উইকি শিয়া
উইকি শিয়া; একটি ভার্চুয়াল বিশ্বকোষ যার উদ্দেশ্য হল সেসব জ্ঞানগত বিষয়বস্তুর ব্যাখ্যা করা যা শিয়া ও অন্যান্য মাযহাবের অনুসারীদের মধ্যে যারা আহলে বাইত (আ.)-কে অনুসরণ করে তাদের পরিচিতি তুলে ধরতে ভূমিকা রাখে। এই বিষয়বস্তুগুলির মধ্যে রয়েছে বিশ্বাস, ব্যক্তিত্ব, আকাইদশাস্ত্র, ফিকাহশাস্ত্র এবং ফিকাহশাস্ত্রের নীতি, গ্রন্থসমূহ, পবিত্রস্থান সমূহ, ঐতিহাসিক ঘটনাবলি, আচার-অনুষ্ঠান, আহলে বাইত (আ.)-এ বিশ্বাসী সম্প্রদায়, শিয়া মাযহাবের ইতিহাস এবং অন্যান্য সেসব বিষয় যা কোন না কোনভাবে আহলে বাইত (আঃ) এবং তাঁদের অনুসারীদের সাথে সম্পর্কিত। এই লক্ষ্যে যেসব প্রয়োজনীয় শব্দাবলি এবং বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান সমূহের ব্যবহার করা হয়ে থাকে, এই বিশ্বকোষে সেগুলোরও ব্যাখ্যা করা হয়।
উইকি শিয়াতে, ব্যক্তিগত বিশ্লেষণ এবং মতামতের পাশাপাশি প্রসিদ্ধ নয় এমন নতুন তত্ত্ব উপস্থাপন করা করা থেকে অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এড়িয়ে যাওয়া হয়। মতানৈক্যপূর্ণ জ্ঞানগত এবং ঐতিহাসিক বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা পাঠকদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং এক্ষেত্রে উইকি শিয়া নিরপেক্ষ অবস্থান অবলম্বন করে। মাযহবগত মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে উইকি শিয়া’র লেখকদের মৌলনীতি হচ্ছে, প্রথম সারির সূত্রসমূহ যা মুসলমানদের বৃহৎ দুটি গোষ্ঠী তথা শিয়া ও সুন্নি কর্তৃক স্বীকৃত, শুধুমাত্র তা গৃহীত হবে।
উইকি শিয়া আহলে বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার অধিভুক্ত। এই বিশ্বকোষটি বর্তমানে ২২ ভাষা নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে এবং ফারসি ভাষায় এর ৭,৭৮৫টি নিবন্ধ রয়েছে।
পদযাত্রার অনুপ্রেরণা ও উদ্দেশ্য
অন্যান্য বিশ্বকোষ সমূহে ইসলাম ও শিয়া ধর্ম সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য রয়েছে; কিন্তু, যেহেতু এই বিশ্বকোষের লেখকরা ইসলামী শিক্ষার সাথে পরিচিত নন বা সম্ভবত ইসলাম বা শিয়া ধর্মে বিশ্বাস করেন না, এজন্য এতে ইসলামী বিষয়বস্তু এবং শিয়া সম্প্রদায় সম্পর্কিত নিবন্ধগুলিতে ভুল তথ্য বিদ্যমান রয়েছে।
অনুরূপভাবে, শিয়া আকিদা-বিশ্বাস সম্পর্কে অনলাইন সাইটগুলিতে বিদ্যমান মিথ্যাচার ও ভিত্তিহীন অপপ্রচার রুখতে এবং বিশ্বব্যাপী শিয়া এবং অন্যান্য সত্যান্বেষীদের নিকট প্রকৃত শিয়া ও ইসলামী বিশ্বাসগুলি পৌছে দিতে, আহলে বাইত (আ.) এর প্রকৃত পরিচয় তুলে ধরতে এবং এর সম্পর্কিত শত্রুদের মিথ্যাচারের মুকাবিলায় আহল বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার সাংস্কৃতিক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ‘উইকি শিয়া বিশ্বকোষ’ এর গোড়াপত্তন করেছেন।
