বায়াতে রিদওয়ানের আয়াত

wikishia থেকে
বায়াতে রিদওয়ানের আয়াত
আয়াতের নামবায়াতে রিদওয়ানের আয়াত
সূরার নামসূরা ফাতহ্
আয়াত নম্বর১৮
পারা নম্বর২৬
বিষয়আকাইদ
প্রসঙ্গবায়াতে রিদওয়ান
সংশ্লিষ্ট আয়াতসূরা ফাতহ্: ১০


বায়াতে রিদওয়ানের আয়াত (আরবি: آية بيعة الرضوان; সূরা ফাতাহ: ১৮); বায়াতে রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী মুমিনদের উপর মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির বার্তা বহন করে। সুন্নী আলেমগণ সাহাবাদের ন্যায়পরায়ণতা মতবাদ প্রমাণ করার জন্য এই আয়াতটি ব্যবহার করেন; কিন্তু শিয়া মুফাসসিররা বিশ্বাস করেন যে এই আয়াত অনুসারে সাহাবাদের উপর আল্লাহর সন্তুষ্টি দ্বীনের পথে তাঁদের অটল অবস্থান এবং সাহাবী হওয়ার বৈশিষ্ট্য সমুহ মেনে চলার শর্তযুক্ত এবং শুধুমাত্র সেই সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত করে যারা তাদের প্রতিশ্রুতির প্রতি অঙ্গিকারবদ্ধ ছিলেন।

শিয়া মুফাসসিরদের মতে, এই আয়াতের পর সূরা ফাতাহ-এর ১০ নং আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে এবং এতে আল্লাহ্‌ নবী (সাঃ) এর আদেশের আনুগত্য করা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ না করাকে মুমিনদের উপর তাঁর সন্তুষ্টির শর্ত করেছেন। বায়াতে রিদওয়ানে আয়াত অনুসারে, মহান আল্লাহ বায়াতে রিদওয়ানে মহানবী (সা.)-এর হাতে বায়াতকারী আত্মত্যাগী মুমিনদেরকে মহান পুরষ্কার দিয়েছেন; যেমন- তাদের উপর মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, শান্তি এবং আসন্ন বিজয়ের সুসংবাদ। এছাড়াও, পরবর্তী আয়াতে, তিনি প্রচুর যুদ্ধলব্ধ মালের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, যা মুফাসসিরদের মতে খায়বারের যুদ্ধে হস্তগত হয়েছিল।

নামকরণ ও গুরুত্ব

সূরা ফাতাহ এর ১৮তম আয়াত, যেখানে বায়াতে রিদওয়ানে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে, তাকে " বায়াতে রিদওয়ানে আয়াত" বা " বায়াতের আয়াত" বলা হয়। সুন্নী আলেমগণ সকল সাহাবীর আদালত বা ন্যায়পরায়ণতা প্রমাণের জন্য এই আয়াতটি উল্লেখ করে থাকে।

টেক্সট ও অনুবাদ

لَّقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنِينَ إِذْ يُبَايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ مَا فِي قُلُوبِهِمْ فَأَنزَلَ السَّكِينَةَ عَلَيْهِمْ وَأَثَابَهُمْ فَتْحًا قَرِيبًا


অর্থ: আল্লাহ মুমিনদের প্রতি সন্তুষ্ট হলেন, যখন তারা বৃক্ষের নীচে আপনার কাছে শপথ করল। আল্লাহ অবগত ছিলেন যা তাদের অন্তরে ছিল। অতঃপর তিনি তাদের প্রতি প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাদেরকে আসন্ন বিজয় পুরস্কার দিলেন।



সূরা ফাতাহ: ৪০


বায়াতে রিদওয়ান

বায়াতে রিদওয়ান বা বায়াতে শাজারা হল নবী (সাঃ) এর সাথে একদল সাহাবীর একটি শপথ যা মক্কার নিকটবর্তী অঞ্চলে ষষ্ঠ হিজরীতে করা হয়েছিল। আস-সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ গ্রন্থ প্রণেতা ইতিহাসবিদ ইবনে হিশামের (হিজরী তৃতীয় শতক) মতে, এই ঘটনায় নবী (সা.) ওমরাহর জন্য বেশ কয়েকজন সাহাবীর সাথে মদিনা ত্যাগ করেন। কিন্তু কুরাইশের মুশরিকরা তাদেরকে মক্কায় প্রবেশে বাঁধা দেয়।

