খসড়া:দুই বোনকে বিবাহ
দুই বোনকে বিবাহ (আরবি: الزواج من الأختين); যদি দুই বোন একই সময়ে একজন পুরুষের স্ত্রী হয়ে থাকে, তবে ইসলামী শরীয়ত অনুসারে তা সম্পূর্ণরূপে হারাম।[১] এরূপ বিবাহ হারাম বিবেচনা করার জন্য ফকিহগণের দলিল হচ্ছে সূরা নিসার ২৩ নং আয়াত এবং ঐ সমস্ত রেওয়ায়েত[২] যা একসাথে দু’ বোনকে বিয়ে (স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী যে কোন প্রকারেই হোক না কেন) করা হারাম হিসেবে উল্লেখ করে।[৩] তদনুসারে, যদি কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে অথবা অস্থায়ী (মুত‘আ) বিবাহের চুক্তিবদ্ধ নির্ধারিত সময়সীমা সমাপ্ত হওয়ার পূর্বেই অবশিষ্ট সময়টি তাকে হেবা করে দেয়, তবে স্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর তার বোনকে বিয়ে করতে কোন বাধা থাকবে না।[৪]
ফকীহগণের মতে, এ বিধানে ‘বোন’-এর সম্পর্ক বলতে বৈপিত্রেয় বোন, বৈমাত্রেয় বোন এবং এমনকি দুধ বোনও অন্তর্ভুক্ত।[৫] কিছু কিছু শিয়া ফকীহ মনে করেন, যদি দু’ বোনকে একইসাথে বিবাহের আকদ পড়ার মাধ্যমে বিবাহ করা হয়, তবে উভয় বিবাহই বাতিল হিসেনে গণ্য হবে।[৬] অনুরূপভাবে যদি বিবাহের আকদ একটির পর আরেকটি পড়ার মাধ্যমে বিবাহ করা হয়, তবে দ্বিতীয় ‘আক্দটি বাতিল বলে গণ্য হবে।[৭] শিয়া ফকীহ জাওয়াদী আমুলী এর বর্ণনা মতে, যদি কেউ এ কাজের হারাম হওয়া সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া সত্ত্বেও তা সম্পন্ন করে, তবে বিবাহ বাতিল হওয়া ছাড়াও সে গুনাহেও লিপ্ত হয়েছে। [৮]
শিয়া রেওয়ায়েতসমূহ অনুযায়ী, এ কাজটি ইমামগণের নিষেধের অন্তর্ভুক্ত; ওয়াসাইলুশ শিয়া নামক গ্রন্থে স্ত্রীর বোনের সাথে বিবাহ সম্পর্কিত বিধানের ক্ষেত্রে ২৩টি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে।[৯] সাহেবে জাওয়াহির উক্ত রেওয়ায়েতসমূহের মধ্য থেকে দু’টি রেওয়ায়েত উল্লেখপূর্বক মত প্রকাশ করেন যে, কখনো কখনো ইমামগণ (আ.) তাকিয়া অবলম্বনের কারণে হারাম হওয়ার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেননি।[১০]
শিয়া মরজায়ে তাকলীদ নাসির মাকারেম শিরাজী মনে করেন যে, দু’ বোনকে একত্রে বিবাহ করার বিষয়টি হারাম হওয়ার কারণ সম্ভবত উভয় বোনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতামূলক অনুভূতির সৃষ্টি রোধ করা এবং এর ফলে উভয় বোনের মধ্যে আবেগিক সম্পর্কের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত থাকে।[১১] সূরা নিসার ২৩ নং আয়াতে স্ত্রীর বোনের সাথে বিয়ে হারাম হওয়ার বিধান জারীর পর, এ আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে সংঘটিত বিয়েগুলোকে এর ব্যতিক্রম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। [১২] তাফসীরকারকগণ যেমন শেখ তুসী "তাফসীরে তিবিয়ান"-এ এবং তাবরাসী "মাজমাউল বয়ান"-এ বর্ণনা করেছেন, পূর্ববর্তী ঘটনাগুলো বলতে হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর রাহেল ও লিয়া নামক দু’ বোনকে বিয়ে করার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।[১৩]
বর্ণিত আছে যে, আয়াত নাযিল হওয়ার পূর্বে একই সাথে দু’ বোনকে বিয়ে করার প্রচলন ছিল এবং আয়াত নাযিল হওয়ার পর, যারা ইতিপূর্বে এরূপ বিয়ে করেছিল, তাদের তৎক্ষণাৎ যেকোন একজনকে ত্যাগ করতে হয়েছিল; যদিও তাদের কোনও শাস্তি নেই এবং তাদের সন্তানরা হালালজাদা তথা বৈধ সন্তান।[১৪]
তথ্যসূত্র
- ↑ শহীদ সানী, মাসালিকুল আফহাম, ১৪১৩ হি., খণ্ড ৭, পৃ. ২৮৯; নাজাফী, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪০৪ হি., খণ্ড ২৯, পৃ. ৩৫৬; তাবাতাবাঈ, রিয়াজুল মাসায়িল, ১৪১৮ হি., খণ্ড ১১, পৃ. ১৮০।
