খসড়া:কাফন
- নিবন্ধটিতে ফিকাহ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের সংজ্ঞা তুলে ধরা হয়েছে, এটি আমলের মানদণ্ড নয়। এ বিষয়ক মাসআলা ও আহকাম জানার জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রন্থের শরণাপন্ন হোন।
কাফন (আরবি: الكفن); কাফন হলো, একজন মুসলিম মৃত ব্যক্তির দাফনের আগে তার মৃত দেহকে আবৃত করা বা ঢাকার জন্য যে কাপড় ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে কমপক্ষে তিনটি কাপড় ব্যবহার করা হয়: একটি কামিস (জামা), ইজার (লুঙ্গি) ও লেফাফা (চাদর)। একজন মুসলিমের জন্য কাফন বা তাকফিন করা ওয়াজিবে কিফায়া। এটি জবরদখলকৃত ও নাপাক কাপড় দিয়ে করা উচিত নয়। মুস্তাহাব হচ্ছে, ব্যক্তির জীবদ্দশায় কাফন সংগ্রহে রাখা।
সংজ্ঞা এবং ওয়াজিবসমূহ
কাফন হলো এমন একটি কাপড় যা দাফনের আগে একজন মুসলিমের দেহ ঢেকে রাখার জন্য ব্যবহার করতে হয়।[১] তাকফিন, অর্থাৎ একজন মুসলিম পুরুষ বা মহিলাকে কাফন পরানো ওয়াজিবে কিফায়া।[২] একজন মহিলার কাফন প্রদান তার স্বামীর উপর ওয়াজিব,[৩] কিন্তু অন্যদের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির কাফন তার নিজস্ব সম্পদ থেকে প্রস্তুত করা; কারণ ওয়াজিব হলো কাফন পরানো, কাফন সংগ্রহ করা নয়।[৪] ফকীহদের ফতোয়া অনুসারে, যদি মৃত ব্যক্তির কাফন কেনার জন্য তার যথেষ্ট সম্পদ না থাকে, তাহলে তা যাকাতের অর্থে সংগ্রহ করা যেতে পারে।[৫]
কাফনের তিনটি অংশ থাকে:[৬]
- ইজার (লুঙ্গি); যা নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখে এবং বুক থেকে পা পর্যন্ত পৌঁছানো হলে অধিকতর উত্তম।[৭]
- কামিস (জামা)’ কাঁধ থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত,[৮] এবং যদি এটি পা পর্যন্ত পৌঁছায় তবে এটি আরও ভালো।[৯]
- লেফাফা (চাদর); এ কাপড়টি মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ঢেকে রাখার জন্য এবং এর প্রস্থ এমন হওয়া উচিত যাতে এর একপাশ দ্বারা অন্যপাশকে ঢাকা যায়।[১০] এটি মৃত ব্যক্তির মাথা এবং পায়ের চারপাশে বাঁধার জন্য যথেষ্ট লম্বা হলে আরও ভালো।[১১]
মৃতদেহকে জবরদখলকৃত বা অপবিত্র কাপড় দিয়ে কাফন করানো জায়েজ নয়, এমনকি খাঁটি রেশমী কাপড় বা এমন কোন পশুর পশম বা লোম দিয়ে তৈরি কাপড় দিয়েও কাফন করা জায়েজ নয় যার মাংস হারাম।[১২]
মৃত ব্যক্তির দাফনের আগে বা দাফনের সময়, সিজদার সময় মাটি স্পর্শ করা শরীরের সাতটি স্থানে অল্প পরিমাণে কর্পূর লাগাতে হবে।[১৩] এই কাজটিকে হুনুত বলা হয়, যা ওয়াজিব।[১৪]
যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হলে তাকে কাফন পরানোর প্রয়োজন নেই, যদি না সে উলঙ্গ থাকে এবং এমতাবস্থায় তাকে কাফন পরানো ওয়াজিব।[১৫]
মুস্তাহাব ও মাকরূহসমূহ
মুস্তাহাব হচ্ছে, জীবদ্দশায়[১৬] কাফন প্রস্তুত রাখা এবং এটি ইয়েমেনি কাপড় দিয়ে তৈরি করা[১৭] এবং এটিকে সুগন্ধি করা। (এটিকে আতর দিয়ে সুগন্ধি করা মাকরুহ, তবে কর্পূর দিয়ে সুগন্ধি লাগানো মুস্তাহাব।)[১৮]
অন্যদিকে, কাফন লিনেন কাপড় দিয়ে তৈরি করা[১৯] এবং লোহার কাঁচি দিয়ে কাটা মাকরূহ। কাফনের অন্যান্য মাকরূহগুলির মধ্যে রয়েছে: কাফনের হাতা এবং বোতাম থাকা, এটি কালো রঙের হওয়া অথবা কালো রঙে কিছু লেখা থাকা, পাগড়িতে তাহতুল হানা না থাকা, কাফনটি নোংরা হওয়া, কাফনের দাম কমানোর জন্য দর কষাকষি করা এবং কাফনের কাপড় সেলাই করা। অবশ্য, বলা হয়েছে যে, যদি মৃত ব্যক্তিকে তার জীবদ্দশায় পরা জামায় কাফন দেওয়া হয় এবং জামার বোতাম খুলে ফেলা হয়, তাহলে এর হাতা থাকাতে কোনও সমস্যা নেই। তবে, জামাটি এমন হওয়া আবশ্যক যাতে এটি ওয়াজিব পরিমাণ কাপড়ের প্রয়োজন পূরণ করে।[২০]
