বিষয়বস্তুতে চলুন

সাকীফার ঘটনা: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

সম্পাদনা সারাংশ নেই
সম্পাদনা সারাংশ নেই
৬৬ নং লাইন: ৬৬ নং লাইন:
'''মিকদাদ ইবনে আমর:''' সাকীফার সিদ্ধান্ত মানার বিষয়ে মুসলমানদের আচরণকে আশ্চর্যজনক আখ্যায়িত করে মিকদাদ ইবনে আমর ইমাম আলী (আ.) এ বিষয়ের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হওয়ার বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছেন।<ref>আসকারী, সাকীফা: বাররাসি নাহভে শেকলগিরি হুকুমাত পাস আয রেহলাত পায়াম্বার, ১৩৮৭ ফার্সি সন, পৃ. ৭৬।</ref>
'''মিকদাদ ইবনে আমর:''' সাকীফার সিদ্ধান্ত মানার বিষয়ে মুসলমানদের আচরণকে আশ্চর্যজনক আখ্যায়িত করে মিকদাদ ইবনে আমর ইমাম আলী (আ.) এ বিষয়ের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হওয়ার বিষয়টিকে স্পষ্ট করেছেন।<ref>আসকারী, সাকীফা: বাররাসি নাহভে শেকলগিরি হুকুমাত পাস আয রেহলাত পায়াম্বার, ১৩৮৭ ফার্সি সন, পৃ. ৭৬।</ref>


'''ওমর ইবনে খাত্তাব:''' জীবনের শেষ দিনগুলিতে ওমর ইবনে খাত্তাব জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত খোতবায় বলেন, ‘আবুবকরের হাতে বাইয়াত ছিল একটি বিচ্যুতি ও ভুল; যা ঘটেছে এবং অতিক্রান্ত হয়েছে। হ্যাঁ এমনই ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ্ জনগণকে ঐ বিচ্যুতির অকল্যাণ থেকে রক্ষা করেছেন, যে-ই খলিফা নির্বাচনে এমন পদ্ধতি গ্রহণ করবে তাকে হত্যা করো।[৩৬]
'''ওমর ইবনে খাত্তাব:''' জীবনের শেষ দিনগুলিতে ওমর ইবনে খাত্তাব জনসাধারণের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত খোতবায় বলেন, ‘আবুবকরের হাতে বাইয়াত ছিল একটি বিচ্যুতি ও ভুল; যা ঘটেছে এবং অতিক্রান্ত হয়েছে। হ্যাঁ এমনই ছিল। কিন্তু মহান আল্লাহ্ জনগণকে ঐ বিচ্যুতির অকল্যাণ থেকে রক্ষা করেছেন, যে-ই খলিফা নির্বাচনে এমন পদ্ধতি গ্রহণ করবে তাকে হত্যা করো।<ref>তাবারি, তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ১৩৮৭ হি., খণ্ড ৩, পৃ. ২০৫; বালাযুরি, আনসাবুল আশরাফ, মুআসসেসাতুল আ’লামি লিল মাতবুআ’ত, খণ্ড ১, পৃ. ৫৮১; মাকদেসী, আল-বাদউ ওয়াত তারিখ, মাক্তাবাতুস সাকাফা আল-দ্বীনি, খণ্ড ৫, পৃ. ১৯০।</ref>




