আসাদুল্লাহ (উপাধি)
আসাদুল্লাহ (আরবি: اَسَدُالله); ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)[১] এবং হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের[২] উপাধি। আসাদুল্লাহ’র অর্থ হচ্ছে আল্লাহর সিংহ; বীরত্ব বোঝাতে তথা রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে।
মহানবি (স.), ইমাম আলী (আ.)-কে আসাদুল্লাহ এবং আসাদুর রাসূল (স.) উপাধিতে ভূষিত করেছেন।[৩] কোন কোন গ্রন্থে ইমাম আলীকে (আ.) আসাদুল্লাহিল গালিব (আল্লাহর বিজয়ী সিংহ) হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।[৪]
শিয়ারা, আসাদুল্লাহিল গালিবকে ইমাম আলীর (আ.) লকব বা উপাধি হিসেবে মনে করেন। আসাদুল্লাহ এবং এর অর্থ শেরে খোদা- ফার্সি সাহিত্যে ব্যাপক আকারে প্রতিফলিত হয়েছে এবং ফার্সি ভাষার কবি যেমন কাসায়ি মারুযি,[৫] সাদী,[আত্তার নিশাপুরি] আত্তার নিশাপুরী,[৬] উবায়েদ যাকানি’র[৭] কবিতাসমূহে ব্যবহৃত হয়েছে।
হামযা বিন আব্দুল মুত্তালিবকে যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে আসাদুল্লাহ[৮] এবং লেইসুল্লাহ বলে সম্বোধন করা হতো।[৯] মহানবি (স.) তাকে আসাদুল্লাহ এবং আসাদুর রাসূল (স.) হিসেবে পরিচয় করিয়েছেন।[১০] শিয়াদের কুতুবে আরবাআ’র অন্যতম আল-কাফি গ্রন্থে উল্লেখিত রেওয়ায়েতের ভিত্তিতে, আরশের স্তম্ভে লেখা হয়েছে যে, হামযা হচ্ছে "আসাদুল্লাহ এবং আসাদুর রাসূলুল্লাহ"।[১১]
হযরত হামযা বদরের যুদ্ধে শত্রুর ওপর হামলা চালানোর সময় পাঠ করা উদ্দীপনাময় কবিতায় নিজেকে আল্লাহর সিংহ এবং রাসূলুল্লাহর সিংহ বলে পরিচয় করিয়েছেন।[১২] ইমামগণ (আ.) কর্তৃক বর্ণিত যিয়ারতনামায়ও তাঁকে এই উপাধি সহকারে সালাম দেওয়া হয়েছে।[১৩]
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের জন্ম নিবন্ধন কার্যালয় কর্তৃক প্রকাশিত তথ্যানুসারে, আসাদুল্লাহ নামটি ১২৯৭ থেকে ১৩৮০ ফার্সি সন পর্যন্ত সময়ে ইরানে নিবন্ধিত শীর্ষ ১০০ পুরুষ নামের তালিকায় ছিল।[১৪]
তথ্যসূত্র
- ↑ ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২৫৯।
- ↑ ইবনে আব্দুল বির, আল-ইস্তিআব, ১৪১২ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৩৬৯।
- ↑ ইবনে শাহরে আশুব, মানাকেবে আলে আবি তালিব, ১৩৭৯ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২৫৯।
- ↑ মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৩৪, পৃ. ২৬৮।
- ↑ কিসায়ি মারভাযি, দিওয়ানে আশআর, মাদহে হযরত আলী (আ.)।
- ↑ মানতেকুত তাইয়্যের, ফি ফাযিলাতি আমিরুল মু’মিনিন আলী ইবনে আবি তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু।
- ↑ উবায়েদ যাকানি, দিওয়ানে আশআর, তারকিবাত, দার তাওহিদ ওয়া মানকাবাত।
