কাসেতীন
কাসেতীন (আরবি: قاسِطین) বলতে জালিম গোষ্ঠীকে বোঝায়, [১] যা মুয়াবিয়া ও তার অনুসারীদের নির্দেশ করে। তারা ইমাম আলী (আ.)-এর খিলাফত গ্রহণের পর তাঁর হুকুমত মেনে নিতে অস্বীকার করে সিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত করে।[২]
ঐতিহাসিক সূত্রগুলোর বর্ণনা অনুযায়ী, মুসলমানরা ইমাম আলী (আ.)-এর কাছে বাইয়াত (আনুগত্যের শপথ) করার পর, [৩] মুয়াবিয়া, যে কিনা ইমাম আলী (আ.) কর্তৃক শামের গভর্নর পদ থেকে অপসারণ হয়েছিলেন,[৪] ইমাম (আ.)-এর খিলাফত মানতে অস্বীকৃতি জানান এবং উসমানের রক্তের বদলার অজুহাত দেখিয়ে সিফফিনের যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেন।[৫] ঐতিহাসিক সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, যখন মুয়াবিয়ার বাহিনী পরাজয়ের সম্মুখীন হয়, তখন আমর ইবনে আস-এর ছলচাতুরির দ্বারা কুরআন বর্শার আগায় উঠায় এবং ইমামের বাহিনীকে ধোঁকা দিয়ে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানায়।[৬] ইমাম আলী (আ.) এই ছলচাতুরির ব্যাপারে সতর্ক করেন, কিন্তু তাঁর বাহিনীর অধিকাংশই তা মানতে অস্বীকার করে এবং তাঁকে সালিসির সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য করে।[৭]
মুয়াবিয়া ও আমর ইবনে আস-কে কাসেতীন দলটির মূল নেতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[৮]মুহাম্মাদ মুহাম্মাদী রেই শাহরি-এর বর্ণনা অনুযায়ী, মুয়াবিয়ার অনুসারীরা মূলত এমন একদল লোক ছিলেন, যারা না ইসলামের অগ্রগামী দলের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য হতেন, আর না মহানবী (স.)-এর দ্বারা অনুমোদিত ছিলেন; বরং তাদের মধ্যে কেউ কেউ মহানবী (স.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছিল অথবা তাঁর দ্বারা অভিশপ্ত হয়েছিল।[৯]
বিহারুল আনোয়ার-এ বর্ণিত রেওয়ায়েত অনুসারে, মহানবী (স.) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, ইমাম আলী (আ.) নাকেসীন, কাসেতীন ও মারেকীন-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন।[১০] ইমাম আলী (আ.)ও সিফফীনের যুদ্ধে শামের বাহিনীর মুখোমুখি হয়ে এই গোষ্ঠীকে কাসেতীনের বাস্তব উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য নিজেকে নবীর আদেশ বাস্তবায়নকারী হিসেবে আখ্যায়িত করেন।[১১]
নাহজুল বালাগা-তে শিকশিকিয়্যাহ ও কাসিয়া[১২] এর মতো ১৩টি খুতবায় এবং এছাড়াও ১৭টি চিঠি-তে কাসেতীন সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে।[১৩] কাসেতীন শব্দটি ফার্সি কবিতায়ও ব্যবহৃত হয়েছে [১৪] এবং দুআ-এ নুদবাতেও এই গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইমাম আলী (আ.)-এর যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। [১৫]
সম্পর্কিত নিবন্ধ
তথ্যসূত্র
- ↑ ইবনে মঞ্জুর, লিসানুল আরাব, ১৪১৪ হি., খণ্ড ৭, পৃ. ৩৭৮।
- ↑ আখুন্দি ও অন্যরা, এস্তেলাহাতে নেযামি দার ফিকহে ইসলামি, পৃ. ৯৯।
- ↑ ইবনে আবিল হাদিদ, শারহে নাহজুল বালাগা, ১৪০৪ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৩০।
- ↑ তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৪, পৃ. ৪৪০।
- ↑ আল্লামা আমিনী, আল-গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ ওয়াল আদাব, ১৪১৬ হি., খণ্ড ১০, পৃ. ৪৪০।
- ↑ তাবারী, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ৪৮।
- ↑ আল-মিনকারি, ওয়াকআতু সিফফিন, ১৪০৪ হি., পৃ. ৪৮৯।