ইতিকথা
২২শে মে ২০১৩ তারিখে, উইকি শিয়া লেখকদের প্রথম সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ সেশনের পর, ১৮ই জুন, উইকি শিয়া সাইটে প্রথম নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। জুলাই ২০১৩ সালে, সাইটটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। ২২শে জুন, ২০১৪ তারিখে, তেহরানে ‘সিবতুন্-নবী (সা.)’ কনফারেন্সে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির উপস্থিতিতে ‘উইকি শিয়া বিশ্বকোষ’ আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয়েছিল।
গুণাবলী
উইকি শিয়া এর কতিপয় গুণাবলী নিম্নরূপ-
বিষয়বস্তুর প্রশস্থতা
উইকি শিয়া এর বিষয়বস্তু নিম্নরূপ-
- বিশ্বাস, ব্যক্তিত্ব, আকাইদশাস্ত্র, ফিকাহশাস্ত্র এবং ফিকাহশাস্ত্রের নীতি, গ্রন্থসমূহ, পবিত্রস্থান সমূহ, ঐতিহাসিক ঘটনাবলি, আচার-অনুষ্ঠান, আহলে বাইত (আ.)-এ বিশ্বাসী সম্প্রদায়, শিয়া মাযহাবের ইতিহাস এবং অন্যান্য সেসব বিষয় যা কোন না কোনভাবে আহলে বাইত (আঃ) এবং তাঁদের অনুসারীদের সাথে সম্পর্কিত ।
- ইসলাম ধর্মের অতিপরিচিত বিষয়গুলি যা সমস্ত মুসলমান কর্তৃক গৃহীত ও স্বীকৃত বা ইসলামের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত এমন সব বিষয় উইকি শিয়াতে তুলে ধরা হয়।
- ইসলাম ধর্মের অন্যান্য মাযহাবের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলি যদি কোনোভাবে আহলে বাইত (আ.) এর সাথে সম্পর্কিত হয় সেগুলিও উইকি শিয়াতে তুলে ধরা হয়।
বিষয়বস্তু নিরীক্ষণ
- উইকি শিয়া-এ নিবন্ধিত বিষয়বস্তুগুলো সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করা হয়। এজন্য এটি শিয়া মাযহাবে বিশ্বস্ত সূত্র হিসেবে স্থান লাভ করেছে।
- উইকি শিয়া বিশ্বকোষ বর্তমানে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে; তবে অদূরর ভবিষ্যতে, এটি উন্মক্ত ভাবে কাজ করার পরিকল্পনা করছে যাতে সমস্ত শিয়া মুসলমান সম্মিলিত ভাবে এটিকে পূর্ণতায় পৌছাতে ভূমিকা রাখতে পারে এবং আহলে বাইত (আ.) মাযহাবের শিক্ষাকে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
পরিকল্পনা পরিষদ
উইকি শিয়া এর ভাষা ও জ্ঞান-তত্ত্ব পরিচালক এবং উইকি শিয়া বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি পরিকল্পনা পরিষদ রয়েছে। এই পরিষদ উইকি শিয়া এর বিভিন্ন অংশে নীতি প্রণয়ন ও পরিকল্পনার দায়িত্বে রয়েছে।
নিরপেক্ষ নীতি
