গাযওয়াহ
- নিবন্ধটি যে সকল যুদ্ধে মহানবি (স.) স্বশরীরে অংশগ্রহণ করেছেন সে প্রসঙ্গে; মহানবির (সা.) সকল যুদ্ধ সম্পর্কে জানতে ‘মহানবির (স.) যুদ্ধসমূহ’ নিবন্ধটি পড়ুন।
গাযওয়াহ (আরবি : غزوة) ঐ সকল যুদ্ধকে বলা হয়, যেগুলোতে মহানবি (স.) স্বশরীরে অংশগ্রহণ করেছেন। বেশীরভাগ ইতিহাস গ্রন্থে মহানবির (স.) গাযওয়া’র সংখ্যা ২৬ বা ২৭ বলে উল্লিখিত হয়েছে। গাযওয়াহগুলোর মধ্যে শুধু ৯টিতে সামরিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। কিছু কিছু গবেষকদের মতে, ওহুদ ব্যতীত সকল গাযওয়া’তে মহানবি (স.) বিজয়ী হয়েছেন।
গাযওয়াহ ও সারিয়্যা’র মধ্যে পার্থক্য
ইসলামি ইতিহাস সংশ্লিষ্ট গ্রন্থাবলিতে মহানবির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি) যুদ্ধগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে; গাযওয়াহ ও সারিয়্যাহ।[১] যে সকল যুদ্ধে মহানবি (স.) স্বশরীরে অংশগ্রহণ করেছেন এবং স্বয়ং নিজেই সেনাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন সেগুলোকে গাযওয়াহ; আর যেগুলোতে তিনি নিজে অংশগ্রহণ না করে একজন সেনাপতি নির্বাচন করে একটি দলকে কোন এলাকার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছেন সেগুলোকে সারিয়্যাহ বলা হয়।[২] অবশ্য কিছু কিছু গবেষকের মতে, সারিয়্যাহ ও গাযওয়া’র যে সংজ্ঞা উল্লেখিত হয়েছে তা নিখুঁত নয়। বরং গাযওয়াহ বলতে ঐ সকল যুদ্ধকে বোঝায় যেগুলোতে মহানবি (সা.) সরাসরি বহুসংখ্যক যোদ্ধা নিয়ে সুসংগঠিতভাবে অংশগ্রহণ করেছেন; কিন্তু যে সকল যুদ্ধে মহানবি (সা.) কম সংখ্যক যোদ্ধা নিয়ে সৈন্যদের সংগঠিতকরণ হওয়া ছাড়াই গোপনে অংশগ্রহণ করেছেন সেগুলোকে সারিয়্যাহ বলা হয়।[৩]
সারিয়্যাহ ও গাযওয়াহ’র উদাহরণের ক্ষেত্রে উল্লেখিত সংজ্ঞা দু’টিতে এখতেলাফ নেই। কেননা দ্বিতীয় সংজ্ঞার ভিত্তিতে যেসকল অভিযান কমসংখ্যক সৈন্য নিয়ে শত্রুর অবস্থান সনাক্ত করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হত সেগুলোতে মহানবি (স.) অংশগ্রহণ করতেন না।[৪]
যে সকল গাযওয়াহ যুদ্ধে গড়িয়েছে
আস-সিরাতুন নাবাভিয়্যাহ গ্রন্থে ইবনে হিশাম[৫] এবং এ’লামুল ওয়ারা গ্রন্থে তাবারসী’র ভাষ্য হল; মহানবির (স.) গাযওয়াহগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র বদর, ওহুদ, খন্দক, বনি কুরাইযাহ, বনি মুস্তালিক, খায়বার, মক্কা বিজয়, হুনাইন ও তায়েফের গাযওয়া’তে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।[৬] মুরুজুয যাহাব গ্রন্থের প্রণেতা মাসউদি বনি মুস্তালিকের স্থলে গাযওয়া-এ তাবুক লিখেছেন।[৭] আর, যে সকল যুদ্ধে সামরিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে সেগুলোর মধ্যে ৫টি যুদ্ধ ছিল গুরুত্বপূর্ণ এবং সেগুলোতে প্রচণ্ড সংঘর্ষের কথা বর্ণিত হয়েছে।
