তামাত্তু উমরাহ
তামাত্তু উমরাহ (আরবি: عُمرَةُ التَّمتُّع); তামাত্তু হজ্জের সাথে সম্পাদিত একটি উমরাহ। তামাত্তু উমরাহর বিপরীতে রয়েছে মুফরাদা উমরাহ, যা তামাত্তু হজ্জ থেকে পৃথকভাবে সম্পাদিত হয়। তামাত্তু উমরাহ ৫টি আমল নিয়ে গঠিত, যথাক্রমে; ইহরাম, তাওয়াফ, তাওয়াফের নামাজ, সায়ী ও তাক্বছীর (চুল বা নখ ছাটা)।
উমরাহ হল ইহরাম, তাওয়াফ, সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ী[১] এবং এর মত কিছু আমলের সমষ্টি যা আল্লাহর পবিত্র গৃহ যিয়ারতের সময় সম্পাদিত হয়।[২] উমরাহ; তামাত্তু ও মুফরাদা ২ ভাগে বিভক্ত।[৩]
তামাত্তু উমরাহ হজ্জে তামাত্তুর অংশ এবং এর সাথে সম্পাদিত হয়।[৪] কিন্তু মুফরাদা উমরাহ হজ্জে তামাত্তু থেকে স্বতন্ত্রভাবে সম্পাদিত হয়।[৫] ফকীহগণের ফতওয়ার ভিত্তিতে, তামাত্তু হজ্জের ন্যায় সামর্থবান মুসলমানদের জন্য জীবনে অন্তত একবার উমরাহ পালন করা ওয়াজিব[৬] এবং একাধিকবার মুস্তাহাব।[৭]
তামাত্তু উমরাহর আমলসমূহ
তামাত্তু উমরাহ ৫টি আমল দ্বারা গঠিত, যথাক্রমে:
- ইহরাম
- তাওয়াফ
- তাওয়াফের নামাজ
- সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ী
- তাক্বছীর (কিছু পরিমাণ চুল বা নখ ছাটা)।[৮]
মুফরাদা উমরার সাথে তামাত্তু উমরাহর পার্থক্য
তামাত্তু উমরাহ ও মুফরাদা উমরাহর মাঝে কয়েকটি বিষয়ে পার্থক্য রয়েছে:
- মুফরাদা উমরাহর বিপরীতে তামাত্তু উমরায় তাওয়াফে নিসা এবং তাওয়াফে নিসার নামাজ নেই।
- তামাত্তু উমরায় ইহরাম নির্দিষ্ট মাসে (শাওয়াল, যিলক্বদ, যিলহজ) বাধা হয়। কিন্তু মুফরাদা উমরার জন্য এ ধরনের কোন শর্ত নেই।
- তামাত্তু উমরায় সাফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ী করার পর তাক্বছীর করতে হয় (সামান্য পরিমাণে চুল বা নখ কাটতে হয়); কিন্তু মুফরাদা উমরায় তাক্বছীর ও হালক্বের (মাথা মুন্ডন) যে কোন একটি আঞ্জাম দেওয়া যায়।[৯]
- তামাত্তু উমরায় ইহরাম নির্ধারিত ৫টি মীকাতের (ইহরাম বাধার বিশেষ স্থান) যে কোন একটি থেকে বাধতে হয়। কিন্তু মুফরাদা উমরাতে এমন বাধ্য-বাধকতা নেই নির্ধারিত ৫টি মীকাত ছাড়াও আদনাল হিল (اَدنَىالحِلّ) তথা হারাম শরীফ বহির্ভূত সবচেয়ে নিকটবর্তী স্থান থেকেও ইহরাম বাধা যায়।[১০]
তথ্যসূত্র
- ↑ মোহাক্কেকে হিল্লি, শারায়েউল ইসলাম, ১৪০৮ হিঃ খন্ডঃ ১, পৃঃ ২৭৫
- ↑ শেখ তুসি, আল-মাবসুত, ১৩৮৭ হিঃ, খন্ডঃ ১, পৃঃ ২৯৬, নাজাফি, জাওয়াহেরুল কালাম, বেইরুত, খন্ডঃ ২০, পৃঃ ৪৪১
- ↑ মুআসসাসাতু দ্বায়েরাতুল মাআরেফে ফেকহে ইসলামী, ফারহাঙ্গে ফেকহ, ১৩৯২, খন্ডঃ ৫, পৃঃ ৪৭৯
- ↑ মুআসসাসাতু দ্বায়েরাতুল মাআরেফে ফেকহে ইসলামী, ফারহাঙ্গে ফেকহ, ১৩৯২, খন্ডঃ ৫, পৃঃ ৪৮১
- ↑ মুআসসাসাতু দ্বায়েরাতুল মাআরেফে ফেকহে ইসলামী, ফারহাঙ্গে ফেকহ, ১৩৯২, খন্ডঃ ৫, পৃঃ ৪৮৫
- ↑ উদাহরন স্বরুপ দেখুনঃ মোহাক্কেকে হিল্লি, শারায়েউল ইসলাম, ১৪০৮ হিঃ খন্ডঃ ১, পৃঃ ২৭৪, নাজাফি, জাওয়াহেরুল কালাম, বেইরুত, খন্ডঃ ২০, পৃঃ ৪৪১
- ↑ শেখ তুসি, আল-মাবসুত, ১৩৮৭ হিঃ, খন্ডঃ ১, পৃঃ ২৯৭, গুরুহে পাযুহেশে বে'সেয়ে মাকামে মুয়াযযামে রাহবারী, মুন্তাখাবে মানাসেকে হাজ্জ, ১৪২৬ হিঃ, পৃঃ ৫৯
- ↑ মোহাক্কেকে হিল্লি, শারায়েউল ইসলাম, ১৪০৮ হিঃ খন্ডঃ ১, পৃঃ ২৭৫
- ↑ মোহাক্কেকে হিল্লি, শারায়েউল ইসলাম, ১৪০৮ হিঃ খন্ডঃ ১, পৃঃ ২৭৫ ও ২৭৬
- ↑ মুআসসাসাতু দ্বায়েরাতুল মাআরেফে ফেকহে ইসলামী, ফারহাঙ্গে ফেকহ, ১৩৯২, খন্ডঃ ৫, পৃঃ ৪৮৮
গ্রন্থপঞ্জি
- ইমাম খোমিনী, সাইয়্যেদ রুহুল্লাহ, তাহরিরুল ওয়াসিলাহ, কোম, মুয়াসসাসাতু মাতবুয়াতি দারুল ইলম, প্রথম প্রকাশ, (তা.অ)।
- শেখ তুসি, মুহাম্মাদ বিন হাসান, আল-মাবসুত, তেহরান, আল-মাকতাবাতুল মুরকাযাভিয়্যাহ লি ইহয়াইল আসারি জাফারিয়্যাহ, তৃতীয় প্রকাশ, ১৩৮৭ হিঃ।
- ফাল্লাযাদেহ, মুহাম্মাদ হোসাইন, মানাসেকে হাজ্জ ভিজেয়ে বানুয়ান, কোম, নাশরে মাশয়ার, ১২তম প্রকাশ, ১৪২৮ হিঃ।
- মোহাক্কেকে হিল্লি, জাফর বিন হাসান, শারায়েউল ইসলাম, তাহকিক ও তাসহিহ; আব্দুল হোসাইন মুহাম্মাদ বাক্বাল, কোম, ইসমাইলিয়ান, দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৪০৮ হিঃ।
- নাজাফি, মুহাম্মাদ হাসান, জাওয়াহেরুল কালাম, বৈরুত, দারু ইহয়াইত তুরাসিল আরাবি, সপ্তম প্রকাশ, ১৪০৪ হিঃ।