৭৩ নং লাইন: ৭৩ নং লাইন:
বনি উমাইয়া উসমান ইবনে আফফানকে ঘিরে এবং বনি যোহরা সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফকে ঘিরে বসেছিল; তারা সকলে মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। যখন আবুবকর ও আবু উবাইদাহ তাদের কাছে এলেন এবং আবুবকরের হাতে মুসলমানদের বাইয়াতের কাজও সম্পন্ন হয়েছিল, ওমর ইবনে খাত্তাব মসজিদে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বসেছো? ওঠো, আবুবকরের হাতে বাইয়াত করো, আমি তার হাতে বাইয়াত করেছি। ওমরের কথা শেষ হওয়ার পর উসমান ইবনে আফফান ও উপস্থিত বনি উমাইয়ার লোকেরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করে। একইভাবে সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফের সাথে যারা সমআকিদার অধিকারী ছিলেন তারাও।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮।</ref>
বনি উমাইয়া উসমান ইবনে আফফানকে ঘিরে এবং বনি যোহরা সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফকে ঘিরে বসেছিল; তারা সকলে মসজিদে সমবেত হয়েছিলেন। যখন আবুবকর ও আবু উবাইদাহ তাদের কাছে এলেন এবং আবুবকরের হাতে মুসলমানদের বাইয়াতের কাজও সম্পন্ন হয়েছিল, ওমর ইবনে খাত্তাব মসজিদে সমবেতদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমাদের কি হয়েছে যে, তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে বসেছো? ওঠো, আবুবকরের হাতে বাইয়াত করো, আমি তার হাতে বাইয়াত করেছি। ওমরের কথা শেষ হওয়ার পর উসমান ইবনে আফফান ও উপস্থিত বনি উমাইয়ার লোকেরা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করে। একইভাবে সা’দ ও আব্দুর রাহমান ইবনে আওফের সাথে যারা সমআকিদার অধিকারী ছিলেন তারাও।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮।</ref>


আবু সুফিয়ান: আবু সুফিয়ানকে [[মহানবি (স.)]] কোন কাজে মদিনার বাইরে প্রেরণ করেছিলেন। মদিনায় ফিরে আল্লাহর নবির (স.) ওফাত এবং সাকীফায় বাইয়াতের বিষয়ে অবগত হওয়ার পর এ সম্পর্কে [[আলী (আ.)]] ও [[আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব|আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের]] প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলেন। তাদের দু’জনের নীরবে গৃহে অবস্থানের কথা জেনে তিনি বললেন: ‘আল্লাহর কসম, যদি তাদের জন্য জীবিত থাকি তাহলে তাদের পাগুলোকে (মিম্বারের) উঁচু স্থানে নিয়ে যাব।’ তিনি আরও বললেন: ‘এমন ধূলোবালি আমি উড়তে দেখছি রক্তবৃষ্টি ছাড়া তা (বাতাস থেকে) পরিচ্ছন্ন হবে না।’[৩৮] বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, মদিনায় প্রবেশের পর আবু সুফিয়ান আলীর (আ.) খেলাফতের সমর্থনে এবং আবুবকর ও ওমরের তিরস্কারে কিছু পংতি আবৃতি করেন।<ref>ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১৭।</ref>
আবু সুফিয়ান: আবু সুফিয়ানকে [[মহানবি (স.)]] কোন কাজে মদিনার বাইরে প্রেরণ করেছিলেন। মদিনায় ফিরে আল্লাহর নবির (স.) ওফাত এবং সাকীফায় বাইয়াতের বিষয়ে অবগত হওয়ার পর এ সম্পর্কে [[আলী (আ.)]] ও [[আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব|আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিবের]] প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি জানতে চাইলেন। তাদের দু’জনের নীরবে গৃহে অবস্থানের কথা জেনে তিনি বললেন: ‘আল্লাহর কসম, যদি তাদের জন্য জীবিত থাকি তাহলে তাদের পাগুলোকে (মিম্বারের) উঁচু স্থানে নিয়ে যাব।’ তিনি আরও বললেন: ‘এমন ধূলোবালি আমি উড়তে দেখছি রক্তবৃষ্টি ছাড়া তা (বাতাস থেকে) পরিচ্ছন্ন হবে না।’<ref>জাওহারী বাসরী, আস-সাকিফাতু ওয়া ফাদাক, মাক্তাবাতুন নাবাবিয়্যাহ আল-হাদীস, পৃ. ৩৭।</ref> বিভিন্ন সূত্রে উল্লিখিত হয়েছে যে, মদিনায় প্রবেশের পর আবু সুফিয়ান আলীর (আ.) খেলাফতের সমর্থনে এবং আবুবকর ও ওমরের তিরস্কারে কিছু পংতি আবৃতি করেন।<ref>ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১৭।</ref>


মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান: মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান এক চিঠিতে [[মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকর|মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকরের]] উদ্দেশে (সাকীফার ঘটনার বহু বছর পর) লিখেছিলেন: ‘...তোমার পিতা ও ওমর ছিলেন আলীর অধিকার হরণকারী এবং তাঁর বিরোধিতাকারী প্রথম ব্যক্তি। তারা দু’জন পরস্পরের হাতে হাত মিলিয়ে আলীকে তাদের হাতে বাইয়াতের আহবান জানান। আর আলী যখন বাইয়াতের বিরোধিতা ও অস্বীকার করলো তখন তারা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিল এবং তার সম্পর্কে ভয়ংকর ভাবনা ভাবলো...।’[৪০]
মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান: মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান এক চিঠিতে [[মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকর|মুহাম্মাদ ইবনে আবুবকরের]] উদ্দেশে (সাকীফার ঘটনার বহু বছর পর) লিখেছিলেন: ‘...তোমার পিতা ও ওমর ছিলেন আলীর অধিকার হরণকারী এবং তাঁর বিরোধিতাকারী প্রথম ব্যক্তি। তারা দু’জন পরস্পরের হাতে হাত মিলিয়ে আলীকে তাদের হাতে বাইয়াতের আহবান জানান। আর আলী যখন বাইয়াতের বিরোধিতা ও অস্বীকার করলো তখন তারা অন্যায় সিদ্ধান্ত নিল এবং তার সম্পর্কে ভয়ংকর ভাবনা ভাবলো...।’<ref>নাসর বিন মুযাহেম, ওয়াকআ’তু সিফফিন, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহ মারআশি আল-নাজাফী, পৃ. ১১৯-১২০।</ref>


এছাড়া, মসজিদে আবুবকরের জন্য বাইয়াত গ্রহণের সময় [[বনি উমাইয়া]] [[উসমান|উসমানের]] চতুর্পাশে জড়ো হয়েছিল এবং [[কুরাইশ|কুরাইশের]] উপগোত্র [[বনি যোহরার]] লোকেরা [[আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ]] অথবা [[সা’দ|সা’দকে]] নির্বাচনের বিষয়ে একমত ছিল; কিন্তু [[ওমর|ওমরের]] প্রচেষ্টায় তারা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে সম্মত হয়।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮।</ref>
এছাড়া, মসজিদে আবুবকরের জন্য বাইয়াত গ্রহণের সময় [[বনি উমাইয়া]] [[উসমান|উসমানের]] চতুর্পাশে জড়ো হয়েছিল এবং [[কুরাইশ|কুরাইশের]] উপগোত্র [[বনি যোহরার]] লোকেরা [[আব্দুর রাহমান ইবনে আওফ]] অথবা [[সা’দ|সা’দকে]] নির্বাচনের বিষয়ে একমত ছিল; কিন্তু [[ওমর|ওমরের]] প্রচেষ্টায় তারা আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে সম্মত হয়।<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৯৯০ খ্রি., খণ্ড ১, পৃ. ২৮।</ref>
৮৪ নং লাইন: ৮৪ নং লাইন:
সাবধান! আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার অবস্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না। আমি খেলাফতের বিষয়ে চোখ মুদে নিলাম এবং নিজেকে তা থেকে নির্লিপ্ত রাখলাম। অতঃপর আমি কর্তিত হস্ত এবং সঙ্গীহীন অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে প্রবল বেগে আক্রমণ করা অথবা ধৈর্য সহকারে চোখ বন্ধ করে অন্ধকারের সকল দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করার বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। এরই মধ্যে বয়স্কগণ দুর্বল হয়ে পড়লো, যুবকেরা বৃদ্ধ হয়ে গেল এবং মু’মিনগণ চাপের মুখে আমরণ কষ্ট করে কাজ করছিলো। আমি দেখলাম এ অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ...।’]
সাবধান! আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার অবস্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না। আমি খেলাফতের বিষয়ে চোখ মুদে নিলাম এবং নিজেকে তা থেকে নির্লিপ্ত রাখলাম। অতঃপর আমি কর্তিত হস্ত এবং সঙ্গীহীন অবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে প্রবল বেগে আক্রমণ করা অথবা ধৈর্য সহকারে চোখ বন্ধ করে অন্ধকারের সকল দুঃখ-দুর্দশা সহ্য করার বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলাম। এরই মধ্যে বয়স্কগণ দুর্বল হয়ে পড়লো, যুবকেরা বৃদ্ধ হয়ে গেল এবং মু’মিনগণ চাপের মুখে আমরণ কষ্ট করে কাজ করছিলো। আমি দেখলাম এ অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করাই বুদ্ধিমানের কাজ...।’]


