বিষয়বস্তুতে চলুন

হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

১৯৭ নং লাইন: ১৯৭ নং লাইন:
হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনার পর কুরাইশের আক্রমন থেকে মহানবি (সা.) কিছুটা নিশ্চিন্তে ছিলেন। [[৭ম হিজরী]]তে মহানবি (সা.) পার্শ্ববর্তী রাজত্বগুলোর শাসক ও রাজাদেরকে দাওয়াত প্রদানের মনস্থ করলেন। এরপর তিনি পূর্ব [[রোম সম্রাট|রোমের সম্রাট]], [[ইরান]] শাহানশাহ খসরু পারভেজ, আবিসিনিয়ার বাদশা [[নাজ্জাশি]], [[ইয়ামামা]]র গভর্নর এবং [[দামেস্ক|দামেস্কের]] গভর্নরসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় চিঠি পাঠিয়ে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন।<ref>তাবারি, তারিখুত তাবারি, দারুত তুরাস, খণ্ড ২, পৃ. ৬৪৪ এর পর।</ref>
হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনার পর কুরাইশের আক্রমন থেকে মহানবি (সা.) কিছুটা নিশ্চিন্তে ছিলেন। [[৭ম হিজরী]]তে মহানবি (সা.) পার্শ্ববর্তী রাজত্বগুলোর শাসক ও রাজাদেরকে দাওয়াত প্রদানের মনস্থ করলেন। এরপর তিনি পূর্ব [[রোম সম্রাট|রোমের সম্রাট]], [[ইরান]] শাহানশাহ খসরু পারভেজ, আবিসিনিয়ার বাদশা [[নাজ্জাশি]], [[ইয়ামামা]]র গভর্নর এবং [[দামেস্ক|দামেস্কের]] গভর্নরসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় চিঠি পাঠিয়ে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন।<ref>তাবারি, তারিখুত তাবারি, দারুত তুরাস, খণ্ড ২, পৃ. ৬৪৪ এর পর।</ref>


