়িত্ব অর্পণ করেন।[৯]
আহমাদ বিন আবি ইয়াকুব ‘তারীখে ইয়াকুবী’ কিতাবে উল্লেখ করেন: হযরত আলী ইবনে আবি তালিব ১০ই জিলহজ্ব তথা ঈদুল আযহার দিন দুপুরের পর মক্কায় পৌঁছান এবং সেখানে তিনি বারাআতের আয়াত এবং রাসূলের (সা.) আদেশাবলি সম্পর্কে মুশরিকদের অবহিত করেন। অতঃপর তিনি বলেন: আজকের পর থেকে কেউ উলঙ্গ অবস্থায় কাবা ঘর তাওয়াফ করতে পারবে না। আগামী বছর থেকে কোন মুশিরক পবিত্র কাবা ঘর জিয়ারত করতে আসতে পারবে না। এরপর তিনি সেখানে আরও ঘোষণা দেন: মুশরিকদের মধ্য থেকে যারা রাসূলের (সা.) সাথে চুক্তিবদ্ধ আছে, তাদের চুক্তির মেয়াদ আগামী চার মাস পর্যন্ত বহাল থাকবে। আর যাদের সাথে কোন চুক্তি নেই, তাদেরকে ৫০ দিনের সুযোগ দেয়া হল।[১০]
বিষয়বস্তু
মুহাম্মাদ জাওয়াদ মুগনিয়ে তাফসীরে কাশশাফে বর্ণনা করেছেন: আয়াতে বারাআত (সম্পর্কচ্ছেদের আয়াত) যা সূরা তওবার শুরুতে এসেছে; এ আয়াতগুলো মুশরিকদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্কের বিষয়ে চুড়ান্ত ফায়সালা নির্ধারণ করেছে।[১১] এ আয়াতের তাফসীরে মুফাসসিরগণ উল্লেখ করেছেন: সূরা তওবার প্রথম কয়েকটি আয়াতে আল্লাহ তায়ালা রাসূলের (সা.) প্রতি আদেশ দিয়েছেন যাতে তিনি মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের বিষয়টি সুস্পষ্ট করেন। পাশাপাশি তাদের সাথে যে সব সমঝোতা চুক্তি রয়েছে সেগুলো বাতিল এবং যদি তারা ইসলাম গ্রহণ না করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এ সতর্কবার্তা মক্কার সমস্ত মুশরিকদের প্রতি ছিল; এমনকি যাদের সাথে মুসলমানদের দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা চুক্তি ছিল তারাও এ সতর্কবার্তার আওতাধীন হবে। যাদের সাথে চুক্তি ছিল তাদের প্রতি ঘোষণা দেয়া হয় যে, তাদেরকে ৪ মাসের সুযোগ দেয়া হচ্ছে; এর মধ্যে তাদেরকে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে যে, তারা কি ইসলাম গ্রহণ করবে নাকি মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ করবে।[১২]
চুক্তি বাতিলের কারণ
পবিত্র ইসলাম ধর্মে প্রতিশ্রুতি রক্ষার উপর এত অধিক গুরুত্বারোপ সত্ত্বেও আয়াতে বারাআতে মুশরিকদের সাথে একতরফাভাবে চুক্তি বাতিলের আদেশের কারণ সম্পর্কে সবার মনে প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক।[১৩] আল্লামা তাবাতাবায়ি এ আয়াতের তাফসীরে এর যথাযথ উত্তর দান করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন: মুশরিকদের কর্তৃক একের পর এক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে তাদের প্রতি সমুচিত জবার দানের প্রয়োজনীয়তার কারণেই উক্ত আয়াতে তাদের সাথে কৃত চুক্তি বাতিলের আদেশ দেয়া হয়।[১৪] তাফসীরে মাজমাউল বায়ানের প্রণেতা আল্লামা তাবারসি উল্লেখ করেছেন: রাসূল (সা.) কর্তৃক মুশরিকদের সাথে চুক্তি বাতিল ঘোষণার তিনটি কারণ ছিল: মুশরিকদের সাথে শান্তিচুক্তি ছিল অস্থায়ী ও স্বল্পমেয়াদি, আল্লাহর পক্ষ থেকে চুক্তি বাতিলের আদেশ জারি এবং মুশরিকদের একের পর এক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ এবং বিশ্বাস ঘাতকতা।[১৫]
আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজী এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন: মুসলমানদের পক্ষ থেকে মুশরিকদের সাথে চুক্তি বাতিলের বিষয়টি অহেতুকভাবে উত্থাপিত হয় নি। কেননা পূর্বেকার ঘটনাবলির মাধ্যমে বিষয়টি খুবই স্পষ্ট ছিল যে, মুশরিকরা যখনই সুযোগ পেয়েছে, তখনই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে মুসলমানদের চরম ক্ষতি সাধন করেছে। এছাড়া চিরাচয়িত নিয়ম অনুযায়ী যদি স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে কোন জাতির উপর চুক্তি আরোপ করা হয়, সে জাতি যখন প্রয়োজনীয় শক্তি ও সক্ষমতা ফিরে পাবে তখন তারা সে চুক্তি থেকে সরে আসার ক্ষমতা রাখে।[১৬]
মুফাসসিরগণ বর্ণনা করেছেন: মক্কায় ছিল মুশরিকদের শক্তিশালী ঘাটি সেখানে ঈদুল আযহার দিনে মুশরিকদের বিশাল সমাবেশে প্রকাশ্যে তাদের সাথে মুসলমানদের সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা এবং তাদেরকে চার মাসের সুযোগ দানের বিষয়গুলো নিয়মনীতি ও মানবতার প্রতি ইসলাম ধর্মের শ্রদ্ধাবোধেরই পরিচয় বহন করে।[১৭]আল্লামা তাবাতাবায়ির মতে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তার এই নির্দেশের মাধ্যমে মুসলমানদেরকে এতটুকু পরিমান খিয়ানতকেও নিষেধ করেছেন।[১৮]
মক্কার মুশরিকদের প্রতি ইসলাম গ্রহণের বাধ্যতার নেপথ্য কারণ
মক্কার মুশরিকদের প্রতি ইসলাম গ্রহণের বাধ্যতার বিষয়টি অনেকের নিকট একটি প্রশ্নের কারণ হতে পারে। কেননা পবিত্র কুরআনের কিছু আয়াতে যেমন: সূরা বাকারার ২৫৬নং আয়াতে ধর্ম গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতার বিষয়টি নাকচ করা হয়েছে। ইসলাম দলিল-প্রমাণ ও হিকমতের মাধ্যমে মানুষকে ধর্মের প্রতি আহ্বান জানায়। কিন্তু এতদসত্ত্বেও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এবং মুসলিম সমাজের সার্বিক কল্যাণ রক্ষার্থে মুশরিকদের উপস্থিতি সেখানে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকারক ও বিশৃঙ্খলার কারণ হতে পারে। যেমনভাবে বিশিষ্ট মনীষী মুহাম্মাদ জাওয়াদ মুগনিয়ে উল্লেখ করেছেন: ইসলাম গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধ্যতা ঘোষণাটি কেবল মক্কার ও আরব ভূ-খণ্ডের মুশরিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কেননা তারা মুসলমানদের সাথে শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে লিপ্ত ছিল এবং অনিষ্ট সাধন অব্যাহত রেখেছিল। এ কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য মাত্র দু’টি পথ খোলা রাখা হয়; সেটি হচ্ছে হয় তারা ইসলাম গ্রহণ করবে অথবা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হবে।[১৯]
প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারীদের প্রতি শ্রদ্ধা
আল্লামা তাবাতাবায়ি সূরা তওবার ৪নং আয়াতের উদ্ধৃতি তুলে ধরে উল্লেখ করেছেন: ইসলাম প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী কাফির এবং প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী কাফিরদের মধ্যে পার্থক্য নিরুপণ করেছে। এ আয়াতের ভাষ্য অনুযায়ী যে সব মুশরিকরা মুসলমানদের সাথে প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে এবং প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে চুক্তিভঙ্গ করে নি, তারা সম্পর্কচ্ছেদের বিধানের আওতামুক্ত এবং তাদের সাথে কৃত চুক্তি বাতিল হবে না। বরং চুক্তির মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে সুযোগ দেয়া হবে।[২০] অবশ্য মক্কার অধিকাংশ মুশরিকরাই চুক্তিভঙ্গ করেছিল এবং তাদের প্রতি আস্থা বহাল ছিল না।[২১]
