গণবিধ্বংসী অস্ত্র
গণবিধ্বংসী অস্ত্র (ফার্সি: سلاح کشتار جمعی)হচ্ছে এমন অস্ত্র যা ব্যবহারের মাধ্যমে বেসামরিক জনগণকে হত্যা করাসহ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করা হয়। শিয়া ফিকাহবিদগণের মতে, এই অস্ত্রের প্রাথমিক ব্যবহার অর্থাৎ শত্রুপক্ষ এমন অস্ত্রের ব্যবহার করার পূর্বে ব্যবহার করা হারাম বা নিষিদ্ধ; কিন্তু জরুরী পরিস্থিতিতে, অর্থাৎ শত্রুর উপর বিজয় অর্জন করার তাগিদে এগুলোর ব্যবহার প্রসঙ্গে মতপার্থক্য বিদ্যমান। কেউ কেউ বলেছেন সেগুলো ব্যবহার করা বৈধ এবং কেউ কেউ এই কাজ হারাম বলে ফতওয়া দিয়েছেন।
পারমাণবিক ও রাসায়নিক বোমার ন্যায় বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন ভয়ঙ্কর গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরির প্রতি লক্ষ্য রেখেই মূলত কোন কোন ফিকাহবিদ এ সংক্রান্ত ফতওয়া প্রদান করেছেন; যেমন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং শিয়া মারজায়ে তাক্বলীদ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ী পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও এর ব্যবহার সংক্রান্ত ফতওয়ায় এই অস্ত্রকে মানবতার জন্য হুমকী হিসেবে গণ্য করেন এবং এর উৎপাদন ও সংরক্ষণ হারাম তথা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
সংজ্ঞা ও গুরুত্ব
গণবিধ্বংসী অস্ত্র বলতে ঐ সমস্ত অস্ত্রসমূহকে বুঝায় যেগুলো সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ব্যবহারের সময় বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানি এবং পরিবেশগত অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হয়।[১] যেসব অস্ত্র ব্যবহারে শিশু, নারী, বৃদ্ধ এবং মুসলমান বন্দী নির্বিশেষে বেসামরিক লোকজনের প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে, তা ইসলামের প্রাথমিক যুগে তথা রাসূল (স.)-এর জামানায়ও বিদ্যমান ছিল এবং শিয়াদের রেওয়ায়েতের বিষয়বস্তু হিসেবেও ছিল।[২] হাওযা ইলমিয়্যাহ কোম-এর ফিকহ ও উসুলের দারসে খারিজের প্রখ্যাত শিক্ষক আবুল কাসেম আলীদুস্ত উল্লেখ করেন যে, শিয়া ফকীহগণ কমপক্ষে হাজার বছর পূর্বে উক্ত বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।[৩] সৌর চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দীতে পারমাণবিক ও রাসায়নিক অস্ত্রের ন্যায় গণবিধ্বংসী অস্ত্রের নতুন উদাহরণ সৃষ্টি হয়[৪] এবং যার পরিণতি ছিল নজিরবিহীন; আর এই কারণেই এই বিষয়টিকে আধুনিক কালের অন্যতম ফিকহী সমস্যা (মাসায়েলে মুস্তাহাদ্দেসে/ ইসলামী ফিকাহ’তে যে বিষয় সম্পর্কে শরীয়তি হুকুম নেই) হিসেবেও বিবেচনা করা হয়েছে।[৫]
গণবিধ্বংসী অস্ত্রের শরীয়তগত হুকুম
শিয়া ফকীহগণ গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিষয়টিকে বিভিন্ন দিক থেকে পর্যালোচনা করেছেন: প্রাথমিক ব্যবহার (শত্রুর পক্ষ থেকে এই ধরনের হামলার আগে ভাগে পদক্ষেপ নেওয়া), তৈরি ও সংরক্ষণ এবং জরুরী অবস্থায় সেগুলোর ব্যবহার:
গবেষণা অনুসারে, শিয়া মাযহাবের সকল ফিকাহবিদ গণবিধ্বংসী অস্ত্রের প্রাথমিক ব্যবহারকে হারাম জ্ঞান করেছেন।[৬]আবুল কাসেম আলীদুস্ত উল্লেখ করেন যে, শিয়া ফকীহগণ কমপক্ষে হাজার বছর পূর্বে ঐ সমস্ত অস্ত্র ও সারঞ্জামের ব্যবহারকে হারাম হিসেবে ফতওয়া দিয়েছেন, যার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি, জীববৈচিত্র ধ্বংস এবং পরিবেশগত ক্ষতি সাধিত হয়।[৭]
ফিকাহবিদদের একটি দল গণবিধ্বংসী অস্ত্রের নিত্য নতুন রূপের আবির্ভাবের প্রতি লক্ষ্য রেখে এগুলোর তৈরি ও সংরক্ষণের বিষয়েও হারাম ফতওয়া প্রদান করেছেন; উদাহরণস্বরূপ আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী পারমাণবিক অস্ত্র ও গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি ও ব্যবহারের বিষয়ে হারাম ফতওয়া প্রদান করে এগুলোকে মানবতার বিরুদ্ধে মহা হুমকী হিসেবে জ্ঞান করেন।[৯] মাকারেম শিরাজী, নূরী হামেদানি, জাফর সুবহানি এবং জাওয়াদ আমুলি’র ন্যায় মারজায়ে তাক্বলীদগণ এই ফিকহী মতে প্রতি সম্মতি জ্ঞাপণপূর্বক এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।[১০]মাকারেম শিরাজী এমন অস্ত্র তৈরি ও সংরক্ষণকে মানুষের ফিতরাতের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবে গণ্য করেছেন।