কালীমুল্লাহ (উপাধি)
কালীমুল্লাহ (আরবি: کَلیمُالله) (এর অর্থ আল্লাহ যার সাথে কথা বলেছেন) হচ্ছে হযরত মূসা (আ.)-এর উপাধি।[১] আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর সাথে কোন মাধ্যম ছাড়া কথা বলার কারণে তাঁকে কালীমুল্লাহ বলা হয়েছে।[২] হযরত মুসার (আ.) বিশেষ এই উপাধি তাঁর জন্য ফযিলত হিসেবে গণ্য হয়েছে।[৩]
সূরা নিসার ১৬৪ নং আয়াত অনুসারে, আল্লাহ তায়ালা মূসার (আ.) সাথে কথা বলেছেন: « کَلَّمَ الله مُوسی تَکْلیماً আল্লাহ তায়ালা মুসার (আ.) সাথে কথা বলেছেন »।[৪] সূরা আ’রাফের ১৪৩ ও ১৪৪ দুই আয়াতেও মূসার (আ.) সাথে আল্লাহর কথোপকথনের বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে।[৫] অনুরূপভাবে সূরা তোহার ১১ নং আয়াতেও نُودِی (ডাক দেওয়া হয়েছিল) অংশের মাধ্যমে এই বৈশিষ্ট্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। কিছু কিছু মুসলমান[৬] এবং ইহুদি পণ্ডিত[৭] এই ধরনের কথোপকথনকে হযরত মুসার (আ.) জন্য অনন্য বৈশিষ্ট্য হিসেবে গণ্য করেছেন।[৮] হযরত মুসার কালীমুল্লাহ বৈশিষ্ট্যের জন্য ইহুদিদেরকে (কালিমি) বলে অভিহিত করা হয়েছে।[৯]
কিছু কিছু মুসলিম পণ্ডিত বিশ্বাস করেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মি’রাজে মহানবি (স.)-এর সাথেও কথোপকথন করেছেন এবং এই কথোপথনের ব্যাপারে রেওয়ায়েতি দলিল রয়েছে।[১০] এই দলটির দৃষ্টিতে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে সরাসরি কথোপকথন করেছেন শুধুমাত্র মহানবি (স.) এবং মূসা (আ.)।[১১] আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কথা বলাকে শরীর থাকা ব্যতিত কথা বলা জ্ঞান করা হয়; কেননা, শরীরের মাধ্যমে কথা বলা শরীর থাকার ইঙ্গিত বহন করে, অথচ আল্লাহ তায়ালার শরীর নেই।[১২]
দ্বাদশ শতাব্দীর বিশিষ্ট মুফাস্সির বুরুসাভি মূসার সাথে বিশেষ এই কথোপকথনকে মূসার (আ.) শৈশবকালের বলে মনে করেন, যখন তাঁর জিহবা পুড়ে গিয়েছিল। আল্লাহ তায়ালা ঐ পোড়ার বিনিময়ে তার সাথে কথা বলেছেন এবং তাকে কালীমুল্লাহ বলে অভিহিত করেছেন।[১৩] এই মুফাস্সির পরবর্তীতে একটি কবিতার মাধ্যমে এই ঘটনার প্রতি ইশারা করেছেন: هر محنتی مقدمه راحتی بود شد همزبان حق چو زبان کلیم سوخت প্রতিটি কষ্টই ছিল স্বস্তির সূচনা, সহভাষি হয়েছেন সত্যের (আল্লাহর) কারণ পুড়েছে কালিমের (মূসার) জবান।[১৪]
কিছু কিছু মুফাস্সির কলিমুল্লাহ উপাধির এভাবে অন্য ব্যাখ্যাও নিয়ে এসেছেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মূসার (আ.) নিকট প্রথম তাজাল্লিতে নিজেকে «إِنِّی أَنَا رَبُّک؛ আমিই হচ্ছি তোমার প্রতিপালক। » পরিচয় করান এবং মূসার নবুয়্যত আল্লাহর কথোপথনের মাধ্যমে আরম্ভ হয়, এই কারণেই তাঁকে কালীমুল্লাহ «کلیماللَّه» অভিহিত করেছেন।[১৫]
তথ্যসূত্র
- ↑ ফাযলুল্লাহ, তাফসীর মিন ওয়াহয়িল কুরআন, ১৪১৯ হি., খণ্ড ২০, পৃ. ২০২।
- ↑ তাইয়্যেব, আতইয়াবুল বায়ান, ১৩৭৮ ফার্সি সন, খণ্ড ৩, পৃ. ৩।
- ↑ যুহাইলি, আত-তাফসীরুল মুনির, ১৪১৮ হি., খণ্ড ৬, পৃ. ৩৫।
- ↑ সূরা নিসা, আয়াত ১৬৪।
- ↑ তাইয়্যেব, আতইয়াবুল বায়ান, ১৩৭৮ ফার্সি সন, খণ্ড ৫, পৃ. ৪৫৩।