তথ্যসূত্র
- ↑ সাদেকি তেহরানি, আল-তাফসীরুল মওযুয়ি লিল কুরআনিল কারিম, ১৪০৬ হি., কোম, খণ্ড ৭, পৃ. ২০২; হাসকানি, শাওয়াহেদুত তানযিল, ১৪১১ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩০৫; মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৬৯, পৃ. ১৫২।
- ↑ তাবারসি, মাজমাউল বায়ান, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ৫, পৃ. ৩; আইয়াশি, তাফসীরুল আইয়াশি, ১৩৮০ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৭৩।
- ↑ রাজাবি, ইমাম আলী দার আহাদে পায়াম্বার, পৃ. ২০৯; ইবনে কাসীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ১৩৯৮ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ৩৬-৩৭।
- ↑ তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, বৈরুত, খণ্ড ৩, পৃ. ৪২।
- ↑ রাজাবি, ইমাম আলী দার আহাদে পায়াম্বার, পৃ. ২০৯।
- ↑ শাবার, তাফসীরুল কুরআনিল কারিম, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ১৯৯; মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নেমুনে, ১৩৭১ ফার্সি সন, খণ্ড ৭, পৃ. ২৭২।
- ↑ মুগনিয়ে, আল-কাশেফ, ১৪২৪ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৯।
- ↑ রাজাবি, ইমাম আলী দার আহাদে পায়াম্বার, পৃ. ২০৯।
- ↑ ইবনে হাম্বাল, মুসনাদ, ১৪২১ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৪২৭; ইবনে হাম্বাল, ফাদ্বায়েলুস সাহাবা, ১৪০৩ হি., খণ্ড ২, পৃ. ৭০৩, হা. ১২০৩; ইবনে আসাকের, তারিখে মদীনা দামেস্ক, ১৪১৫ হি., খণ্ড ৪২, পৃ. ৩৪৮, হা. ৮৯২৯; ইবনে সা’দ, আত তাবাকাতুল কুবরা, বৈরুত, খণ্ড ১, পৃ. ১৬৮; মুফিদ, আল-আমালি, কোম, পৃ. ৫৬।
- ↑ ইয়াকুবি, তারিখুল ইয়াকুবি, দারুল বৈরুত, খণ্ড ২, পৃ. ৭৬।
- ↑ মুগনিয়ে, আল-কাশেফ, ১৪২৪ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৮।
- ↑ তাবারসি, মাজমাউল বায়ান, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ৫, পৃ. ৫; মুগনিয়ে, আল-কাশেফ, ১৪২৪ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৮; মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নেমুনে, ১৩৭১ ফার্সি সন, খণ্ড ৭, পৃ. ২৮২।
- ↑ মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নেমুনে, ১৩৭১ ফার্সি সন, খণ্ড ৭, পৃ. ২৮৩।
- ↑ তাবাতাবায়ি, আল-মিযান, ১৩৯০ হি., খণ্ড ৯, পৃ. ১৪৭।
- ↑ তাবারসি, মাজমাউল বায়ান, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ৫, পৃ. ৫।
- ↑ মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নেমুনে, ১৩৭১ ফার্সি সন, খণ্ড ৭, পৃ. ২৮৩।
- ↑ রেযায়ী ইস্ফাহানি, তাফসীরে কুরআন মেহর, ১৩৮২ ফার্সি সন, খণ্ড ৮, পৃ. ১৪৫; মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নেমুনে, ১৩৭১ ফার্সি সন, খণ্ড ৭, পৃ. ২৮৩।
- ↑ তাবাতাবায়ি, আল-মিযান, ১৩৯০ হি., খণ্ড ৯, পৃ. ১৪৭।
- ↑ মুগনিয়ে, আল-কাশেফ, ১৪২৪ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৯-১০।
- ↑ তাবাতাবায়ি, আল-মিযান, ১৩৯০ হি., খণ্ড ৯, পৃ. ১৫০।
- ↑ তাবাতাবায়ি, আল-মিযান, ১৩৯০ হি., খণ্ড ৯, পৃ. ১৪৭।
গ্রন্থপঞ্জি
- ইবনে হাম্বাল, আহমাদ, ফাদ্বায়েলুস সাহাবা, তাহকিক: ওয়াসিউল্লাহ মুহাম্মাদ আব্বাস, বৈরুত, মুআসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪০৩ হি./১৯৮৩ খ্রি.।
- ইবনে হাম্বাল, আহমাদ, মুসনাদ, তাহকিক: শুয়াইব আল-আরনাঊত, আদেল মোর্শেদ ও অন্যান্যরা, স্থান অজ্ঞাত, মুআসসাসাতুর রিসালাহ, ১৪২১ হি./ ২০০১ খ্রি.।
- ইবনে সা’দ, মুহাম্মাদ বিন সা’দ, আত তাবাকাতুল কুবরা, বৈরুত, দারু বৈরুত, তারিখ অজ্ঞাত।
- ইবনে আসাকির, আলী বিন হাসান, তারিখে মাদীনা দামেস্ক, তাহকিক: আলী শিরি, বৈরুত, দারু ফিকর, ১৪১৫ হি.।
- ইবনে কাসির, আবুল ফিদা ইসমাঈল বিন কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, অমাদে সাযি (প্রস্তুত করেছেন): খলিল শাহাদেহ, বৈরুত, দারু ফিকর, ১৩৯৮ হি.।
- হাসকানি, উবায়দুল্লাহ বিন আব্দুল্লাহ, শাওয়াহেদুত তানযীল লি কাওয়ায়িদিত তাফদ্বীল, তেহরান, মারকাযে তেব’ ওয়া ইন্তেশারে ভেযারাতে ফারহাঙ্গ ওয়া ইরশাদে ইসলামি, ১৪১১ হি.।
- রাজাবি, মুহাম্মাদ হুসাইন, ইমাম আলী (আ.) দার আহাদ পায়াম্বার, দার দানেশনামেয়ে ইমাম আলী আলাইহিস সালাম, যির নাযারে আলী আকবার রেশাদ, খণ্ড ৮, তেহরান, ইন্তেশারাতে পেঝুহেশগাহে ফারহাঙ্গ ওয়া আনদিশে, ১৩৮০ ফার্সি সন।
- রেযায়ী ইস্পাহানি, মুহাম্মাদ আলী, তাফসীরে কুরআন মেহর, কোম, পেঝুহেশহায়ে তাফসীর ওয়া উলুমে কুরআন, ১৩৮৭ ফার্সি সন।
- শোবার, আব্দুল্লাহ, তাফসীরুল কুরআনিল কারিম, কোম, দারুল হিজরাহ, ১৪১০ হি.।
- সাদেকি তেহরানি, মুহাম্মাদ, আল-ফুরকান ফি তাফসীরিল কুরআন, কোম, ফারহাঙ্গে ইসলামি, ১৪০৬ হি.।
- তাবাতাবায়ি, মুহাম্মাদ হুসাইন, আল-মিযান ফি তাফসীরিল কুরআন, বৈরুত, মুআসসাসাতুল আ’লামি লিল মাতবুআত, ১৩৯০ হি.।
- তাবারসি, ফাযল বিন হাসান, মাজমাউল বায়ান, তেহরান, নাসের খসরু, ১৩৭২ ফার্সি সন।
- তাবারি, মুহাম্মাদ বিন জুরাইর, তারিখুল উমাম ওয়া মুলুক, তাহকিক: মুহম্মাদ আবুল ফাযল ইব্রাহিম, বৈরুত, পাবলিকেশন্স অজ্ঞাত, তারিখ অজ্ঞাত।
- আইয়াশি, মুহাম্মাদ বিন মাসউদ, আত তাফসীর, মুহাক্কেক হাশেম রাসূলি, তেহরান, মাক্তাবাতুল ইসলামিয়্যাহ, ১৩৮০ হি.।
- মাজলিসি, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, ১৪০৩ হি.।
- মুগনিয়ে, মুহাম্মাদ জাওয়াদ, আল-তাফসীরুল কাশেফ, কোম, দারুল কিতাব আল-ইসলামি।
- মুফিদ, মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ, আল-আমালি, তাহকিক: হুসাইন ওস্তাদ ওয়ালি ওয়া আলী আকবার গাফ্ফারি, কোম, মানশুরাতে জামাআতুল মুদাররেসীন ফিল হাওযিল ইলমিয়্যাহ, তারিখ অজ্ঞাত।
- মাকারেম শিরাজি, নাসের, তাফসীরে নেমুনে, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়্যাহ, ১৩৭১ ফার্সি সন।
- ইয়াকুবি, আহমাদ বিন আবু ইয়াকুব, তারিখুল ইয়াকুবি, বৈরুত, দারুল বৈরুত, তারিখ অজ্ঞাত।