বাবুল হাওয়ায়েজ

wikishia থেকে

বাবুল হাওয়ায়েজ (আরবি: باب الحوائج); এমন ব্যক্তিকে বলা হয় যার শরণাপন্ন হলে বা যাকে মাধ্যম বানিয়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করলে যেকোন প্রয়োজন পূরণ হয় বা যেকোন সমস্যার সমাধান হয়। বাবুল হাওয়ায়েজ হল ইমাম কাযিম (আ.), হযরত আব্বাস (আ.) এবং আলী আসগর (আ.)-এর উপাধিগুলির মধ্যে একটি; কারণ শিয়া সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে এই তিন ব্যক্তিকে মাধ্যম বানালে বা শরণাপন্ন হলে তাদের প্রয়োজন ও চাহিদাগুলো পূরণ হয়।

কার উপাধি?

শিয়া অভিধানগুলোতে বাবুল হাওয়ায়েজ উপাধিটি শিয়াদের সপ্তম ইমাম মুসা বিন জাফর (আঃ)[১], কারবালার অন্যতম শহীদ আব্বাস বিন আলী (আঃ) এবং আলী আসগার[২] (ইমাম হোসাইনের দুগ্ধপোষ্য সন্তান যিনি কারবালায় শহীদ হয়েছেন) এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। মোহাম্মদ আলী উর্দুবাদী (মৃত্যু: ১৩৮০ হিঃ) হযরত আব্বাসের জীবনী গ্রন্থে তাঁর ক্ষেত্রে এই উপাধির প্রসিদ্ধির বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।[৩] শিয়া মুজতাহিদ মুজতাবা তেহরানী এই তিনজন ছাড়াও ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কন্যা রুকাইয়্যাকেও বাবুল হাওয়ায়েজ উপাধির অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

এই উপাধিতে ভূষিত হওয়ার কারণ

শিয়াদের সপ্তম ইমামের জন্য বাবুল হাওয়ায়েজ উপাধির ব্যবহারের ক্ষেত্রে হাদীস ভিত্তিক কোনো উৎস নেই। ইবনে শাহর আশুব (মৃত্যু ৫৮৮হিঃ) মানাকিবে আলে আবি তালিব গ্রন্থে ইমাম কাযিম (আ.)-কে বাগদাদে কুরাইশদের কবরস্থানে দাফন করার পর "বাবে তিন" নামক প্রবেশদ্বারকে পরিবর্তন করে " বাবুল হাওয়ায়েজ " নাম রাখা হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন।[৪]

এছাড়াও, সুন্নি পণ্ডিতদের অন্যতম ইবনে হাজার হাইতামীর (মৃত্যু ৯৭৪ হিজরি) বর্ণনা মতে, , ইমাম কাযিম (আ.) ইরাকবাসীদের কাছে মহান আল্লার নিকট নিজেদের দোয়া-প্রার্থণা কবুলের দ্বার হিসেবে খ্যাত ছিলেন।[৫] শাফেয়ী পণ্ডিত শাবলাঞ্জিও ইমাম কাযিম (আ.) কে এই উপাধিতে ভূষিত করেছন এজন্য যে মানুষ তাঁর শরণাপন্ন হয়ে বা তাঁকে মাধ্যম বানিয়ে নিজেদের প্রয়োজন ও চাহিদাগুলো পূরণ করে। [৬] শিয়া বিশ্বকোষ অনুসারে, সুন্নি এবং শিয়ারা তাদের প্রয়োজন ও চাহিদা পূরণের জন্য ইমাম কাযিম (আ.)-এর রওজায় উপস্থিত হয় এবং তাঁকে প্রার্থণা কবুলের মাধ্যম বানায়।[৭]

তথ্যসূত্র

  1. দেহখোদা, লুগাতনামা।
  2. মুহাদ্দেসী, ফারহাঙ্গে আশুরা, পৃষ্ঠ নং-৩৪৮
  3. উর্দুবাদী, মুহাম্মদ আলী, হায়াতু আবিল ফাযলিল আব্বাস, ১৪৩৬ হিঃ, পৃষ্ঠ নং-১৩৩।
  4. ইবনে শাহর অশুব, মানাকিবে আলে আবি তালিব, ১৩৭৬ হিঃ, ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৪৩৮।
  5. ইবনে হাজার হাইতামী, আস্সাওয়ায়িকুল মুহরিকাতু ফি আর্-রাদ্দি আলা আহলিল বিদায়ী ওয়া আয-যান্দকাতি, মাকতাবাতুল কাহিরাতু, পৃষ্ঠা নং-২০৩।
  6. শাবলাঞ্জি, নুরুল আবছার, আশ্-শারিফুর রাযা, পৃষ্ঠা নং-৩৩১।
  7. শাহিদী, আব্দুল হোসাইন, বাবুল হাওয়ায়েজ, পৃষ্ঠা নং-১১।

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইবনে হাজার হাইতামী, আস্সাওয়ায়িকুল মুহরিকাতু ফি আর্-রাদ্দি আলা আহলিল বিদায়ী ওয়া আয-যান্দকাতি, মাকতাবাতুল কাহিরাতু, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
  • ইবনে শাহর অশুব, মুহাম্মদ ইবনে আলী, মানাকিবে আলে আবি তালিব, নাজাফ, মাতবায়াতুল হায়দারিয়্যাহ, ১৩৭৬ হিঃ।
  • উর্দুবাদী, মুহাম্মদ আলী, হায়াতু আবিল ফাযলিল আব্বাস, মুয়াস্সাসাতুল আল্লামা আল-উর্দুবাদী, দারুল কাফিল, কারবালা, ১৪৩৬ হিঃ।
  • আনওয়ারী, হাসান, ফারহাঙ্গে বুজুর্গে সুখান, তেহরান, ইন্তেশারাতে সুখান, ১৩৯০ (সৌরবর্ষ)।
  • দেহখোদা, আলী আকবার, লুগাতনামা।
  • শাবলাঞ্জি, মুমিন বিন হাসান, নুরুল আবছার ফি মানাকেবে আলি বাইতিন্ নাবী (আ.), কোম, আশ্-শারিফুর রাযা, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
  • শাহিদী, আব্দুল হোসাইন, বাবুল হাওয়ায়েজ, তেহরান, ইন্তেশারাতে হেকমাত, ১৩৯০ (সৌরবর্ষ)।
  • মুহাদ্দেসী, জাওয়াদ, ফারহাঙ্গে আশুরা, কোম, নাশরে মারুফ, ১৩৮৮ (সৌরবর্ষ)।