উইকি শিয়া, শিয়া মাযহাব ও আহলে বাইতের (আ.) অনুসারীদের অভ্যন্তরীণ মুক্ত চিন্তার বিষয়াবলিতে নিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করে। তবে, এটা স্পষ্ট যে উইকি শিয়া আহলে বাইতের (আ.) জ্ঞান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং এর নিবন্ধগুলো আহলে বাইতের (আ.) জ্ঞানের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ এবং এর উপর আরোপিত মিথ্যাচার খণ্ডনে লেখা হয়ে থাকে।
- উইকি শিয়া নিবন্ধগুলি গবেষণালব্ধ নিবন্ধ নয়। এই অর্থে যে, এটি জ্ঞানগত জটিল সমস্যার সমাধানে সহায়ক হবে না। উইকি শিয়ার নীতি হল উপলব্ধ সূত্রের উপর ভিত্তি করে সার্বিক তথ্য প্রদান করা, তাই উইকি লেখকরা তাদের নিজস্ব মতামত প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন।
- মতানৈক্যপূর্ণ জ্ঞানগত এবং ঐতিহাসিক বিষয়ে বিচার-বিশ্লেষণ করা পাঠকদের উপর ছেড়ে দেওয়া হয় এবং এক্ষেত্রে উইকি শিয়া নিরপেক্ষ অবস্থান অবলম্বন করে।
- মাযহবগত মতপার্থক্যের ক্ষেত্রে উইকি শিয়া’র লেখকদের মৌলনীতি হচ্ছে, প্রথম সারির সূত্রসমূহ যা মুসলমানদের বৃহৎ দুটি গোষ্ঠী তথা শিয়া ও সুন্নি কর্তৃক স্বীকৃত, শুধুমাত্র তা গৃহীত হবে
উইকি শিয়ার বৈশিষ্ট্য
- নিবন্ধগুলোর সার্বক্ষণিক সম্পাদনা করা।
- সার্বক্ষণিক নিবন্ধগুলোর তথ্য-উপাত্ত আপডেট করা।
- এতে নিবন্ধগুলোর আপডেট ও পরিবর্তন-পরিবর্ধন সংক্রান্ত একটি বিশেষ পার্ট রয়েছে যা থেকে একজন পাঠক খুব সহজেই জানতে পারবেন যে কোন নিবন্ধে কি কি পরিবর্তন-পরিবর্ধন করা হয়েছে।
- নিবন্ধগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংযোগ; একটি নিবন্ধে উল্লেখিত বিভিন্ন পরিভাষা, ব্যক্তিত্ব, স্থান, গ্রন্থ ও গ্রন্থকার এর সাথে সে সম্পর্কিত নিবন্ধ লিংক করা হয়েছে। এর ফলে একজন পাঠক যেকোন মুহূর্তে এই লিংকে প্রবেশ করে সে সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারে এবং নিজের অনুসন্ধানকৃত বিষয়বস্তু সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারবে।
- একটি নিবন্ধ একই বিষয়বস্তুতে একাধিক ভাষায় বিদ্যমান।
- প্রুতিটি নিবন্ধের শেষে তার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য নিবন্ধগুলোর প্রদর্শন।
লোগো
২০২৩ সালের জুন মাসে, উইকি শিয়া তার বিশেষ লোগো উন্মোচন করে। এই লোগোটিতে আরবি 'و' এবং ইংরেজি 'w' অক্ষর রয়েছে যা ফার্সি এবং ইংরেজি ভাষায় উইকি শিয়া-এর প্রাথমিক পদযাত্রার প্রতি নির্দেশ করে। এই লোগোতে গম্বুজ ও মেহরাবের (মসজিদের একটি বিশেষ অংশ) প্রতিকৃৃতি স্থান লাভ করেছে যা শিয়া ও ইসলামের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
পূর্বে, উইকিশিয়া সামান্য পরিবর্তনের সাথে আহল বাইত (আ.) বিশ্ব সংস্থার (উইকিশিয়া এই সংস্থার অধিভুক্ত) লোগো ব্যবহার করেছিল।
ভষা
উইকি শিয়া মাত্র দুটি ভাষা নিয়ে পদযাত্রা শুরা করলেও বর্তমানে এটি ২২ টি ভাষায় সক্রিয় ভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে।