নামাযের রুকনসমূহ
- (নিবন্ধটি ফিকাহ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের সংজ্ঞা ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিয়ে রচিত, ধর্মীয় আমলের মানদণ্ড নয়। আমলের লক্ষ্যে অন্য সূত্রের শরণাপন্ন হোন।)
নামাযের রুকন বা স্তম্ভ হল (আরবি: أركان الصلاة); নামাযের এমন কতিপয় ওয়াজিব কাজ যা ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে হ্রাস বা বৃদ্ধি হলে নামায বাতিল হয়ে যায়। প্রসিদ্ধ শিয়া মুজতাহিদদের মতানুযায়ী নামাযের রুকন হল নিম্নরূপ- নিয়্যাত, কিয়াম, তাকবীরাতুল ইহরাম, রুকু এবং দুটি সিজদা।
সংজ্ঞা
রুকন অর্থ যেকোন কিছুর ভিত্তি ও স্তম্ভ এবং ধর্মীয় ইবাদাতের ক্ষেত্রে এটি এমন একটি বিষয় যা ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে হ্রাস বা বৃদ্ধি হলে ইবাদতকে বাতিল করে দেয়।[১] নামাজ, হজ ও উমরাহর কিছু অংশকে তাদের রুকন বা স্তম্ভ হিসেবে গণ্য হয়।[২]
নামাযের রুকনসমূহ
প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী নামাজের রুকন বা স্তম্ভগুলো হলো: নিয়্যাত, কিয়াম, তাকবীরাতুল ইহরাম, রুকু ও দুটি সিজদা।[৩] নিয়্যাত বলতে যা বোঝায় তা হলো আল্লাহর হুকুম পূরণ ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নামাজ আদায় করা। নিয়্যাত মুখে উচ্চারণ করা জরুরী নয়।[৪] কিয়াম দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, তাকবীরাতুল ইহরাম বলার সময় এবং রুকুতে যাওয়ার পূর্বে দাঁড়ানো।[৫] অতীতের কিছু মুজতাহিদ নামাজের সময় কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ানোকে নামাযের রুকন বলে মনে করতেন[৬] এবং কেউ কেউ নামাযে ক্বিরাত বা হামদ ও সূরা পড়াকে রুকন হিসাবে বিবেচনা করতেন।[৭]
হ্রাস বা বৃদ্ধি
প্রসিদ্ধ মুজতাহিদগণের মতে, ইচ্ছাকৃতভাবে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে নামাযের রুকনের হ্রাস বা বৃদ্ধি নামাযকে বাতিল করে দেয়।[৮] তবে, কেউ কেউ মনে করেন যে অনিচ্ছাকৃতভাবে একটি রুকনের বৃদ্ধি নামাযকে বাতিল করে না।[৯] মুজতাহিদদের মতে, যদি নামায আদায়কারী ব্যক্তি নামাজের কোন একটি রুকন ভুলে যায়, তবে পরবর্তী রুকনে প্রবেশ না করে থাকলে তাকে অবশ্যই তা আদায় করতে হবে।[১০]
তথ্যসূত্র
- ↑ নাজাফী, জাওয়াহেরুল কালাম, খণ্ড-৯ম, পৃষ্ঠা নং-২৩৯, ১৩৬২ হিঃ।
- ↑ খোমিনী, তাহরিরুল ওয়াসিলা, মুয়াসসেসেয়ে তানযিমে আসার ও নাশরে ইমাম খোমিনী (র.), ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-১৫৩।
- ↑ হিল্লি, মুখতালাফুশ্ শিয়াতি ফি আহকামিশ্ শারিয়াতী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-১৩৯-১৪০, ১৪১২ হিঃ।
- ↑ তাবাতাবায়ী ইয়াজদী, আল্-উরওয়াতুল উসকা, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৪৩৪, ১৪১৯ হিঃ।
- ↑ তাবাতাবায়ী ইয়াজদী, আল্-উরওয়াতুল উসকা, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৪৭৩, ১৪১৯ হিঃ।
- ↑ ইবনে হামযাহ তূসী, আল-ওয়াসিলাতু ইলা নাইুলিল ফাদিলাহ, পৃষ্ঠা নং-৯৩, ১৪০৮ হিঃ।
- ↑ তূসী, আল্-মাবসুতু ফি ফিকহিল ইমামিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-১০৫।
- ↑ শাহীদ সানী, আ্-রাওযাতুল বাহিয়্যাতু ফি শারহিল লুমাতিদ্ দামেশকিয়্যাহ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৬৪৪।
- ↑ নাজাফী, জাওয়াহেরুল কালাম, ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২৩৯-২৪১, ১৩৬২ হিঃ।
- ↑ নাজাফী, জাওয়াহেরুল কালাম, ১২ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২৩৮-২৩৯, ১৩৬২ হিঃ।
গ্রন্থপঞ্জি
- ইবনে হামযাহ তূসী, মুহাম্মাদ বিন আলী, আল-ওয়াসিলাতু ইলা নাইুলিল ফাদিলাহ, তাহকিক মুহাম্মাদ আল-হাসুন, কোম, মাকতাবাতু আয়াতুল্লাহ মারাশী নাজাফী, ১৪০৮ হিঃ।
- হিল্লি, হসান বিন ইউসুফ, মুখতালাফুশ্ শিয়াতি ফি আহকামিশ্ শারিয়াতী, মারকাযুল ইবহাসু ওয়াত্ দিরাসাতু ইসলামিয়্যাহ, কোম, দাফতারে তাবলিগাতে ইসলামী, ১৪১২ হিঃ।
- শাহীদ সানী, যাইনু্দ্দিন, আ্-রাওযাতুল বাহিয়্যাতু ফি শারহিল লুমাতিদ্ দামেশকিয়্যাহ, তেহরান, ইন্তেশারাতে ইলমিয়্যাহ ইসলামিয়্যাহ, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
- তাবাতাবায়ী ইয়াজদী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ কাযেম, আল্-উরওয়াতুল উসকা, কোম, দারুত্ তাফসির, ঈসমাইলিয়ান, ১৪১৯ হিঃ।
- তূসী, মুহাম্মাদ বিন হাসান, আল্-মাবসুতু ফি ফিকহিল ইমামিয়্যাহ, মুহাম্মাদ বাকের বেহবুদি, তেহরান, মাকতুবাতুল মুর্তাজাভিয়্যাহ, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
- নাজাফী, মুহাম্মাদ হাসান, জাওয়াহেরুল কালাম, বৈরুত, দারু ইহয়ায়িত্ তুরাসিল আরাবী, ১৩৬২ হিঃ।