- ↑ আমিলী, ওয়াসাইলুশ শিয়া, ১৪১২ হি., খণ্ড ২০, পৃ. ৪৭৬-৪৮৬।
- ↑ শহীদ সানী, মাসালিকুল আফহাম, ১৪১৩ হি., খণ্ড ৭, পৃ. ২৮৯।
- ↑ তাবাতাবাঈ, রিয়াজুল মাসায়িল, ১৪১৮ হি., খণ্ড ১১, পৃ. ১৮১; হাকিম, মিনহাজুস সালিহীন, ১৪১৫ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২৭।
- ↑ হিল্লী, কাওয়াইদুল আহকাম, ১৪১৩ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৩৪; রুহানী, ফিকহুস সাদিক আলাইহিস সালাম, ১৪১২ হি., খণ্ড ২১, পৃ. ২৪৪।
- ↑ শহীদ সানী, আর-রাওজাতুল বাহিয়া, ১৪১০ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ১৮৭।
- ↑ সিস্তানী, মিনহাজুস সালিহীন, ১৪১৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৬০; রুহানী, ফিকহুস সাদিক আলাইহিস সালাম, ১৪১২ হি., খণ্ড ২১, পৃ. ২৪৯।
- ↑ জাওয়াদী আমুলী, দারসে খারেজে ফিকহ "মাবহাসে জামে বাইনে আখাতাইন", মাদ্রাসায়ে ফোকাহাতে ওয়েবসাইট।
- ↑ আমিলী, ওয়াসাইলুশ শিয়া, ১৪০৯ হি., খণ্ড ২০, পৃ. ৪৭৬-৪৮৬।
- ↑ নাজাফী, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪০৪ হি., খণ্ড ২৯, পৃ. ৩৫৬।
- ↑ মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নমুনা, ১৩৭১ ফার্সি সন, খণ্ড ৩, পৃ. ৩৩১।
- ↑ সূরা নিসা, আয়াত ২৩।
- ↑ তাবরাসী, মাজমাউল বয়ান, ১৩৭২ ফার্সি সন, খণ্ড ৩, পৃ. ৪৯; তুসী, আত-তিবিয়ান, দারু ইহইয়ায়িত তুরাসিল আরাবী, খণ্ড ৩, পৃ. ১৬০।
- ↑ মাকারেম শিরাজী, তাফসীরে নমুনা, ১৩৭১ ফার্সি সন, খণ্ড ৩, পৃ. ৩৩১।
গ্রন্থপঞ্জি
- রুহানী, সাইয়্যেদ সাদেক, ফিকহুস সাদেক (আ.), কোম, দারুল কিতাব - মাদ্রাসায়ে ইমাম সাদেক (আ.), প্রথম সংস্করণ, ১৪১২ হি.।
- হাকিম, সাইয়্যেদ মুহাম্মদ সাঈদ, মিনহাজুস সালিহীন, বৈরুত, দারুস সাফওয়া, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৫ হি.।
- হিল্লী, হাসান ইবনে ইউসুফ, কাওয়াইদুল আহকাম ফি মা'রিফাতিল হালাল ওয়াল হারাম, কোম, জামেয়ায়ে মুদার্রেসীন, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৩ হি.।
- দারসে খারেজে ফিকহে আয়াতুল্লাহ জাওয়াদী আমুলী, মাবহাসে জামে বাইনে আখাতাইন", মাদ্রাসায়ে ফিকাহাত ওয়েবসাইট, পরিদর্শনের তারিখ: ৯ খোরদাদ ১৪০৩ ফার্সি সন।
- সিস্তানী, সাইয়্যেদ আলী, মিনহাজুস সালিহীন, কোম, নাশরে দফতরে হযরত আয়াতুল্লাহ সিস্তানী, পঞ্চম সংস্করণ, ১৪১৭ হি.।
- শহীদ সানী, জাইনুদ্দীন ইবনে আলী, আর-রাওজাতুল বাহিয়া ফি শারহিল লুম'আতিদ দিমাশকিয়া (মুহাশশা কালান্তুর), দাওয়ারী, কোম, প্রথম সংস্করণ, ১৪১০ হি.।
- শহীদ সানী, জাইনুদ্দীন ইবনে আলী, মাসালিকুল আফহাম ইলা তানকীহে শারায়ে'ইল ইসলাম, মুআসসাসাতুল মা'আরিফিল ইসলামিয়া, কোম, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৩ হি.।
- তাবাতাবাঈ, সৈয়েদ আলী, রিয়াজুল মাসায়েল, কোম, মুআসসাসায়ে আলুল বাইত আলাইহিমুস সালাম, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৮ হি.।
- তাবরাসী, ফাজল ইবনে হাসান, মাজমাউল বয়ান ফি তাফসীরিল কুরআন, ইরান, নাসের খসরু, তৃতীয় সংস্করণ, ১৩৭২ ফার্সি সন।
- তুসী, মুহাম্মদ ইবনে হাসান, আত-তিবিয়ান ফি তাফসীরিল কুরআন, বৈরুত, দারু ইহইয়ায়িত তুরাসিল আরাবী, প্রথম সংস্করণ, তারিখ বিহীন।
- আমিলী, মুহাম্মদ ইবনে হাসান, ওয়াসাইলুশ শিয়া, মুআসসাসায়ে আলুল বাইত আলাইহিমুস সালাম, কোম, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৯ হি.।
- মাকারেম শিরাজী, নাসের, তাফসীরে নমুনা, তেহরান, দারুল কুতুবিল ইসলামিয়া, দশম সংস্করণ, ১৩৭১ ফার্সি সন।
- নাজাফী, মুহাম্মদ হাসান, জাওয়াহিরুল কালাম ফি শারহে শারায়ে'ইল ইসলাম, দারুল ইহইয়ায়ে তুরাসিল আরাবী, বৈরুত, সপ্তম সংস্করণ, ১৪০৪ হি.।