কুরবানি
- (নিবন্ধটি ফিকাহ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের সংজ্ঞা ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিয়ে রচিত এবং ধর্মীয় আমলের মানদণ্ড নয়। আমলের লক্ষ্যে অন্য সূত্রের শরণাপন্ন হোন।)
কুরবানি (আরবি: الهَدي أو الأضحية); বা কুরবানি করা হজের আমলসমূহের একটি যেখানে ঈদুল আযহার দিনে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে দুম্বা এবং উটের মতো প্রাণী জবাই করা হয়। যারা হজে তামাত্তুতে অংশগ্রহণ করেন এবং মিনায় অবস্থান করেন তাদের জন্য এটি ওয়াজিব এবং অন্যদের জন্য এটি সুপারিশকৃত মুস্তাহাব। কুরবানী এমন একটি রীতি বা প্রথা যা অন্যান্য ধর্মেও বিদ্যমান রয়েছে।
শাব্দিক পরিচিতি

কুরবানি এবং কুরবানি করা বলতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ভেড়া, গরু, উট ইত্যাদি জবাই করাকে বোঝায়।[১] কুরবানি প্রাচীনতম মানব ঐতিহ্যগুলির মধ্যে একটি এবং প্রতিটি যুগে এর বিশেষ রীতিনীতি এবং আচার-ব্যবহার বিদ্যমান ছিল। কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা অনুসারে, হজের সময় দুম্বা কুরবানি করা হযরত ইসমাঈলকে কুরবানি করার ঘটনা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা আল্লাহ ইব্রাহিমের কাছ থেকে কবুল করেছিলেন এবং এটিকে একটি মহান কুরবানি বলে ঘোষণা করেছিলেন।[২]
কুরবানি হজের আমলগুলোর মধ্যে এমন একটি ইবাদাত যা ইসলামের পূর্ব থেকেই আরব উপদ্বীপের অধিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত ছিল। ইসলাম হারাম মাসসমূহ এবং আল্লাহর পবিত্র ঘর সম্পর্কিত উল্লেখপূর্বক নির্দিষ্ট শর্তাবলীসহ এটি বর্ণনা করেছে।[৩]
কুরবানির বিধান
ইসলামে দুই ধরণের কুরবানি রয়েছে; ওয়াজিব কুরবানি এবং মুস্তাহাব কুরবানি। কুরবানি বিভিন্নভাবে ওয়াজিব হয়- হজের অংশবিশেষ, হজের সময় কিছু কাজের কাফফারা হিসেবে; সেইসাথে মান্নত, অঙ্গীকার এবং শপথ এর কারণে কুরবানি ওয়াজিব হয়।[৪]
ওয়াজিব কুরবানির পাশাপাশি, সামর্থ্যবান ব্যক্তির উপর ঈদুল আযহার দিনে কুরবানি করার জন্য জোরালোভাবে তাকিদ দেওয়া হয়েছে। শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা উপলক্ষ্যে কুরবানি করা মুস্তাহাব কুরবানিগুলোর একটি।[৫]
কুরবানির শর্তাবলি
হজের জন্য কেবল উট, গরু বা দুম্বা কুরবানি করা যাবে। এই কুরবানির জন্য নিম্নলিখিত শর্ত পূরণ করতে হবে-