সাকীফার দিন [[আলী (আ.)]] [[আবুবকর|আবুবকরের]] হাতে বাইয়াত করেন নি এবং পরবর্তী সময়ে তার বাইয়াত তথা সমঝোতার বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। তবে বিশিষ্ট শিয়া ঐতিহাসিক [[শেইখ মুফিদ|শেইখ মুফিদের]] (মৃত্যু ৪১৩ হি.) মতে, শিয়া গবেষকদের এ বিষয়ে মতৈক্য রয়েছে যে, [[ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)|আলী ইবনে আবি তালিব]] কখনই আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি।[৪২]
সাকীফার দিন [[আলী (আ.)]] [[আবুবকর|আবুবকরের]] হাতে বাইয়াত করেন নি এবং পরবর্তী সময়ে তার বাইয়াত তথা সমঝোতার বিষয়ে ঐতিহাসিকগণ ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন। তবে বিশিষ্ট শিয়া ঐতিহাসিক [[শেইখ মুফিদ|শেইখ মুফিদের]] (মৃত্যু ৪১৩ হি.) মতে, শিয়া গবেষকদের এ বিষয়ে মতৈক্য রয়েছে যে, [[ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)|আলী ইবনে আবি তালিব]] কখনই আবুবকরের হাতে বাইয়াত করেন নি।<ref>শেইখ মুফিদ, আল-ফুসুলুল মুখতারাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ৫৬।</ref>


শুরুর দিনগুলোতে আহলে সাকীফা আলীকে (আ.) আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন: ‘খেলাফতের বিষয়ে আমি তোমাদের চেয়ে অগ্রাধিকারী, আমি তোমাদের হাতে বাইয়াত করবো না, আমার হাতে বাইয়াত করার ক্ষেত্রে তোমরাই অধিক যোগ্য। তোমরা আনসারদের থেকে খেলাফতকে নিয়ে নিয়েছ; তাদের সাথে তর্কের সময় তোমরা রাসূলের (স.) সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিকে সামনে এনে তাদের উদ্দেশ্যে বলেছ: আমরা নবির (স.) নিকটবর্তী ও তাঁর সাথে আত্মীয়তার কারণে আমরা তোমাদের চেয়ে খেলাফতের বিষয়ে বেশি হকদার। আর তারাও তোমাদের এ কথার ভিত্তিতে নেতৃত্ব ও খেলাফতের ভার তোমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। তোমরা আনসারদের সাথে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছ আমিও তোমাদের সামনে একই যুক্তি উপস্থাপন করছি (অর্থাৎ রাসূলের (স.) সাথে  ঘনিষ্ঠতা ও আত্মীয়তা)। সুতরাং তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে ইনসাফ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে আচরণ করো, আর আনসার যা কিছু তোমাদের ক্ষেত্রে মেনে নিয়েছে, তোমরাও তা আমাদের ক্ষেত্রে মেনে নাও, অন্যথায় তোমরা জেনেশুনে জুলুম ও অত্যাচার করেছ।’<ref>ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১১।</ref>
শুরুর দিনগুলোতে আহলে সাকীফা আলীকে (আ.) আবুবকরের হাতে বাইয়াত করার জন্য বাধ্য করার চেষ্টা করলে তিনি তাদের উদ্দেশ্যে বললেন: ‘খেলাফতের বিষয়ে আমি তোমাদের চেয়ে অগ্রাধিকারী, আমি তোমাদের হাতে বাইয়াত করবো না, আমার হাতে বাইয়াত করার ক্ষেত্রে তোমরাই অধিক যোগ্য। তোমরা আনসারদের থেকে খেলাফতকে নিয়ে নিয়েছ; তাদের সাথে তর্কের সময় তোমরা রাসূলের (স.) সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টিকে সামনে এনে তাদের উদ্দেশ্যে বলেছ: আমরা নবির (স.) নিকটবর্তী ও তাঁর সাথে আত্মীয়তার কারণে আমরা তোমাদের চেয়ে খেলাফতের বিষয়ে বেশি হকদার। আর তারাও তোমাদের এ কথার ভিত্তিতে নেতৃত্ব ও খেলাফতের ভার তোমাদের উপর ছেড়ে দিয়েছে। তোমরা আনসারদের সাথে যে যুক্তি উপস্থাপন করেছ আমিও তোমাদের সামনে একই যুক্তি উপস্থাপন করছি (অর্থাৎ রাসূলের (স.) সাথে  ঘনিষ্ঠতা ও আত্মীয়তা)। সুতরাং তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে ইনসাফ ও ন্যায়ের ভিত্তিতে আচরণ করো, আর আনসার যা কিছু তোমাদের ক্ষেত্রে মেনে নিয়েছে, তোমরাও তা আমাদের ক্ষেত্রে মেনে নাও, অন্যথায় তোমরা জেনেশুনে জুলুম ও অত্যাচার করেছ।’<ref>ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১১।</ref>