=মক্কা বিজয়=
==মক্কা বিজয়==
হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তির একটি ধারা ছিল যে কোন গোত্র মুসলমান বা কুরাইশদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবে। খাযাআহ গোত্র মহানবির (সা.) সাথে এবং বনু বাকর কুরআইশের সাথে চুক্তি করে। ৮ম হিজরীতে বনু বাকর এবং খাযাআহ গোত্রের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে বনু বাকরের পক্ষ নিয়ে কুরাইশ তাদেরকে সহযোগিতা করে। কুরাইশ মহানবির (সা.) সাথে চুক্তিবদ্ধ গোত্রের সাথে সংঘাতে জড়ানোর কারণে হুদায়বিয়ার চুক্তি ভেঙ্গে যায়। এই ধৃষ্টতা জবাবহীন থাকবে না বিষয়টি বুঝতে পেরে আবু সুফিয়ান নতুন করে চুক্তি করার লক্ষ্যে মদিনায় যায়, কিন্তু তাতে কোন ফল হয়নি।
হুদায়বিয়ার সন্ধিচুক্তির একটি ধারা ছিল যে কোন গোত্র মুসলমান বা কুরাইশদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবে। [[খাযাআহ]] গোত্র মহানবির (সা.) সাথে এবং [[বনু বাকর]] কুরাইশের সাথে চুক্তি করে। ৮ম হিজরীতে বনু বাকর এবং খাযাআহ গোত্রের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে বনু বাকরের পক্ষ নিয়ে কুরাইশ তাদেরকে সহযোগিতা করে। কুরাইশ মহানবির (সা.) সাথে চুক্তিবদ্ধ গোত্রের সাথে সংঘাতে জড়ানোর কারণে হুদায়বিয়ার চুক্তি ভেঙ্গে যায়। এই ধৃষ্টতা জবাবহীন থাকবে না বিষয়টি বুঝতে পেরে আবু সুফিয়ান নতুন করে চুক্তি করার লক্ষ্যে মদিনায় যায়, কিন্তু তাতে কোন ফল হয়নি।
মহানবি (সা.) ৮ম হিজরীতে ১০ হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলেন। মুসলিম বাহিনীর মক্কা অভিমুখে রওনা হওয়ার তথ্য যেন মদিনার বাইরে না ছড়ায় এ জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করলেন।  মুসলিম বাহিনী ‘মুর আয-যুহরান’ নামক স্থানে পৌঁছালে রাসূলের (সা.) চাচা আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব রাতের আঁধারে তাবু থেকে বের হয়ে মক্কার কোন লোকের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেন, উদ্দেশ্য মক্কায় এ বার্তা পৌঁছানো যে, ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে যেন কুরাইশ মহানবির (সা.) কাছে পৌঁছায়। ঐ রাতে তার আবু সুফিয়ানের সাথে দেখা হল এবং তিনি তাকে আশ্রয় দিয়ে মহানবির (সা.) কাছে নিয়ে এলেন। আবু সুফিয়ান মুসলমান হল। পরবর্তী দিন মহানবি (সা.) নির্দেশ দিলেন আবু সুফিয়ানকে এমন স্থানে রাখতে যেখান থেকে সে মুসলিম বাহিনীর প্রস্থান প্রত্যক্ষ করতে পারে। মুসলিম বাহিনীর বিশালতা ও ক্ষমতা দেখে হতবিহ্বল আবু সুফিয়ান আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবকে বলল: তোমার ভ্রাতুষ্পুত্রের রাজত্ব তো আরও বড় হয়েছে! আব্বাস বললেন: আক্ষেপ তোমার উপর! এটা রাজত্ব নয়, নবুয়্যতের প্রভাব। সে বলল: হ্যাঁ ঠিক তাই! আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব মহানবিকে (সা.) বললেন: আবু সুফিয়ান পছন্দ করে তাকে কোন বিষয়ে (মক্কার জনগনের তুলনায়) প্রাধান্য দেওয়া হোক। মহানবি (সা.) বললেন: (মুসলিম বাহিনীর মক্কায় উপস্থিতির সময়) যে নিজ গৃহে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেবে সে নিরাপদ থাকবে। একইভাবে যে আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে সেও নিরাপদ থাকবে। যে মসজিদুল হারামে আশ্রয় নেবে সেও নিরাপত্তা পাবে। বিশাল মুসলিম বাহিনী ধীরে ধীরে মক্কায় প্রবেশ করল।  
মহানবি (সা.) ৮ম হিজরীতে ১০ হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কার উদ্দেশ্যে বের হলেন। মুসলিম বাহিনীর মক্কা অভিমুখে রওনা হওয়ার তথ্য যেন মদিনার বাইরে না ছড়ায় এ জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করলেন।  মুসলিম বাহিনী ‘[[মুর আয-যুহরান]]’ নামক স্থানে পৌঁছালে রাসূলের (সা.) চাচা [[আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব]] রাতের আঁধারে তাবু থেকে বের হয়ে মক্কার কোন লোকের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেন, উদ্দেশ্য মক্কায় এ বার্তা পৌঁছানো যে, ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে যেন কুরাইশ মহানবির (সা.) কাছে পৌঁছায়। ঐ রাতে তার আবু সুফিয়ানের সাথে দেখা হল এবং তিনি তাকে আশ্রয় দিয়ে মহানবির (সা.) কাছে নিয়ে এলেন। আবু সুফিয়ান মুসলমান হল। পরবর্তী দিন মহানবি (সা.) নির্দেশ দিলেন আবু সুফিয়ানকে এমন স্থানে রাখতে যেখান থেকে সে মুসলিম বাহিনীর প্রস্থান প্রত্যক্ষ করতে পারে। মুসলিম বাহিনীর বিশালতা ও ক্ষমতা দেখে হতবিহ্বল আবু সুফিয়ান আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবকে বলল: তোমার ভ্রাতুষ্পুত্রের রাজত্ব তো আরও বড় হয়েছে! আব্বাস বললেন: আক্ষেপ তোমার উপর! এটা রাজত্ব নয়, নবুয়্যতের প্রভাব। সে বলল: হ্যাঁ ঠিক তাই! আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব মহানবিকে (সা.) বললেন: আবু সুফিয়ান পছন্দ করে তাকে কোন বিষয়ে (মক্কার জনগনের তুলনায়) প্রাধান্য দেওয়া হোক। মহানবি (সা.) বললেন: (মুসলিম বাহিনীর মক্কায় উপস্থিতির সময়) যে নিজ গৃহে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেবে সে নিরাপদ থাকবে। একইভাবে যে আবু সুফিয়ানের বাড়িতে আশ্রয় নেবে সেও নিরাপদ থাকবে। যে মসজিদুল হারামে আশ্রয় নেবে সেও নিরাপত্তা পাবে। বিশাল মুসলিম বাহিনী ধীরে ধীরে মক্কায় প্রবেশ করল।  


ইবনে ইসহাকের উদ্ধৃতিতে ইবনে হিশাম বর্ণনা করেছেন: খাযরাজ গোত্র প্রধান সায়াদ বিন উবাদাহ মক্কায় পৌঁছে বলল: আজ হত্যাযজ্ঞের দিন! আজ সম্মান নষ্ট হওয়ার দিন। সায়াদ তার ধারণায় কুরাইশ বা আদনানি গোত্র থেকে প্রতিশোধ নিতে এবং এর মাধ্যমে কুরাইশ ও মক্কার জনগণ থেকে ইয়াসরিব ও মদিনার লোকদের অধিকারও আদায় করতে চেয়েছিলেন। এই ধরনের চিন্তা যেন মুসলমানদের মনে না আসে এবং ইসলামি বিজয় গোত্রীয় বিদ্বেষ হিসেবে সাব্যস্ত না হয়, এ কারণে মহানবি (সা.) হযরত আলীকে (আ.) পাঠলেন সায়াদের কাছ থেকে পতাকা নিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়ে, তিনি বললেন: আজ রহমতের দিন।  
[[ইবনে ইসহাক|ইবনে ইসহাকের]] উদ্ধৃতিতে ইবনে হিশাম বর্ণনা করেছেন: খাযরাজ গোত্র প্রধান [[সায়াদ বিন উবাদাহ]] মক্কায় পৌঁছে বলল: আজ হত্যাযজ্ঞের দিন! আজ সম্মান নষ্ট হওয়ার দিন। সায়াদ তার ধারণায় কুরাইশ বা আদনানি গোত্র থেকে প্রতিশোধ নিতে এবং এর মাধ্যমে কুরাইশ ও মক্কার জনগণ থেকে [[ইয়াসরিব]] ও মদিনার লোকদের অধিকারও আদায় করতে চেয়েছিলেন। এই ধরনের চিন্তা যেন মুসলমানদের মনে না আসে এবং ইসলামি বিজয় গোত্রীয় বিদ্বেষ হিসেবে সাব্যস্ত না হয়, এ কারণে মহানবি (সা.) হযরত আলীকে (আ.) পাঠলেন সায়াদের কাছ থেকে পতাকা নিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়ে, তিনি বললেন: আজ রহমতের দিন।  


মুসলমান এবং মক্কার জনগণের মাঝে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ছাড়া বড় কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। মহানবি (সা.) মসজিদুল হারামে প্রবেশ করলেন এবং আরোহনরত অবস্থায় ৭ বার কা’বাগৃহ তাওয়াফ করলেন। অতঃপর কা’বার দরজায় দাঁড়িয়ে বললেন:  
মুসলমান এবং মক্কার জনগণের মাঝে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ছাড়া বড় কোন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। মহানবি (সা.) মসজিদুল হারামে প্রবেশ করলেন এবং আরোহনরত অবস্থায় ৭ বার কা’বাগৃহ [[তাওয়াফ]] করলেন। অতঃপর কা’বার দরজায় দাঁড়িয়ে বললেন:  


«لا اله الا الله وحده لا شریک له صدق وعده و نصر عبده و هزم الاحزاب وحده»
<center>«لا اله الا الله وحده لا شریک له صدق وعده و نصر عبده و هزم الاحزاب وحده»
 
</center>
জনগণ কা’বার খেদমত এবং হাজীদেরকে পানি দেওয়া ছাড়া সকল পদ ও পদবীকে উপেক্ষা করল। মহানবি (সা.) ২ সপ্তাহ মক্কায় অবস্থান করলেন। এ সময় তিনি মক্কা শহর পরিচালনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজকর্ম গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করলেন। এছাড়া কিছু লোককে মক্কার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে পাঠালেন মূর্তির ঘরগুলো ভেঙ্গে দিতে। হযরত আলীর (আ.) সহযোগিতায় তিনি কা’বার ভেতরে থাকা সকল মূর্তিও ভেঙ্গে ফেললেন।  
জনগণ [[কা’বা]]র খেদমত এবং হাজীদেরকে পানি দেওয়া ছাড়া সকল পদ ও পদবীকে উপেক্ষা করল। মহানবি (সা.) ২ সপ্তাহ মক্কায় অবস্থান করলেন। এ সময় তিনি মক্কা শহর পরিচালনা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজকর্ম গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করলেন। এছাড়া কিছু লোককে মক্কার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে পাঠালেন মূর্তির ঘরগুলো ভেঙ্গে দিতে। হযরত আলীর (আ.) সহযোগিতায় তিনি কা’বার ভেতরে থাকা সকল মূর্তিও ভেঙ্গে ফেললেন।  


মক্কার জনগণের বিষয়ে মহানবির (সা.) আচরণ ইসলামের সহনশীলতা ও মহানবির (সা.) মহত্বকে মানুষের সামনে আরও স্পষ্ট করে দিল। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মহানবি (সা.) ও তাঁর অনুসারীদের উপর যেকোন ধরনের অমানবিক পদক্ষেপ নিতে পিছপা না হওয়া কুরাইশ ভয়ে ছিল, তিনি তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করবেন। যখন তারা তাঁর (সা.) মুখ থেকে শুনতে পেল যে, তিনি বলেছেন: তোমাদের সকলকে মুক্ত করলাম। তখন তারা আশ্বস্ত হল।<ref>শাহিদি, তারিখে তাহলিলিয়ে ইসলাম, ১৩৯০ সৌরবর্ষ, পৃ. ৯৪-৯৫।</ref>
মক্কার জনগণের বিষয়ে মহানবির (সা.) আচরণ ইসলামের সহনশীলতা ও মহানবির (সা.) মহত্বকে মানুষের সামনে আরও স্পষ্ট করে দিল। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে মহানবি (সা.) ও তাঁর অনুসারীদের উপর যেকোন ধরনের অমানবিক পদক্ষেপ নিতে পিছপা না হওয়া কুরাইশ ভয়ে ছিল, তিনি তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করবেন। যখন তারা তাঁর (সা.) মুখ থেকে শুনতে পেল যে, তিনি বলেছেন: তোমাদের সকলকে মুক্ত করলাম। তখন তারা আশ্বস্ত হল।<ref>শাহিদি, তারিখে তাহলিলিয়ে ইসলাম, ১৩৯০ সৌরবর্ষ, পৃ. ৯৪-৯৫।</ref>
Automoderated users, confirmed, templateeditor
১,৭৬৭টি

সম্পাদনা