- ↑ শেইখ তুসি, আত-তিবইয়ান, বৈরুত, খণ্ড ৩, পৃ. ৩৯৪; ফাখরে রাযি, আত-তাফসীরুল কাবির, ১৪২০ হি., খণ্ড ১১, পৃ. ২৬৭।
- ↑ https://www.iranjewish.com/FAQ/FAQ29_Laghab.htm, আঞ্জুমানে কেলিমিয়ানে তেহরান।
- ↑ কারাশি, তাফসীরে আহসানুল হাদীস, ১৩৭৭ ফার্সি সন, খণ্ড ১, পৃ. ৪৭০; রাশিদ রেযা, আল-মানার, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ৩, পৃ. ৪।
- ↑ https://www.iranjewish.com/FAQ/FAQ29_Laghab.htm, আঞ্জুমানে কেলিমিয়ানে তেহরান।
- ↑ বানু আমিন, মাখযানুল ইরফান, ১৩৬১ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৩৭৯।
- ↑ বুরুজের্দি, তাফসীরে জামে’, ১৩৬৬ ফার্সি সন, খণ্ড ২, পৃ. ৪৬২।
- ↑ মাকারেম শিরাজী, ইয়েক সাদ ও হাশতাদ পোরসেশ ওয়া পাসোখ, ১৩৮৬ ফার্সি সন, পৃ. ৭৫।
- ↑ বুরুসাভি, তাফসীরে রুহুল বায়ান, বৈরুত, খণ্ড ৫, পৃ. ৩৭২।
- ↑ বুরুসাভি, তাফসীরে রুহুল বায়ান, বৈরুত, খণ্ড ৫, পৃ. ৩৭২।
- ↑ ক্বারাআতি, তাফসীরে নূর, ১৩৮৩ ফার্সি সন, খণ্ড ৭, পৃ. ৩২৮।
গ্রন্থপঞ্জি
- বানু আমিন, মাখযানুল ইরফান দার তাফসীরে কুরআন, তেহরান, নাহযাতে যানানে মুসলমান, ১৩৬১ ফার্সি সন।
- বুরুজের্দি, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ ইব্রাহিম, তাফসীরে জামে’, তেহরান, ইন্তেশারাতে সাদর, ৬ষ্ঠ সংস্করণ, ১৩৬৬ ফার্সি সন।
- বুরুসাভি, ইসমাঈল, তাফসীরে রুহুল বায়ান, দারুল ফিকর, বৈরুত, তারিখ অজ্ঞাত।
- রাশিদ রেযা, তাফসীরুল মানার, মিশর, আল-হাইয়াতুল মিসরিয়্যাহ আল- আ’ম্মাহ লিল কিতাব, ১৯৯০ খ্রি.।
- যুহাইলি, ওয়াহবাহ ইবনে মুস্তাফা, আত-তাফসীরুল মুনির ফিল আকীদাতি ওয়াশ শারীয়াতি ওয়াল মানহায, দারুল ফিকর আল-মাআসির, বৈরুত, দামেস্ক, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১৮ হি.।
- শেইখ তুসি, মুহাম্মাদ ইবনে হাসান, আত-তিবইয়ান ফি তাফসীরিল কুরআন, মুকাদ্দামে: শেইখ আগা বুযুর্গে তেহরানি, তাহকিক: আহমাদ কাছির আমেলি, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, তারিখ অজ্ঞাত।
- তাইয়্যেব, সাইয়্যেদ আব্দুল হুসাইন, আতইয়াবুল বায়ান ফি তাফসীরিল কুরআন, তেহরান, ইন্তেশারাতে ইসলাম, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৭৮ ফার্সি সন।
- ফাখরে রাযি, মুহাম্মাদ ইবনে উমর, আত-তাফসীরুল কাবির (মাফাতিহুল গাইব), বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, তৃতীয় সংস্করণ, ১৪২০ হি.।
- ফাযলুল্লাহ, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, তাফসীর মিন ওয়াহয়িল কুরআন, বৈরুত, দারুল মালাক লিত তিবাআতু ওয়ান নাশর, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪১৯ হি.।
- ক্বারাআতি, মুহসিন, তাফসীরে নূর, মারকাযে ফারহাঙ্গিয়ে দারসহায়ি আয কুরআন, তেহরান, একাদশ সংস্করণ, ১৩৮৩ হি.।
- https://www.iranjewish.com/FAQ/FAQ29_Laghab.htm, আঞ্জুমানে কেলিমিয়ানে তেহরান ওয়েবসাইট, দেখার তারিখ: ১ ইসফান্দ ১৪০২ ফার্সি সন।
- মাকারেম শিরাজী, নাসের, ইয়েক সাদ ওয়া হাশতাদ পোরসেশ ওয়া পাসোখ, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়্যাহ, ১৩৮৬ ফার্সি সন।