কিছু সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে, আবুবকরের সাথে আলীর (আ.) মৃদু কিন্তু খোলামেলা বিতর্ক হয়েছিল; সে সময় তিনি সাকীফার ঘটনায় নবির (সা.) আহলে বাইতের অধিকার উপেক্ষা ও লঙ্ঘন করার জন্য আবুবকরের নিন্দা জানিয়েছিলেন। [[আমিরুল মু’মিনীন|আমীরুল মু’মিনীনের]] (আ.) যুক্তি মেনে নিয়ে আবুবকর প্রভাবিত হন, এমনকি মহানবির উত্তরসূরি হিসাবে আলীর (আ.) হাতে বাইয়াতও করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পরিশেষে তিনি তাঁর সাথীদের কারো কারো পরামর্শে এ কাজ থেকে বিরত থাকেন।[৪৪]
কিছু সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে, আবুবকরের সাথে আলীর (আ.) মৃদু কিন্তু খোলামেলা বিতর্ক হয়েছিল; সে সময় তিনি সাকীফার ঘটনায় নবির (সা.) আহলে বাইতের অধিকার উপেক্ষা ও লঙ্ঘন করার জন্য আবুবকরের নিন্দা জানিয়েছিলেন। [[আমিরুল মু’মিনীন|আমীরুল মু’মিনীনের]] (আ.) যুক্তি মেনে নিয়ে আবুবকর প্রভাবিত হন, এমনকি মহানবির উত্তরসূরি হিসাবে আলীর (আ.) হাতে বাইয়াতও করতে চেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু পরিশেষে তিনি তাঁর সাথীদের কারো কারো পরামর্শে এ কাজ থেকে বিরত থাকেন।<ref>দ্র: তাবারসি, আল-ইহতিজাজ, নাশরুল মুর্তাযা, খণ্ড ১, পৃ. ১১৫-১৩০।</ref>