বেশীরভাগ গাযওয়া’তে সফলতা
ওহুদের গাযওয়াহ ব্যতীত সকল গাযওয়া’তে মুসলিম বাহিনী বিজয় লাভ করে।[৮] কিছু কিছু গবেষকের মতে, মুসলিম বাহিনীর দক্ষ ও কার্যকর সংগঠন এ সকল যুদ্ধ জয়ের প্রধান কারণগুলোর অন্যতম।[৯] বলা হয় যে, গাজওয়াহগুলোতে সংগঠিত করণের পদ্ধতি ছিল অভূতপূর্ব। আর এ সংগঠিত করণ প্রক্রিয়া ৪টি পর্যায় সম্পন্ন হত;
- রওয়ানা হওয়ার আগে;
- রওয়ানা হওয়ার পর;
- যুদ্ধ শুরুর হওয়ার আগে;
- যুদ্ধ চলাকালীন সময়;[১০]
বর্তমানে প্রথম দু’টি পর্যায়কে যুদ্ধের স্ট্রাটেজি (কর্মকৌশল) এবং শেষ দু’টিকে যুদ্ধের ট্যাক্টিক (রণকৌশল) বলা হয়ে থাকে।[১১]
গাযওয়া’র সংখ্যা
বেশীরভাগ ইতিহাস গ্রন্থে মহানবির (স.) গাযওয়াহ সংখ্যাকে ২৬ বা ২৭[১২] বলে উল্লেখ করা হলেও অপর কিছু সংখ্যাও অন্যান্য গ্রন্থে উল্লিখিত হয়েছে; যেমন- ১৮, ২১ ও ২৮।[১৩] তবে বনি কাইনুকা, ওয়াদিউল কুরা এবং উমরাতুল কাযা’র মত যুদ্ধগুলোকে গাযওয়া’র মধ্যে অন্তর্ভূক্তকরণ প্রসঙ্গে এখতেলাফ রয়েছে।[১৪] বলাবাহুল্য, মহানবি (স.) মোতাহ (موته)-এর যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও অনেকে এ যুদ্ধকে গাযওয়াহ হিসেবে নামকরণ করেছেন।[১৫]
তথ্যসূত্র
- ↑ সুবহানী, ফারাজহায়ি আয তারিখে পয়গম্বরে ইসলাম, ১৩৮৬ (সৌরবর্ষ), পৃষ্ঠা নং-২১৬।
- ↑ সুবহানী, ফারাজহায়ি আয তারিখে পয়গম্বরে ইসলাম, ১৩৮৬ (সৌরবর্ষ), পৃষ্ঠা নং-২১৬।
- ↑ কায়েদান, সাজমানদেহীয়ে জাঙ্গ দার গাযাওয়াতে আছরে পয়গম্বর, পৃষ্ঠা নং-৭৯-৮০।
- ↑ কায়েদান, সাজমানদেহীয়ে জাঙ্গ দার গাযাওয়াতে আছরে পয়গম্বর, পৃষ্ঠা নং-৮০।
- ↑ ইবনে হিশাম, সিরাতুন্ নাবাভীয়্যাহ, দারুল মারিফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা নং-৬০৮।
- ↑ তাবারসী, ইলামুল ওয়ারা বি আ’মালিল হুদা, ১৪১৭ হিঃ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা নং-১৬৩।
- ↑ মাসুদী, মুরুজুয যাহাব, ১৪০৯ হিঃ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা নং-২৮০।
- ↑ কায়েদান, সাজমানদেহীয়ে জাঙ্গ দার গাযাওয়াতে আছরে পয়গম্বর, পৃষ্ঠা নং-৭৫।
- ↑ কায়েদান, সাজমানদেহীয়ে জাঙ্গ দার গাযাওয়াতে আছরে পয়গম্বর, পৃষ্ঠা নং-৭৫।
- ↑ কায়েদান, সাজমানদেহীয়ে জাঙ্গ দার গাযাওয়াতে আছরে পয়গম্বর, পৃষ্ঠা নং-৮০।
- ↑ কায়েদান, সাজমানদেহীয়ে জাঙ্গ দার গাযাওয়াতে আছরে পয়গম্বর, পৃষ্ঠা নং-৮১।
- ↑ মাসুদী, মুরুজুয যাহাব, ১৪০৯ হিঃ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা নং-২৮০, ইবনে সা’দ, তাবাকাতুল কুবরা, ১৪১৪ হিঃ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা নং-৩, ইবনে হিশাম, সিরাতুন্ নাবাভীয়্যাহ, দারুল মারিফা, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা নং-৬০৮, তাবারী, তারিখুত তাবারী, ১৩৮৭ হিঃ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা নং-১৫২।
- ↑ মাসুদী, আত্-তাম্বীহ ওয়াল আশরাফ, পৃষ্ঠা নং-২৪১।
- ↑ ইবনে হিশাম, সিরাতুন্ নাবাভীয়্যাহ, দারুল মারিফা, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা নং-১৭৩, মাসুদী, মুরুজুয যাহাব, ১৪০৯ হিঃ, খণ্ড-২, পৃষ্ঠা নং-২৮১।
- ↑ জাফারিয়ান, সিরাতে রাসুলে খোদা (সা.), ১৩৮৩ (সৌরবর্ষ), পৃষ্ঠা নং-৪৬৪।
গ্রন্থপঞ্জি
- আয়াতী, মুহাম্মাদ ইবরাহিম, তারিখে পয়গম্বরে ইসলাম, তেহরান, দানেশগাহে তেহরান, ১৩৬৯ হিঃ।
- ইবনে খালদুন, আব্দুর রহমান বিন মুহাম্মাদ, তারিখে ইবনে খালদুন, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪০৭ হিঃ।
- ইবনে খাইয়্যাত, খলিফা, তারিখে খলিফা, বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১৫ হিঃ।
- ইবনে সা’দ, মুহাম্মাদ ইবনে সা’দ, তাবাকাতুল কুবরা, তায়েফ, মাকতাবাতুস্ সিদ্দিক, ১৪১৪ হিঃ।
- ইবনে কাছির, ইসমাইল বিন উমার, আল-বিদায়া ওয়া আল-নিহায়া, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪০৭ হিঃ।
- ইবনে হিশাম, আব্দুল মালেক, সিরাতুন্ নাবাভীয়্যাহ, বৈরুত, দারুল মারিফা, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
- বালাজুরী, আহমাদ বিন ইয়াহইয়া, ফুতুহুল বুলদান, বৈরুত, দারু ওয়া মাকতাবাতুল হিলাল, ১৯৮৮ (ঈসায়ী)।
- বালাজুরী, আহমাদ বিন ইয়াহইয়া, আনসাবুল আশরাফ, কায়রো, দারুল মায়ারেফ, ১৯৫৯ (ঈসায়ী)।
- জাফারিয়ান, রাসুল, সিরাতে রাসুলে খোদা (সা.), ইন্তেশারাতে দালিলেমা, ১৩৮৩ (সৌরবর্ষ)।
- হোসাইনী, আলী আকবার, তারিখে তাহলিলিয়ে সাদরে ইসলাম, তেহরান, ইন্তেশারাতে পায়ামে নূর, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
- সুবহানী, জাফর, ফারাজহায়ি আয তারিখে পয়গম্বরে ইসলাম, তেহরান, মাশয়ার, ১৩৮৬ (সৌরবর্ষ)।
- সুবহানী, জাফর, ফুরুগে আবাদিয়াত, কোম, বুস্তানে কিতাব, ১৩৮৫ (সৌরবর্ষ)।
- তাবারসী, ফাযল বিন হাসান, ইলামুল ওয়ারা বি আ’মালিল হুদা, মুয়াস্সাসাতু আলিল বাইত (আ.), কোম, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৭ হিঃ।
- তাবারী, মুহাম্মাদ জারির, তারিখুত তাবারী, বৈরুত, দারুত্ তুরাস, ১৩৮৭ হিঃ।
- মাসুদী, আলী বিন হোসাইন, আত্-তাম্বীহ ওয়াল আশরাফ, কায়রো, দারুস্ সাভী, কোম, মুয়াস্সাসাতু নাশরিল মানাবিয়ীস সিকাফাতিল ইসলামিয়্যািহ, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
- মাসুদী, আলী বিন হোসাইন, মুরুজুয যাহাব, কোম, দারুল হিজরাতী, ১৪০৯ হিঃ।
- ইয়াকুবী, আহমাদ বিন ইয়াকুবী, তারিখুল ইয়াকুবী, দারু সাদের, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।