আয়াতে নাবা
আয়াতে নাবা (আরবি: آیة النبأ) (সূরা হুজ্জাত: ৬) উসূলে ফিকহে, ’হুজ্জাতে খবরে ওয়াহেদ’ (খবরে ওয়াহেদের প্রামাণিকতায়) এর একটি দলিল হিসেবে পর্যালোচনা করা করা হয়। অধিকাংশ মুফাস্সীরগণ এই আয়াতের শানে নুযুলকে, বনি মুস্তালাক গোত্রের যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি সংক্রান্ত ওয়ালিদ ইবনে উকবাহ’র মিথ্যা সংবাদ সম্পর্কে বলে মনে করেন। এই সংবাদ প্রচার হওয়ার পর আয়াতে নাবা অবতীর্ণ হয় এবং মুসলমানরা ওয়ালিদের খবরটি তদন্ত করে এবং এর অসারতা খুঁজে পায়। উসূলে ফিকহে, হুজ্জাতে খবরে ওয়াহেদের প্রামাণিকতা পর্যালোচনায় আয়াতে নাবা নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে।
আয়াতের টেক্সট এবং তরজমা
সূরা হুজরাতের ৬ নম্বর আয়াতটি আয়াতে নাবা হিসেবে প্রসিদ্ধ। আয়াতটি নিম্নরূপ: یا أَیهَا الَّذِینَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَیَّنُوا أَن تُصِیبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَیٰ مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِینَ অর্থ হে ঈমানদারগণ! যদি কোন ফাসেক তোমাদের জন্য কোন সংবাদ নিয়ে আসে তবে তা যাচাই-বাছাই করো, না জেনে কোন দলের কোন ক্ষতি করো না এবং যা করেছ তার জন্য অনুশোচনা করো।
শানে নুযুল
মুফাস্সীরগণ উক্ত আয়াতের জন্য দু’টি শানে নুযুলের কথা উল্লেখ করেছেন: মুফাস্সীরগণের অধিকাংশ লিখেছেন, আয়াতটি ওয়ালিদ ইবনে উকাবাহ’র সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে, যাকে মহানবী (স.) যাকাত সংগ্রহ করার জন্য বনি মুস্তালাক গোত্রের নিকট প্রেরণ করেছিলেন।[১] মাজমাউল বায়ান গ্রন্থে ফাযল ইবনে হাসান তাবারসি’র বর্ণনানুসারে, যখন বনি মুস্তালাক গোত্রের লোকজন জানতে পারলেন, মহানবী (স.)-এর প্রতিনিধি তাদের দিকে আসছেন, তখন তারা তাকে অভ্যর্থনা জানাতে আসলেন; কিন্তু জাহেলিয়াতের যুগে তাদের সাথে শত্রুতামূলক সম্পর্ক থাকায় ওয়ালিদ চিন্তা করলেন তারা তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে এসেছেন। এই কারণে মহানবীর (স.) ফিরে গেলেন এবং বললেন, তারা যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। মহানবী (স.) তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন, তখন উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হল এবং মুসলমানদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করা হল যে, কোন ফাসেক ব্যক্তি কোন সংবাদ নিয়ে আসলে সেই সম্পর্কে যেন যাচাই-বাছাই করা হয়।[২]
কেউ কেউ আবার বলেছেন, মহানবী (স.)-এর স্ত্রী মারিয়ার বিরুদ্ধে অপবাদের ঘটনা সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। এই ঘটনায় আলী (আ.) শাস্তি প্রদানের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে মহানবী (স.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করেন, এমনটি কি সম্ভব, যদি তার পর্যবেক্ষণ অন্যদের বর্ণনার বিপরীত হয়, তবে গুজবগুলোকে বিশ্বাস করবেন না। মহানবী (স.) তাকে এমনটি করার অনুমতি প্রদান করেন। শেষ পর্যন্ত প্রমাণিত হয় যে কোন গুনাহ সংঘটিত হয়নি এবং গুজবগুলো মিথ্যা ছিল।[৩]
আয়াত ব্যবহারের মাধ্যমে খবরে ওয়াহেদের প্রামানিকতা যাচাই
উসূলে ফিকহে, হুজ্জাতে খবরে ওয়াহেদ এর দলিল হিসেবে আয়াতে নাবা এর আলোচনা করা হয়েছে। যদিওবা উসূলবিদগণ এই আয়াতের মাধ্যমে হুজ্জাতে খবরে ওয়াহেদ প্রমাণের বিষয়টি নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছাতে সক্ষম হন নি। উদাহরণস্বরূপ, মুহাম্মাদ হুসাইন নাঈনি এই আয়াতের মাধ্যমে হুজ্জাতে খবরে ওয়াহেদের প্রমাণকে সঠিক বলে মনে করেন;[৪] তবে শেইখ আনসারী মনে করেন যে, আয়াতটি হুজ্জাতে খবরে ওয়াহেদকে প্রমাণ করে না।