- ↑ ইবনে হায়ুন, মাগরেবি, শারহুল আখবার, ১৪০৯ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২২৮।
- ↑ ইবনে হাজার, আল-আসাবাহ, ১৪১৫ হি., খণ্ড ৫, পৃ. ৫১২।
- ↑ মাজলিসী, বিহারুল আনওয়ার, ১৪০৩ হি., খণ্ড ৮, পৃ. ৫।
- ↑ কুলাইনি, আল-কাফি, ১৪০৭ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২২৪।
- ↑ ওয়াকিদি, আল-মাগাযি, ১৪০৯ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৬৮; মুফিদ, আল-ইরশাদ, ১৪১৩ হি., খণ্ড ১, পৃ. ৭৪।
- ↑ ইবনে কুলাভিয়া কুম্মি, কামিলুয যিয়ারাত, ১৩৫৬ ফার্সি সন, পৃ. ২২।
- ↑ গুযারেশিয়ে জালেব আয ইয়েক সাদ নামে বারতারে ইরানিয়ান দার কারনে হাযের।
গ্রন্থপঞ্জি
- ইবনে হাজার আসকালানি, আহমাদ বিন আলী, আল-আসাবাতু ফি তামিযিস সাহাবা, তাহকিক: আদিল আহমাদ আব্দুল মাওজুদ ও আলী মুহাম্মাদ মাউদ্ব, বৈরুত, দারুল কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, ১৪১৫ হি./১৯৯৫ খ্রি.।
- ইবনে হায়ুন মাগরেবি, নো’মান বিন মুহাম্মাদ, শারহুল আখবার ফি ফাদ্বায়েলিল আয়িম্মাতিল আতহার আলাইহিমুস সালাম, তাসহিহ: মুহাম্মাদ হুসাইন হুসাইনি জালালি, কোম, জামেয়ে মুদাররেসিন, ১৪০৯ হি.।
- ইবনে শাহরে আশুব মাযান্দারানি, মুহাম্মাদ বিন আলী, মানাকেবে আলে আবি তালিব আলাইহিমুস সালাম, কোম, আল্লামা, ১৩৭৯ হি.।
- ইবনে আব্দুল বারর, ইউসুফ বিন আব্দুল্লাহ, আল-ইস্তিয়াব ফি মা’রিফাতিল আসহাব, তাহকিক: আলী মুহাম্মাদ আল-বাজাভী, বৈরুত, দারুল জিল, ১৪১২ হি./১৯৯২ খ্রি.।
- ইবনে কুলাভিয়া, জাফর বিন মুহাম্মাদ, কামিলুয যিয়ারাত, তাসহিহ: আব্দুল হুসাইন আমিনি, নাজাফ, দারুল মুর্তাযাভিয়্যাহ, ১৩৫৬ ফার্সি সন।
- সাদী, মোসলেহ বিন আব্দুল্লাহ, মাওয়ায়েয, নোসখেয়ে গঞ্জুর।
- শাহরিয়ার, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইন, দিওয়ানে শাহরিয়ার, তেহরান, মুআসসেসেয়ে ইন্তেশারাতে নেগাহ, ১৩৮৫ ফার্সি সন।
- উবায়েদ যাকানি, উবায়দুল্লাহ, দিওয়ানে আশআর, নোসখেয়ে গঞ্জুর।
- কিসায়ি মারভাযি, আবুল হাসান, দিওয়ানে আশআর, তাসহিহ মুহাম্মাদ আমিন রিয়াহি, নোসখেয়ে গঞ্জুর।
- কুলাইনি, মুহাম্মাদ বিন ইয়াকুব, আল-কাফি, তাসহিহ: আলী আকবার গাফফারি ও মুহাম্মাদ আখুন্দি, তেহরান, দারুল কুতুব আল-ইসলামিয়্যাহ, ১৪০৭ হি.।
- মাজলিসী, মুহাম্মাদ বাকের, বিহারুল আনওয়ার, তাসহিহ: গবেষকদের একটি দল, বৈরুত, দারু ইহিয়ায়িত তুরাসিল আরাবি, ১৪০৩ হি.।
- মুফিদ, মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ, আল-ইরশাদ ফি মা’রিফাতি হুজাজিল্লাহ আলাল ইবাদ, তাসহিহ: মুআসসাসাতু আলুল বাইত আলাইহিমুস সালাম, কোম, কনগ্রেয়ে শেইখ মুফিদ, ১৪১৩ হি.।
- ওয়াকিদি, মুহাম্মাদ বিন উমর, আল-মাগাযি, তাহকিক: মার্সডেন জোন্স, বৈরুত, মুআসসাসাতুল আ’লামি, ১৪০৯ হি./১৯৮৯ খ্রি.।