আলী (আ.) বিভিন্ন সময়ে তার কথা ও ভাষ্যে সাকীফার ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন এবং আল্লাহর নবির (স.) উত্তরাধিকারী হওয়া প্রসঙ্গে তার অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ‘[[শিকশিকিয়া]]’ নামক খুতবায় তিনি তিনি এই ঘটনা উল্লেখ করেছেন। খোতবার শুরুতে তিনি বলেন: আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার স্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না।...।’<ref>ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ১, পৃ. ১৫১।</ref>[[আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী|আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর]] ভাষায়, সাকীফাসহ সমগ্র জীবনে হযরত আলীর (আ.) মানদণ্ড ছিল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থসিদ্ধ বিষয়গুলোকেই তিনি প্রাধান্য দিতেন ও বেছে নিতেন।[৪৬]
আলী (আ.) বিভিন্ন সময়ে তার কথা ও ভাষ্যে সাকীফার ঘটনার প্রতিবাদ করেছেন এবং আল্লাহর নবির (স.) উত্তরাধিকারী হওয়া প্রসঙ্গে তার অধিকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। ‘[[শিকশিকিয়া]]’ নামক খুতবায় তিনি তিনি এই ঘটনা উল্লেখ করেছেন। খোতবার শুরুতে তিনি বলেন: আল্লাহর কসম! আবু কুহাফার পুত্র (আবুবকর) নিজে নিজেই তা (খেলাফতের রিদা) পরিধান করেছিল। নিশ্চিতভাবেই সে জানত যে, খেলাফতের বিষয়ে আমার অবস্থান যাতার কেন্দ্রিয় শলাকার ন্যায়। জ্ঞানের ধারা বানের পানির মত আমা হতে প্রবাহিত হয় এবং পাখি আমার স্থানের উচ্চতা পর্যন্ত উড়ে আসতে পারে না।...।’<ref>ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ১, পৃ. ১৫১।</ref>[[আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী|আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীর]] ভাষায়, সাকীফাসহ সমগ্র জীবনে হযরত আলীর (আ.) মানদণ্ড ছিল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন; কেবল ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থসিদ্ধ বিষয়গুলোকেই তিনি প্রাধান্য দিতেন ও বেছে নিতেন।[https://farsi.khamenei.ir/speech-content?id=2438/بیانات در خطبه‌های نمازجمعه, দাফতার-এ হেফয ওয়া নাশর হযরত আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী।]


অপর কিছু সূত্র মারফত জানা যায়, সাকিফার ঘটনার পর আলী (আ.) রাতের আঁধারে নবিকন্যা [[হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)|হজরত ফাতিমা যাহরাকে (সা. আ.)]] একটি সওয়ারিতে চড়িয়ে আনসারদের বাড়িতে বাড়িতে ও সভাস্থলে নিয়ে যেতেন এবং তাদের সহযোগিতা চাইতেন, এ সময় তারা উত্তরে বলত: হে নবিকন্যা! আমরা আবুবকরের নিকট বাইয়াত করেছি, যদি আলী এগিয়ে আসতেন তবে আমরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতাম না। আলী (আ.) উত্তরে বলতেন:  তবে কি আল্লাহর রাসূলের (স.) দাফনকার্য সম্পন্ন না করে খেলাফতের বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হতাম?<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৯-৩০; ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১৩।</ref>
অপর কিছু সূত্র মারফত জানা যায়, সাকিফার ঘটনার পর আলী (আ.) রাতের আঁধারে নবিকন্যা [[হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.)|হজরত ফাতিমা যাহরাকে (সা. আ.)]] একটি সওয়ারিতে চড়িয়ে আনসারদের বাড়িতে বাড়িতে ও সভাস্থলে নিয়ে যেতেন এবং তাদের সহযোগিতা চাইতেন, এ সময় তারা উত্তরে বলত: হে নবিকন্যা! আমরা আবুবকরের নিকট বাইয়াত করেছি, যদি আলী এগিয়ে আসতেন তবে আমরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতাম না। আলী (আ.) উত্তরে বলতেন:  তবে কি আল্লাহর রাসূলের (স.) দাফনকার্য সম্পন্ন না করে খেলাফতের বিষয়ে বিবাদে লিপ্ত হতাম?<ref>ইবনে কুতাইবাহ, আল-ইমামাতু ওয়াস সিয়াসাহ, ১৪১০ হি., খণ্ড ১, পৃ. ২৯-৩০; ইবনে আবিল হাদীদ, শারহে নাহজুল বালাগাহ, মাক্তাবাতু আয়াতুল্লাহিল মারআশি, খণ্ড ৬, পৃ. ১৩।</ref>
১২৬ নং লাইন: ১২৬ নং লাইন:
হযরত ফাতেমার (সা. আ.) বাড়িতে হামলা: আবুবকরের খেলাফতের সমর্থকদের থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, সাকীফার ঘটনা এবং ইমাম আলীসহ (আ.) বেশ কয়েকজন সাহাবা কর্তৃক আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, খলিফার সমর্থকরা হযরত আলী (আ.) থেকে বাইয়াত গ্রহণের উদ্দেশ্যে হযরত ফাতেমার (সা. আ.) গৃহে হামলা চালায়।[৬৫] ঐ হামলায় হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) যে আঘাত পেয়েছিলেন তাতেই তিনি শহীদ হন।<ref>তাবারী ইমামি, দালায়েলুল ইমামাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ১৩৪।</ref>
হযরত ফাতেমার (সা. আ.) বাড়িতে হামলা: আবুবকরের খেলাফতের সমর্থকদের থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে, সাকীফার ঘটনা এবং ইমাম আলীসহ (আ.) বেশ কয়েকজন সাহাবা কর্তৃক আবুবকরের হাতে বাইয়াত করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর, খলিফার সমর্থকরা হযরত আলী (আ.) থেকে বাইয়াত গ্রহণের উদ্দেশ্যে হযরত ফাতেমার (সা. আ.) গৃহে হামলা চালায়।[৬৫] ঐ হামলায় হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) যে আঘাত পেয়েছিলেন তাতেই তিনি শহীদ হন।<ref>তাবারী ইমামি, দালায়েলুল ইমামাহ, ১৪১৩ হি., পৃ. ১৩৪।</ref>


