জানাজার নামাজ: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য
সম্পাদনা সারাংশ নেই |
|||
১ নং লাইন: | ১ নং লাইন: | ||
''(নিবন্ধটি ফিকাহ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের সংজ্ঞা ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিয়ে রচিত হওয়ায় ধর্মীয় আমলের মানদণ্ড নয়। আমলের লক্ষ্যে অন্য সূত্রের শরণাপন্ন হোন।)'' | ''(নিবন্ধটি ফিকাহ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের সংজ্ঞা ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিয়ে রচিত হওয়ায় ধর্মীয় আমলের মানদণ্ড নয়। আমলের লক্ষ্যে অন্য সূত্রের শরণাপন্ন হোন।)'' | ||
'''জানাজার নামাজ;''' যে নামাজ মৃত কোন মুসলিম ব্যক্তিকে দাফনের আগে তার উপর পড়া হয়। এ নামাজ ৫ তাকবির বিশিষ্ট; প্রথম তাকবিরের পর শাহাদাতাইন, দ্বিতীয় তাকবিরের পর সালাওয়াত, তৃতীয় তাকবিরের পর মু’মিন ও মুসলিমগণের জন্য মাগফিরাত কামনা, চতুর্থ তাকবিরের পর যে মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়া হচ্ছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পঞ্চম তাকবিরের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা। | '''জানাজার নামাজ;''' যে নামাজ মৃত কোন মুসলিম ব্যক্তিকে [[দাফন|দাফনের]] আগে তার উপর পড়া হয়। এ নামাজ ৫ [[তাকবির]] বিশিষ্ট; প্রথম তাকবিরের পর [[শাহাদাতাইন]], দ্বিতীয় তাকবিরের পর [[সালাওয়াত]], তৃতীয় তাকবিরের পর মু’মিন ও মুসলিমগণের জন্য মাগফিরাত কামনা, চতুর্থ তাকবিরের পর যে মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়া হচ্ছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পঞ্চম তাকবিরের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা। | ||
জানাজার নামাজ অন্য নামাজ থেকে আলাদা; এতে সূরা হামদ তেলাওয়াত, রুকু, সিজদা, তাশাহহুদ ও সালাম নেই। একইভাবে এই নামাজ পড়ার জন্য পবিত্র থাকাও জরুরি নয়; এ কারণে ওজু ও গোসল ছাড়াই এ নামাজ পড়া যায়, তবে অপর নামাজের শর্তগুলো এতে মান্য করা উত্তম। | জানাজার নামাজ অন্য নামাজ থেকে আলাদা; এতে [[সূরা হামদ]] তেলাওয়াত, রুকু, [[সিজদা]], তাশাহহুদ ও সালাম নেই। একইভাবে এই নামাজ পড়ার জন্য পবিত্র থাকাও জরুরি নয়; এ কারণে [[ওজু]] ও গোসল ছাড়াই এ নামাজ পড়া যায়, তবে অপর নামাজের শর্তগুলো এতে মান্য করা উত্তম। | ||
জামায়াত বদ্ধভাবে বা একাকি এ নামাজ পড়া যায়; তবে জামায়াতে পড়লেও তাকবিরগুলো পড়া মা’মুমের উচিত। | [[জামায়াত]] বদ্ধভাবে বা একাকি এ নামাজ পড়া যায়; তবে জামায়াতে পড়লেও তাকবিরগুলো পড়া মা’মুমের উচিত। | ||
আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে জানাজার নামাজ ৪ তাকবির বিশিষ্ট এবং সালামের মাধ্যমে শেষ হয়। | [[আহলে সুন্নত|আহলে সুন্নতের]] দৃষ্টিতে জানাজার নামাজ ৪ তাকবির বিশিষ্ট এবং সালামের মাধ্যমে শেষ হয়। | ||