মহানবী (সা.) ও কুরাইশ মুশরিকদের মধ্যে দূত মারফত কথোপকথন হয়। কুরাইশদের দ্বারা রাসূল (সা.)-এর একজন দূতকে হত্যা করা হয়েছে এমন গুজবের কারণে মহানবী সাহাবায়ে কেরামকে বায়াত গ্রহণের আহ্বান করেন এবং তাঁরা তাঁদের জীবন দিয়ে নবীকে রক্ষা করার জন্য বায়াত করেছিলেন। এই ঘটনাটি শেষ পর্যন্ত হুদায়বিয়ার সন্ধির দিকে পরিচালিত করে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে মুসলমানরা এই বছর হজ না মদিনায় ফিরে যাবে এবং পরের বছর আল্লাহর ঘর যিয়ারত করার জন্য মক্কায় আসবে।

বিষয়বস্তু; বায়াতকারীদের পুরস্কার

এই আয়াতে রাসূল (সঃ)-এর প্রতি বায়াতকারী মুমিনদের প্রতি আল্লাহ্‌ তাঁর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। রাসুল (সাঃ) একটি সংকটময় মুহূর্তে দিয়েছেন। এই আয়াত অনুসারে, আল্লাহ্‌ আত্মত্যাগী মুমিনদের তিনটি মহান পুরষ্কার দিয়েছেন যারা একটি সংকটময় মুহূর্তে নবী (সা.)-এর প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছিলেন- ১, তাদের উপর মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি, ২, মানসিক প্রশান্তি: তিনি তাদের উপর এমন মানসিক প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন যে, স্বদেশ থেকে দূরবর্তী স্থানে শত্রুদের ভিড়ের মধ্যে, তাদের নাঙ্গা তলোয়ারের সামনেও, তারা তাদের হৃদয়ে বিন্দু মাত্র ভয় ঢুকতে দেয়নি, তাদের কাছে যথেষ্ট অস্ত্র না থাকলেও তারা পাহাড়ের মত দৃঢ় ও শক্ত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ৩, আসন্ন বিজয়ের সুসংবাদ: অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, এই আসন্ন বিজয়টি ছিল খাইবার বিজয় এবং এই ব্যাখ্যাটিই সবচেয়ে নিকটবর্তী। কেননা, হুদায়বিয়ার সন্ধির কয়েক মাস পর সপ্তম হিজরীর শুরুতে খায়বার বিজয় হয়েছিল। এছাড়াও, পরবর্তী আয়াতের... বাক্যাংশটি সেই যুদ্ধলব্ধ মালকে নির্দেশ করে যা অল্প কিছু সময় পর খাইবার বিজয়ের মাধ্যমে মুসলমানদের হস্তগত হয়েছিল।

সাহাবিদের ন্যায়পরায়ণতা প্রমাণে এ আয়াতের যথার্থতা

কিছু সুন্নী আলেম এই আয়াতটিকে সকল সাহাবীর আদালত বা ন্যায়পরায়ণতার প্রমাণ বলে মনে করেন। তাদের মতে, মহান আল্লাহ এ আয়াতে সাহাবিদের ‍উপর তাঁর সন্তুষ্ট থাকার কথা ঘোষণা করেছেন এবং আল্লাহ যার প্রতি সন্তুষ্ট হন কখনো তার প্রতি রাগান্বিত হন না। শিয়া আলেমদের মতে, এই আয়াতটি সকল সাহাবির আদালত বা ন্যায়পরায়ণতার প্রতি নির্দেশ করে না; কেননা এ আয়াতে কেবলমাত্র সেই সব সাহাবিকে বোঝানো হয়েছে যারা বায়াতে রিদওয়ানে উপস্থিত ছিলেন এবং কৃত অঙ্গীকারের উপর অটল ছিলেন, সকল সাহাবীকে বোঝানো হয়নি। এছাড়াও, সমস্ত সাহাবির ন্যায়পরায়ণতার বিষয়টি সূরা আত-তাওবার ১০১ নং আয়াতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়; কারণ উল্লেখিত আয়াতে কতিপয় সাহাবিকে মুনাফিক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। শিয়া মুফাসসিরগণ আয়াতের মহান আল্লাহর সন্তুষ্টিকে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণের উপর অটলতাকে শর্তযুক্ত বলে মনে করেন। তাফসির কুম্মীর লেখক আলী ইবনে ইব্রাহীম কুম্মীর মতে, এই আয়াতের পরে সূরা ফাতহ্-এর ১০ নং আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে এবং মহান আল্লাহ এতে মুমিনদের প্রতি তার সন্তুষ্টিকে মহানবী (সা.)-এর আদেশ মান্য করা এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ না করার উপর শর্ত করেছেন।

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

{{গ্রন্থপঞ্জি}