ফাদাক কেড়ে নেয়া: কিছু কিছু ইতিহাস বিশ্লেষক মনে করেন, সাকিফার ঘটনার পর ফাতিমা (সা. আ.) কাছ থেকে ফাদাক কেড়ে নেয়া ছিল মূলতঃ আহলে বাইতের (আ.) উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির নিমিত্তে। এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন আবুবকরের সরকারের ভিতকে মজবুত করত, অপরদিকে আল্লাহর রাসূলের (স.) আহলে বাইতের (আ.) পক্ষ থেকে বিরোধিতা ও সংগ্রামের পথকেও রুদ্ধ করে দিত।[৬৭]
ফাদাক কেড়ে নেয়া: কিছু কিছু ইতিহাস বিশ্লেষক মনে করেন, সাকিফার ঘটনার পর ফাতিমা (সা. আ.) কাছ থেকে ফাদাক কেড়ে নেয়া ছিল মূলতঃ আহলে বাইতের (আ.) উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টির নিমিত্তে। এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন আবুবকরের সরকারের ভিতকে মজবুত করত, অপরদিকে আল্লাহর রাসূলের (স.) আহলে বাইতের (আ.) পক্ষ থেকে বিরোধিতা ও সংগ্রামের পথকেও রুদ্ধ করে দিত।<ref>আসকারী, সাকীফা: বাররাসি নাহভে শেকলগিরি হুকুমাত পাস আয রেহলাত পায়াম্বার, ১৩৮৭ ফার্সি সন, পৃ. ১১৫।</ref>


সাকীফার সিদ্ধান্তে মুনাফিকদের সমর্থন: আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি’র ভাষ্যানুযায়ী, আল্লাহর রাসূলের (স.) ওফাতের পর মদিনার মুনাফিকদের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতারও সমাপ্তি ঘটে। বিষয়টির বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, একদিনেই তো মুনাফিকরা হারিয়ে যায় নি, আবার তারা তো সালমান ও আবুযারের মত মু’মিনও হয়ে যায় নি; বরং তারা আহলে সাকীফার সাথে সমঝোতা করে নেয়, আর এ কারণে সাকীফার শুরা অনুষ্ঠিত হওয়ার (ও সরকার গঠনের) পর মদিনায় আর কোন মুনাফিক ছিল না।[৬৮]
সাকীফার সিদ্ধান্তে মুনাফিকদের সমর্থন: আয়াতুল্লাহ জাওয়াদি আমুলি’র ভাষ্যানুযায়ী, আল্লাহর রাসূলের (স.) ওফাতের পর মদিনার মুনাফিকদের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতারও সমাপ্তি ঘটে। বিষয়টির বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তিনি বলেছেন, একদিনেই তো মুনাফিকরা হারিয়ে যায় নি, আবার তারা তো সালমান ও আবুযারের মত মু’মিনও হয়ে যায় নি; বরং তারা আহলে সাকীফার সাথে সমঝোতা করে নেয়, আর এ কারণে সাকীফার শুরা অনুষ্ঠিত হওয়ার (ও সরকার গঠনের) পর মদিনায় আর কোন মুনাফিক ছিল না।[৬৮]
confirmed, templateeditor
১,৯৬২টি

সম্পাদনা