== সংজ্ঞা == | == সংজ্ঞা == | ||
জানাজার নামাজ; মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে এমন কিছু দোয়া ও তাকবির পাঠকে বলা হয়, যা কোন মুসলিম মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও কাফনের পর এবং দাফনের পূর্বে পড়া ওয়াজিব। ফিকাহ সংশ্লিষ্ট সূত্রসমূহের ভিত্তিতে, জানাজার নামাজে অপর নামাজের কিছু কিছু শর্ত মেনে চলা ওয়াজিব নয়; যেমন পবিত্রতা।[১] একইভাবে জানাজার নামাযে সালাম নেই।[২] | জানাজার নামাজ; মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে এমন কিছু দোয়া ও তাকবির পাঠকে বলা হয়, যা কোন মুসলিম মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও [[কাফন|কাফনের]] পর এবং দাফনের পূর্বে পড়া ওয়াজিব। ফিকাহ সংশ্লিষ্ট সূত্রসমূহের ভিত্তিতে, জানাজার নামাজে অপর নামাজের কিছু কিছু শর্ত মেনে চলা ওয়াজিব নয়; যেমন পবিত্রতা।[১] একইভাবে জানাজার নামাযে [[সালাম]] নেই।[২] | ||
== জানাজার নামাজ, নামাজ নয় == | == জানাজার নামাজ, নামাজ নয় == | ||
শাহীদে সানি’র ভাষ্যানুযায়ী, ফকীহগণের প্রসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গী হলো, জানাজার নামাজ মূলতঃ নামাজ নয় এবং বাস্তবিক অর্থে মৃত ব্যক্তির জন্য এক প্রকার দোয়া; কেননা রুকু ও সিজদা ব্যতীত কোন ইবাদত নামাজ হিসেবে গন্য হয় না এবং প্রতিটি নামাজের পূর্বশর্ত হলো পবিত্রতা অর্জন করা, কিন্তু জানাজার নামাজে এর কোনটাই শর্ত নয়।[৩] | [[শহীদ সানি|শাহীদে সানি’র]] ভাষ্যানুযায়ী, ফকীহগণের প্রসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গী হলো, জানাজার নামাজ মূলতঃ [[নামাজ]] নয় এবং বাস্তবিক অর্থে মৃত ব্যক্তির জন্য এক প্রকার দোয়া; কেননা [[রুকু]] ও সিজদা ব্যতীত কোন ইবাদত নামাজ হিসেবে গন্য হয় না এবং প্রতিটি নামাজের পূর্বশর্ত হলো [[পবিত্রতা]] অর্জন করা, কিন্তু জানাজার নামাজে এর কোনটাই শর্ত নয়।[৩] | ||
ফিকহুর রিযা গ্রন্থে ইমাম রেযা (আ.) থেকে একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যে, জানাজার নামাজ, নামাজ নয় বরং কিছু তাকবির; কেননা ঐ আমলকে নামাজ বলা হয় যাতে রুকু ও সিজদা রয়েছে।[৪] | [[ফিকহুর রিযা]] গ্রন্থে [[ইমাম রেযা (আ.)]] থেকে একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যে, জানাজার নামাজ, নামাজ নয় বরং কিছু তাকবির; কেননা ঐ আমলকে নামাজ বলা হয় যাতে রুকু ও সিজদা রয়েছে।[৪] | ||
== কিভাবে পড়তে হয় == | == কিভাবে পড়তে হয় == | ||
জানাজার নামাজ পড়ার জন্য মাইয়্যাত তথা মৃত ব্যক্তিকে কেবলামুখি রাখতে হয়, এমনভাবে যেন মাইয়্যাতের মাথা মুসল্লিদের ডান দিকে এবং পাগুলো বাম দিকে থাকে।[৫] মুসল্লিরা কেবলা মুখি হয়ে দাঁড়াবে[৬], দূরত্ব যেন মাইয়্যাত থেকে যেন খুব বেশি না হয়[৭] এবং এ নামাজ দাঁড়িয়ে পড়বে।[৮] | জানাজার নামাজ পড়ার জন্য মাইয়্যাত তথা মৃত ব্যক্তিকে [[কেবলা|কেবলামুখি]] রাখতে হয়, এমনভাবে যেন মাইয়্যাতের মাথা মুসল্লিদের ডান দিকে এবং পাগুলো বাম দিকে থাকে।[৫] মুসল্লিরা কেবলা মুখি হয়ে দাঁড়াবে[৬], দূরত্ব যেন মাইয়্যাত থেকে যেন খুব বেশি না হয়[৭] এবং এ নামাজ দাঁড়িয়ে পড়বে।[৮] | ||
মুসল্লিরা নিয়্যতের পর ৫টি তাকবির বলবে, ৪টি তাকবিরের প্রতিটির আগে বিশেষ দোয়া পাঠ করবে এবং ৫ তাকবির বলার মাধ্যমে নামাজ সমাপ্ত করবে।[৯] | মুসল্লিরা নিয়্যতের পর ৫টি তাকবির বলবে, ৪টি তাকবিরের প্রতিটির আগে বিশেষ দোয়া পাঠ করবে এবং ৫ তাকবির বলার মাধ্যমে নামাজ সমাপ্ত করবে।[৯] | ||
৯৩ নং লাইন: | ৯৩ নং লাইন: | ||
জানাজার নামাজ সংশ্লিষ্ট কতিপয় আহকাম: | জানাজার নামাজ সংশ্লিষ্ট কতিপয় আহকাম: | ||
* জানাজার নামাজ ওয়াজিবে কেফায়ী; এ কারণে যদি কেউ এটি আঞ্জাম দিয়ে দেয় তাহলে অন্যাদের উপর থেকে এর উজুব (আঞ্জামের আবশ্যকতা) অপসারিত হয়ে যায়।[১৪] | *জানাজার নামাজ [[ওয়াজিবে কেফায়ী]]; এ কারণে যদি কেউ এটি আঞ্জাম দিয়ে দেয় তাহলে অন্যাদের উপর থেকে এর উজুব (আঞ্জামের আবশ্যকতা) অপসারিত হয়ে যায়।[১৪] | ||
* জাওয়াহের গ্রন্থের প্রণেতার ভাষ্য হলো, শিয়া ফকীহগণের মাঝে প্রাসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গী মতের ভিত্তিতে, একজন মৃত ব্যক্তির উপর কয়েকবার নামাজ আদায় করা মাকরুহ।[১৫[ আয়াতুল্লাহ | *জাওয়াহের গ্রন্থের প্রণেতার ভাষ্য হলো, শিয়া ফকীহগণের মাঝে প্রাসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গী মতের ভিত্তিতে, একজন মৃত ব্যক্তির উপর কয়েকবার নামাজ আদায় করা মাকরুহ।[১৫[ [[আয়াতুল্লাহ সিস্তানি]]র মত হল, এই মাকরুহ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত নয়, তবে যদি মৃত ব্যক্তি বিশিষ্ট জ্ঞানী ও তাকওয়াবান ব্যক্তি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে [[মাকরুহ নয়]]।[১৬] | ||
* জানাজার নামাজ জামায়াত বদ্ধভাবে পড়া যায়, তবে সেক্ষেত্রে মা’মুমের জন্য তাকবির এবং দোয়াগুলো পড়া | *জানাজার নামাজ জামায়াত বদ্ধভাবে পড়া যায়, তবে সেক্ষেত্রে মা’মুমের জন্য তাকবির এবং দোয়াগুলো পড়া [[ওয়াজিব]]।[১৭] | ||
* ৬ বছরের উর্ধ্বে যে কোন মুসলিম মৃত ব্যক্তির উপর জানাজার নামাজ পড়া ওয়াজিব।[১৮] | *৬ বছরের উর্ধ্বে যে কোন মুসলিম মৃত ব্যক্তির উপর জানাজার নামাজ পড়া ওয়াজিব।[১৮] | ||
* কাফের এবং নাসেবি’র উপর এ নামাজ পড়া হয় না।[১৯] | *[[কাফের]] এবং [[নাসেবি’র]] উপর এ নামাজ পড়া হয় না।[১৯] | ||
* জানাজার নামাযে হাদাসে আকবার বা হাদাসে আসগার থেকে পবিত্রতা অর্জন ওয়াজিব নয়।[২০] তবে ওয়াজিব নামাজের অন্যান্য শর্তাবলি মেনে চলা উত্তম।[২১] | *জানাজার নামাযে হাদাসে আকবার বা হাদাসে আসগার থেকে পবিত্রতা অর্জন ওয়াজিব নয়।[২০] তবে ওয়াজিব নামাজের অন্যান্য শর্তাবলি মেনে চলা উত্তম।[২১] | ||
* জানাজার নামাজ, দাফনের পূর্বে[২২] এবং গোসল ও কাফনের পরে পড়া হয়।[২৩] | *জানাজার নামাজ, দাফনের পূর্বে[২২] এবং গোসল ও কাফনের পরে পড়া হয়।[২৩] | ||
* যদি কোন মুসলমানকে জানাজার নামাজ ব্যতীত দাফন করা হয়, তবে তার কবরের উপর নামাজ পড়তে হবে।[২৪] | *যদি কোন মুসলমানকে জানাজার নামাজ ব্যতীত দাফন করা হয়, তবে তার কবরের উপর নামাজ পড়তে হবে।[২৪] | ||
* কয়েকজন মাইয়্যাতের উপর একটি নামাজ পড়া যায়।[২৫] | *কয়েকজন মাইয়্যাতের উপর একটি নামাজ পড়া যায়।[২৫] | ||
* জানাজার নামাজ মসজিদে পড়া মাকরুহ।[২৬] অবশ্য মারজাগণের কেউ কেউ মসজিদুল হারামকে এ হুকুম থেকে পৃথক করেছেন।[২৭] তবে কেউ কেউ এটাকে গ্রহণ | *জানাজার নামাজ মসজিদে পড়া মাকরুহ।[২৬] অবশ্য মারজাগণের কেউ কেউ মসজিদুল হারামকে এ হুকুম থেকে পৃথক করেছেন।[২৭] তবে কেউ কেউ এটাকে গ্রহণ করেননি।[২৮] | ||
* জুতা পরিহিত অবস্থায়ও জানাজার নামাজ পড়া যায়, অবশ্য মুস্তাহাব হলো জুতা খুলে পড়া।[২৯] | *জুতা পরিহিত অবস্থায়ও জানাজার নামাজ পড়া যায়, অবশ্য মুস্তাহাব হলো জুতা খুলে পড়া।[২৯] | ||
== ঐতিহাসিক জানাজার নামাজসমূহ == | == ঐতিহাসিক জানাজার নামাজসমূহ == |
১৫:৪০, ২৯ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ
(নিবন্ধটি ফিকাহ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের সংজ্ঞা ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিয়ে রচিত হওয়ায় ধর্মীয় আমলের মানদণ্ড নয়। আমলের লক্ষ্যে অন্য সূত্রের শরণাপন্ন হোন।)
জানাজার নামাজ; যে নামাজ মৃত কোন মুসলিম ব্যক্তিকে দাফনের আগে তার উপর পড়া হয়। এ নামাজ ৫ তাকবির বিশিষ্ট; প্রথম তাকবিরের পর শাহাদাতাইন, দ্বিতীয় তাকবিরের পর সালাওয়াত, তৃতীয় তাকবিরের পর মু’মিন ও মুসলিমগণের জন্য মাগফিরাত কামনা, চতুর্থ তাকবিরের পর যে মৃত ব্যক্তির জানাজার নামাজ পড়া হচ্ছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পঞ্চম তাকবিরের মাধ্যমে নামাজ শেষ করা।
জানাজার নামাজ অন্য নামাজ থেকে আলাদা; এতে সূরা হামদ তেলাওয়াত, রুকু, সিজদা, তাশাহহুদ ও সালাম নেই। একইভাবে এই নামাজ পড়ার জন্য পবিত্র থাকাও জরুরি নয়; এ কারণে ওজু ও গোসল ছাড়াই এ নামাজ পড়া যায়, তবে অপর নামাজের শর্তগুলো এতে মান্য করা উত্তম।
জামায়াত বদ্ধভাবে বা একাকি এ নামাজ পড়া যায়; তবে জামায়াতে পড়লেও তাকবিরগুলো পড়া মা’মুমের উচিত।
আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে জানাজার নামাজ ৪ তাকবির বিশিষ্ট এবং সালামের মাধ্যমে শেষ হয়।
সংজ্ঞা
জানাজার নামাজ; মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিকল্পে এমন কিছু দোয়া ও তাকবির পাঠকে বলা হয়, যা কোন মুসলিম মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও কাফনের পর এবং দাফনের পূর্বে পড়া ওয়াজিব। ফিকাহ সংশ্লিষ্ট সূত্রসমূহের ভিত্তিতে, জানাজার নামাজে অপর নামাজের কিছু কিছু শর্ত মেনে চলা ওয়াজিব নয়; যেমন পবিত্রতা।[১] একইভাবে জানাজার নামাযে সালাম নেই।[২]
জানাজার নামাজ, নামাজ নয়
শাহীদে সানি’র ভাষ্যানুযায়ী, ফকীহগণের প্রসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গী হলো, জানাজার নামাজ মূলতঃ নামাজ নয় এবং বাস্তবিক অর্থে মৃত ব্যক্তির জন্য এক প্রকার দোয়া; কেননা রুকু ও সিজদা ব্যতীত কোন ইবাদত নামাজ হিসেবে গন্য হয় না এবং প্রতিটি নামাজের পূর্বশর্ত হলো পবিত্রতা অর্জন করা, কিন্তু জানাজার নামাজে এর কোনটাই শর্ত নয়।[৩]
ফিকহুর রিযা গ্রন্থে ইমাম রেযা (আ.) থেকে একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে যে, জানাজার নামাজ, নামাজ নয় বরং কিছু তাকবির; কেননা ঐ আমলকে নামাজ বলা হয় যাতে রুকু ও সিজদা রয়েছে।[৪]
কিভাবে পড়তে হয়
জানাজার নামাজ পড়ার জন্য মাইয়্যাত তথা মৃত ব্যক্তিকে কেবলামুখি রাখতে হয়, এমনভাবে যেন মাইয়্যাতের মাথা মুসল্লিদের ডান দিকে এবং পাগুলো বাম দিকে থাকে।[৫] মুসল্লিরা কেবলা মুখি হয়ে দাঁড়াবে[৬], দূরত্ব যেন মাইয়্যাত থেকে যেন খুব বেশি না হয়[৭] এবং এ নামাজ দাঁড়িয়ে পড়বে।[৮]
মুসল্লিরা নিয়্যতের পর ৫টি তাকবির বলবে, ৪টি তাকবিরের প্রতিটির আগে বিশেষ দোয়া পাঠ করবে এবং ৫ তাকবির বলার মাধ্যমে নামাজ সমাপ্ত করবে।[৯]
প্রথম তাকবিরের পর শাহাদাতাইন, দ্বিতীয় তাকবিরের পর সালাওয়াত, তৃতীয় তাকবিরের পর মু’মিন ও মুসলিমগণের জন্য মাগফিরাত কামনা, চতুর্থ তাকবিরের পর যে মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে নামাজ পড়া হচ্ছে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে এবং পঞ্চম তাকবিরের মাধ্যমে নামাজ সমাপ্ত হবে।[১০]
৪ তাকবিরের পর যে সকল দোয়া পাঠ করতে হয়, সেগুলো হল:
তাকবির | সংক্ষিপ্ত দোয়া | বড় দোয়া |
প্রথম | اَشْهَدُ اَنْ لا الهَ الَّا اللَّهُ وَ اَنَّ مُحَمَّداً رَسوُلُ اللَّهِ. | اَشْهَدُ اَنْ لا اِلهَ الا اللَّهُ وَحْدَهُ لاشَریک لَهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَ رَسُولُهُ اَرْسَلَهُ بِالْحَقِّ بَشیراً وَ نَذیراً بَینَ یدَی السّاعَةِ |
দ্বিতীয় | اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلی مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ. | اَللّهُمَّ صَلِّ عَلی مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَ بارِک عَلی مُحَمَّدٍ وَ آلِ مُحَمَّدٍ وَارْحَمْ مُحَمَّداً وَ آلَ مُحَمَّدٍ کاَفْضَلِ ما صَلَّیتَ وَ بارَکتَ وَ تَرَحَّمْتَ عَلی اِبْرهیمَ وَ آلِ اِبْرهیمَ اِنَّک حَمیدٌ مَجیدٌ وَ صَلِّ عَلی جَمیعِ الاَنْبِیآءِ وَالْمُرْسَلینَ |