- ↑ মুহাম্মাদী রেই শাহরি, দানেশ নামেয়ে আমীরুল মু’মিনীন (আ.) বার পায়ে কুরআন, হাদীস ওয়া তারিখ, ১৩৮৬ ফার্সি সন, খণ্ড ৫, পৃ. ৩০২-৩৮৩।
- ↑ মুহাম্মাদী রেই শাহরি, দানেশ নামেয়ে আমীরুল মু’মিনীন (আ.) বার পায়ে কুরআন, হাদীস ওয়া তারিখ, ১৩৮৬ ফার্সি সন, খণ্ড ৫, পৃ. ২৯৩।
- ↑ মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৩০, পৃ. ৫৮৮।
- ↑ ইবনে আ’সাম কুফি, আল-ফুতুহ, ১৪১১ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ৭৭; নাসর ইবনে মুযাহিম, ওয়াকআতু সিফফিন, ১৩৮২ হি., পৃ. ৩৩৮।
- ↑ নাহজুল বালাগা, তাসহিহ: সুবহি সালেহ, খুতবা ১৯২, পৃ. ৩০০।
- ↑ খাজআলী, “নাকেসীন, কাসেতীন ওয়া মারেকীন দার নাহজুল বালাগা”, পৃ. ৩৯৮।
গ্রন্থপঞ্জি
- আখুন্দি, মুস্তাফা এবং অন্যরা, এস্তেলাহাতে নেযামি দার ফিকহে ইসলামি, তেহরান, সেপাহে পাসদারান ইনকিলাবে ইসলামি, নেমায়ান্দেগীয়ে ওয়ালিয়ে ফাকীহ, এদারে অমুজেশহায়ে আকীদাতি সিয়াসি, প্রথম সংস্করণ, ১৩৭৮ ফার্সি সন।
- ইবনে আবিল হাদিদ, ইজ উদ্দীন আবু হামিদ, শারহে নাহজুল বালাগা, মুহাম্মাদ আবুল ফাযল ইব্রাহিম, কোম, কিতাব খানেয়ে আয়াতুল্লাহ মারআশি নাজাফি, প্রথম সংস্করণ, ১৪০৪ হি.।
- ইবনে আ’সাম কুফি, আহমাদ আলী, আল-ফুতুহ, বৈরুত, দারুল আদওয়া, প্রথম সংস্করণ, ১৪১১ হি.।
- ইবনে মঞ্জুর, মুহাম্মাদ ইবনে মোকরেম, লিসানুল আরাব, মুহাক্কিক: জামাল উদ্দীন মীর দামাদি, বৈরুত, দারুল ফিকর লিত তাবাআ ওয়ান নাশর ওয়াত তাওযী’-দারু সাদের, তৃতীয় সংস্করণ, ১৪১৪ হি.।
- খাযআলী, আবুল কাসিম, “নাকেসীন, কাসেতীন ওয়া মারেকীন দার নাহজুল বালাগা”, দার মাজমুয়ে মাকালাত ওয়া সোখানরানিহা দার কংগ্রেয়ে বাইনুল মিলালিয়ে হেজারে নাহজুল বালাগা, প্রথম খণ্ড, তারিখ অজ্ঞাত।
- «دیوان عطار», গানযুর ওয়েবসাইট।
- সাইয়্যেদ রাযী, মুহাম্মাদ ইবনে হুসাইন, নাহজুল বালাগা, তাসহিহ সুবহি সালেহ, কোম, হিজরত, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৪ হি.।
- শহীদ আউয়াল, মুহাম্মাদ ইবনে মাক্কি, আল-মাযার, মুহাক্কিক: মুহাম্মাদ বাকের মোয়াহ্হেদ আবতাহি ইস্ফাহানি, কোম, মাদ্রাসায়ে ইমাম মাহদী (আ.ফা.), প্রথম সংস্করণ, ১৪১০ হি.।
- «صامت بروجردی», গানযুর ওয়েবসাইট।
- মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, মুহাক্কিক, জাম-ই আয মুহাক্কেকান, বৈরুত, দার ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪০৩ হি.।
- তাবারী, মুহাম্মাদ ইবনে জারীর, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, বৈরুত, দারুল তুরাস, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৮৭ হি.।
- আল্লামা আমিনী, আব্দুল হুসাইন, আল-গাদীর ফিল কিতাব ওয়াস সুন্নাহ ওয়াল আদাব, কোম, মারকাযুল গাদীর লিদ দিরাসাতিল ইসলামিয়া, প্রথম সংস্করণ, ১৪১৬ হি.।
- আল্লামা মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, জাদ আল-মাআদ- মিফতাহুল জিনান, মুহাক্কিক: আলাউদ্দীন আ’লামি, বৈরুত, মুআসসিসাতুল আ’লামি লিল মাতবুআত, প্রথম সংস্করণ, ১৪২৩ হি.।
- মুহাম্মাদী রেই শাহরি, মুহাম্মাদ, দানেশ নামেয়ে আমীরুল মু’মিনীন (আ.) দার পায়ে-এ কুরআন, হাদীস ওয়া তারিখ, কোম, খণ্ড ৪, দারুল হাদীস, প্রথম সংস্করণ, ১৩৮৬ ফার্সি সন।
- নাসর ইবনে মুযাহিম, ওয়াকআতু সিফফিন, তাসহিহ: আব্দুস সালাম মুহাম্মাদ হারুন, কোম, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহ আল-মারআশি আল-নাজাফি, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪০৪ হি.।