- যদি উট কুরবানি করা হয়, তাহলে তার বয়স কমপক্ষে পাঁচ বছর হতে হবে। যদি গরু বা ছাগল হয়, তাহলে এহতিয়াত হচ্ছে, অবশ্যই দুই বছরের কম বয়সী হওয়া যাবে না এবং দুম্বা হলে অবশ্যই সাত মাস বয়সী হতে হবে এবং এর চেয়ে কম যথেষ্ট নয়।
- রোগা হওয়া যাবে না,
- অতিবয়স্ক হওয়া যাবে না,
- ত্রুটিপূর্ণ হওয়া যাবে না। অতএব, যে প্রাণীর এক বা উভয় চোখ অন্ধ, খোঁড়া, কান কাটা, অথবা লেজ কাটা তা যথেষ্ট নয়। একইভাবে যে প্রাণীর মূল শিং ভাঙা, তাও যথেষ্ট নয়। তবে, কানে ক্ষত বা ছিদ্র থাকাতে কোনও সমস্যা নেই।
- বাহ্যিকভাবে, অতি স্বাস্থ্যহীন না হওয়া,
- খাসি না হওয়া, অর্থাৎ তার অণ্ডকোষ অপসারণ করা হয়নি এমন,
- সৃষ্টিগতভাবে খাসি না হওয়া; কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে যদি লেজ, শিং বা কান না থাকে, তাহলে কোন সমস্যা নেই।[৬]
সম্পর্কিত নিবন্ধ
তথ্যসূত্র
- ↑ আনওয়ারী, ফারহাঙ্গে বুজুর্গে সুখান, ১৩৮১ (ফার্সি সন), পৃ: ৫৫১৫।
- ↑ সূরা আস্-সাফ্ফাত: ১০০-১১১।
- ↑ সূরা মায়িদা:৯৭।
- ↑ ইমাম খোমিনী, তাহরিরুল ওয়াসিলাহ, ১৩৮৭ (ফার্সি সন), খ: ১, পৃ: ৪০৯-৪১১।
- ↑ শেইখ বাহায়ী, জামেয়ে আব্বাসী, মুয়াসসেসেয়ে ইন্তেশারাতে ফারাহানী, পৃ: ৩০৩; তুরাইহি, মাজমাউল বাহরাইন, ১৩৭৫ (ফার্সি সন), খ: ৫, পৃ: ২১৫ ও শেইখ কুলাইনী, আল-কাফি, ১৩৬৫ (ফার্সি সন), খ: ৬, পৃ: ২৪-৩৬।
- ↑ মুসাভি শাহরুদী, জামিউল ফাতাভায়ে মানাসেকে হজ, ১৪২৮ হিজরী, পৃ: ১৯৭-১৯৮।
গ্রন্থপঞ্জি
- আনওয়ারী, হাসান, ফারহাঙ্গে বুজুর্গে সুখান, তেহরান, নাশরে সুখান, ১৩৮১ (ফার্সি সন),
- ইমাম খোমিনী, সাইয়্যেদ রুহুল্লাহ, তাহরিরুল ওয়াসিলাহ, কোম, মুয়াসসেসেয়ে নাশরুল ইসলামি, ১৩৮৭ (ফার্সি সন),
- শেইখ বাহায়ী, মুহাম্মাদ বিন হোসাইন, জামেয়ে আব্বাসী, তেহরান, মুয়াসসেসেয়ে ইন্তেশারাতে ফারাহানী...
- কারুবি তাবরিযী, হাসান, আন্-নাযিদু ফি শারহি রাওযাতিশ শাহিদ, কোম, ইন্তেশারাতে দাভারী, ১৩৯৫ (ফার্সি সন),
- শেইখ কুলাইনী, মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব, আল-কাফি, তেহরান, দারুল কুতুবিল ইসলামিয়্যাহ, ১৩৬৫ (ফার্সি সন),
- তুরাইহি, ফখরুদ্দিন বিন মুহাম্মাদ, মাজমাউল বাহরাইন; তাহকিক- আহমাদ হোসাইনী আশকুরী, তেহরান, মুর্তাজাভী, ১৩৭৫ (ফার্সি সন),
- মুহাক্কেক হিল্লি, জাফর বিন হাসান, শারায়েউল ইসলাম, কোম, ইসমাইলিয়ান, ১৪০৮ হিজরী,
- মুসাভি শাহরুদী, মুর্তাজাভী, জামিউল ফাতাভায়ে মানাসেকে হজ, তেহরান, মাশয়ার, ১৪২৮ হিজরী।