তৃতীয় | اَللَّهُمَّ اْغفِرْ لِلْمُؤْمِنینَ وَ الْمُؤْمِناتِ. | اَللّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنینَ وَالْمُؤْمِناتِ وَالْمُسْلِمینَ وَالْمُسْلِماتِ الاَحْیآءِ مِنْهُمْ وَالاَمْواتِ تابِعْ بَینَنا وَ بَینَهُمْ بِالْخَیراتِ اِنَّک مُجیبُ الدَّعَواتِ اِنَّک عَلی کلِّشَیئٍ قَدیرٌ |
চতুর্থ | পুরুষ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِهذَا المَیت
নারী: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِهذِهِ المَیتَةِ. |
পুরুষ:
اَللّهُمَّ اِنَّ هذا عَبْدُک وَابْنُ عَبْدِک وَابْنُ اَمَتِک نَزَلَ بِک وَ اَنْتَ خَیرُ مَنْزُولٍ بِهِ اَللّهُمَّ اِنّا لا نَعْلَمُ مِنْهُ اِلاّ خَیراً وَ اَنْتَ اَعْلَمُ بِهِ مِنّا اَللّهُمَّ اِنْ کانَ مُحْسِناً فَزِدْ فی اِحْسانِهِ وَ اِنْ کانَ مُسیئاً فَتَجاوَزْ عَنْهُ وَاغْفِرِ لَهُ اَللّهُمَّ اجْعَلْهُ عِنْدَک فی اَعْلا عِلِّیینَ وَاخْلُفْ عَلی اَهْلِهِ فِی الْغابِرینَ وَارْحَمْهُ بِرَحْمَتِک یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ নারী: اَللّهُمَّ اِنَّ هذِهِ اَمَتُک وَابْنَةُ عَبْدِک و ابنَةُ اَمَتِکَ نَزَلَتْ بِک وَ اَنْتَ خَیرُ مَنْزوُلٍ بِهِ اَللّهُمَّ اِنّا لا نَعْلَمُ مِنْها اِلاّ خَیراً وَ اَنْتَ اَعْلَمُ بِهامِنّا اَللّهُمَّ اِنْ کانَتْ مُحْسِنَةً فَزِدْ فی اِحْسانِها وَ اِنْ کانَتْ مُسیئةً فَتَجاوَزْ عَنْها وَاغْفِرْ لَها اَللّهُمَّ اجْعَلْها عِنْدَک فی اَعْلا عِلِّیینَ وَاخْلُفْ عَلی اَهْلِها فِی الْغابِرینَ وَارْحَمْها بِرَحْمَتِک یا اَرْحَمَ الرّاحِمینَ |
তাকবিরগুলোর বাংলা অর্থ
তাকবির | সংক্ষিপ্ত দোয়া | বড় দোয়া |
প্রথম | -আল্লাহু আকবার- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই, আর নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ তাঁর রাসূল। | ‘-আল্লাহু আকবার- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তিনি এক ও অদ্বিতীয়; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসূল, তাঁকে সত্যসহ সুসংবাদ দানকারী এবং ভীতি প্রদর্শন (ও সতর্ককারী) হিসেবে পাঠিয়েছেন কিয়ামতের আগ দিয়ে প্রেরণ করেছেন। |
দ্বিতীয় | ‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদের উপর দরুদ পাঠাও, | ‘হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদের উপর দরুদ পাঠাও, মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদের প্রতি বরকত দান করো, রহমত অবতীর্ণ করো মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদের উপর; যেভাবে দরুদ পাঠিয়েছো ও রহমত দান করেছো ইব্রাহিম ও আলে ইব্রাহিমের উপর, নিশ্চয়ই তুমি প্রসংশিত ও মহান এবং দরুদ প্রেরণ করো সকল নবি ও রাসুলগণের উপর। |
তৃতীয় | ‘হে আল্লাহ্! ক্ষমা করে দাও সকল মু’মিন ও মু’মিনাতকে এবং সকল মুসলিম নর ও নারীকে (চাই তারা) জীবিত হোক বা মৃত। আমাদের এবং তাদের মাঝে কল্যাণের (ও সৎকর্ম) মারফত সম্পর্ক স্থাপিত করো, নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনাগুলো কবুলকারী, নিশ্চয়ই তুমি সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান’। | |
চতুর্থ | মৃত ব্যক্তি পুরুষ হলে: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই এই (মাইয়্যাত) তোমারই বান্দা এবং তোমার বান্দার পুত্র এবং তোমার বান্দীর পুত্র তোমার কাছে এসেছে, আর শ্রেষ্ঠ আগমনের স্থান তো তুমিই। হে আল্লাহ! আমরা তার সম্পর্কে উত্তম ও কল্যাণকর বিষয় ব্যতীত কিছুই জানি না এবং তুমি তার বিষয়ে অধিক অবগত। হে আল্লাহ্! যদি সে সৎকর্মশীল হয়ে থাকে তবে তার সৎকর্মকে আরও বাড়িয়ে দাও, আর যদি গুনাহগার হয়ে থাকে তাহলে তার (গুনাহগুলো) থেকে চোখ ফিরিয়ে নাও এবং তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! তোমার নিকট তাকে সর্বোচ্চ স্থান দান করো, আর তার আহলের (পরিবার ও বংশধরদের) মাঝে তুমি দায়িত্বশীল হিসেবে থেকো, আর তোমার রহমতের মাধ্যমে তার উপর দয়া করো হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
মৃত ব্যক্তি নারী হলে: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই এই (মাইয়্যাত) তোমারই বান্দী এবং তোমার বান্দার কন্যা এবং তোমার বান্দীর কন্যা তোমার কাছে এসেছে, আর শ্রেষ্ঠ আগমনের স্থান তো তুমিই। হে আল্লাহ! আমরা তার সম্পর্কে উত্তম ও কল্যাণকর বিষয় ব্যতীত কিছুই জানি না এবং তুমি তার বিষয়ে অধিক অবগত। হে আল্লাহ্! যদি সে সৎকর্মশীল হয়ে থাকে তবে তার সৎকর্মকে আরও বাড়িয়ে দাও, আর যদি গুনাহগার হয়ে থাকে তাহলে তার (গুনাহগুলো) থেকে চোখ ফিরিয়ে নাও এবং তাকে ক্ষমা করে দাও। হে আল্লাহ! তোমার নিকট তাকে সর্বোচ্চ স্থান দান করো, আর তার আহলের (পরিবার ও বংশধরদের) মাঝে তুমি দায়িত্বশীল হিসেবে থেকো, আর তোমার রহমতের মাধ্যমে তার উপর দয়া করো হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’ |
সুন্নি ফকীহগণের দৃষ্টিতে জানাজার নামাজ ৪ তাকবির বিশিষ্ট; প্রথম তাকবিরের মাধ্যমে নামাজ শুরু হয়, অতঃপর মহান আল্লাহর প্রশংসা করা হয়। দ্বিতীয় তাকবিরের পর সালাওয়াত পাঠ করা হয়। তৃতীয় তাকবিরের পর মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা হয় এবং ৪ তাকবির ও সালাম পাঠের মাধ্যমে নামাজ শেষ হয়।[১২] অবশ্যই এ নামাজ পড়ার পদ্ধতির বিষয়ে স্বয়ং আহলে সুন্নতের মাঝেও মতভিন্নতা রয়েছে।[১৩]
আহকাম
জানাজার নামাজ সংশ্লিষ্ট কতিপয় আহকাম:
- জানাজার নামাজ ওয়াজিবে কেফায়ী; এ কারণে যদি কেউ এটি আঞ্জাম দিয়ে দেয় তাহলে অন্যাদের উপর থেকে এর উজুব (আঞ্জামের আবশ্যকতা) অপসারিত হয়ে যায়।[১৪]
- জাওয়াহের গ্রন্থের প্রণেতার ভাষ্য হলো, শিয়া ফকীহগণের মাঝে প্রাসিদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গী মতের ভিত্তিতে, একজন মৃত ব্যক্তির উপর কয়েকবার নামাজ আদায় করা মাকরুহ।[১৫[ আয়াতুল্লাহ সিস্তানির মত হল, এই মাকরুহ হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত নয়, তবে যদি মৃত ব্যক্তি বিশিষ্ট জ্ঞানী ও তাকওয়াবান ব্যক্তি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে মাকরুহ নয়।[১৬]
- জানাজার নামাজ জামায়াত বদ্ধভাবে পড়া যায়, তবে সেক্ষেত্রে মা’মুমের জন্য তাকবির এবং দোয়াগুলো পড়া ওয়াজিব।[১৭]
- ৬ বছরের উর্ধ্বে যে কোন মুসলিম মৃত ব্যক্তির উপর জানাজার নামাজ পড়া ওয়াজিব।[১৮]
- কাফের এবং নাসেবি’র উপর এ নামাজ পড়া হয় না।[১৯]
- জানাজার নামাযে হাদাসে আকবার বা হাদাসে আসগার থেকে পবিত্রতা অর্জন ওয়াজিব নয়।[২০] তবে ওয়াজিব নামাজের অন্যান্য শর্তাবলি মেনে চলা উত্তম।[২১]
- জানাজার নামাজ, দাফনের পূর্বে[২২] এবং গোসল ও কাফনের পরে পড়া হয়।[২৩]
- যদি কোন মুসলমানকে জানাজার নামাজ ব্যতীত দাফন করা হয়, তবে তার কবরের উপর নামাজ পড়তে হবে।[২৪]
- কয়েকজন মাইয়্যাতের উপর একটি নামাজ পড়া যায়।[২৫]
- জানাজার নামাজ মসজিদে পড়া মাকরুহ।[২৬] অবশ্য মারজাগণের কেউ কেউ মসজিদুল হারামকে এ হুকুম থেকে পৃথক করেছেন।[২৭] তবে কেউ কেউ এটাকে গ্রহণ করেননি।[২৮]
- জুতা পরিহিত অবস্থায়ও জানাজার নামাজ পড়া যায়, অবশ্য মুস্তাহাব হলো জুতা খুলে পড়া।[২৯]
ঐতিহাসিক জানাজার নামাজসমূহ
হজরত ফাতেমা যাহরার (সা. আ.) উপর পড়া জানাজার নামাজ এবং ইমাম খোমেনি’র উপর পড়া জানাজার নামাজ প্রত্যেকটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী; ঐতিহাসিকদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে হজরত আলী (আ.) ফাতেমা যাহরাকে (সা. আ.) রাতের আঁধারে গোসল দিয়েছিলেন[৩০] এবং তাঁর উপর নামাজ আদায় করেছিলেন।[৩১] তাবারসী’র বর্ণনার ভিত্তিতে, ইমাম হাসান, ইমাম হুসাইন (আ.), মেকদাদ, সালমান ফার্সি, আবু যার গিফারী, আম্মার ইবনে ইয়াসির, আকিল ইবনে আবি তালিব, যুবাইর ইবনে আওয়াম, বুরাইদাহ ইবনে হাসিব আসলামি ও বনি হাশিমের কয়েকজন হযরত ফাতেমা যাহরার (সা. আ.) জানাজায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।[৩২]
এর কারণ ছিল, ফাতেমা (সা. আ.) আলীকে (আ.) ওসিয়ত করেছিলেন যেন তার গোসল, কাফন, জানাজা ও দাফনের কার্যাদি রাতের আঁধারে সম্পন্ন করা হয়, যাতে তাঁর উপর যারা জুলুম করেছে তারা যেন তাঁর জানাজাতে অংশগ্রহণ না করতে পারে।[৩৩]
ইমাম খোমেনির উপর যে জানাজার নামাজ পড়া হয়েছিল তা ইতিহাসের সবচেয়ে জনবহুল জানাজাগুলোর অন্যতম। ১৯৮৯ সালের জুন মাসে আয়াতুল্লাহ গুলপায়গানী’র ইমামতিতে এ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। ইমাম খোমেনির জানাজাকে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জানাজা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৩৪]