সম্পর্কিত নিবন্ধ
তথ্যসূত্র
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ:১, পৃ: ৪০২ ও ৪০৩।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ: ১, পৃ: ৪০২; নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ: ২, পৃ: ৪৫৬।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ: ১, পৃ: ৪০৫; নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ: ২, পৃ: ৫৩১-৫৩৩।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ: ২, পৃ: ৫৩৫-৫৩৬; তাবাতাবাই ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ: ১, পৃ:৪০৭।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ: ২, পৃ: ৫৩৮; তাবাতাবাই ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ:১, পৃ:৪০৭।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ: ২, পৃ: ৪৫৬।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ: ১, পৃ: ৪০২; নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ: ২, পৃ: ৪৫৭-৪৫৮।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ: ১, পৃ: ৪০২-৪০৩; নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ: ২, পৃ: ৪৬১-৪৬২।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি,আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ: ১, পৃ: ৪০২-৪০৩; নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ: ২, পৃ: ৪৬১-৪৬২।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ:১, পৃ:৪০২-৪০৩ ও নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ: ২, পৃ: ৪৬৩।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ: ১, পৃ: ৪০২-৪০৩।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি,আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ: ১, পৃ: ৪০৪; নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ:২, পৃ: ৪৬৫ ও ৪৬৯।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি,আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ: ১, পৃ: ৪১৩-৪১৪।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি,আল উরওয়াতুল উসকা, ১৪০৯ হি., খ: ১, পৃ: ৪১৩-৪১৪।
- ↑ তাবাতাবাই ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল উসকা, আন নাশিরু মাকতাবি আয়াতিল্লাহিল উযমা সাইয়িদ সিস্তানী, খ: ১, পৃ: ২৯৪।
- ↑ হুর আমিলি, ওয়াসাইলুশ শিয়া, ১৩৯৫ হি., খ: ২, পৃ: ৭৫৫।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৩৬২ (ফার্সি সন), খ: ৪, পৃ: ১৯৬; মুআসসাসাতু দায়েরাতিল মাআরিফিল ফিকহিল ইসলামি, ফারহঙ্গে ফিকহে ফারসি, ১৩৮৫ (ফার্সি সন), খ: ২, পৃ: ৯৮।
- ↑ আল মুসাউই আল খোমেনি,তাহরিরুল ওয়াসিলা, ১৩৯০ হি., খ: ১, পৃ: ৭৫।
- ↑ নাজাফি, জাওয়াহিরুল কালাম, ১৪২৬ হি., খ: ২, পৃ: ৪৬৫ ও ৪৬৯।
- ↑ ইয়াজদি, আল উরওয়াতুল ওয়াছকা, আন নাশিরু মাকতাবু আয়াতিল্লাহিল উযমা সাইয়িদ সিস্তানি, খ: ১, পৃ: ৩১৬।
গ্রন্থপঞ্জি
- হুররে আমিলি, মুহাম্মদ বিন হাসান, ওয়াসাইলুশ শিয়া: ইলাহ তাহসিলি মাসাইলিশ শরিয়া, বৈরুত, দারু ইহয়ায়িত তুরাছিল আরাবি, বৈরুত, ১৪১২ হি.,
- ইমাম খুমিনী, সাইয়েদ রুহুল্লাহ, তাহরিরুল ওয়াসিলা, নাজাফ, মাতবাআতুল আদাব, ১৩৯০ হি.,
- নাজাফি, মুহাম্মদ হাসান, জাওয়াহিরুল কালাম ফি ছাওবিহিল জাদিদ: আসলুবুন জাদিদ ফি তাহলিলি আবহাছি কিতাবে জাওয়াহিরিল কালাম ওয়া আরদিহা বিমিনহাজিয়্যাতে মাওদুয়িয়া, কুম, দায়েরাতুল মাআরিফিল ফিকহিল ইসলামি তাতাবাকান লি মাযহাবি আহলিল বাইত (আ.), ১৪২৬ হি./২০০৫ ঈ.,
- নাজাফি, মুহাম্মদ হাসান, জাওয়াহিরুল কালাম, মুহাক্কিক: কুচানি, আব্বাস, নাশির: বৈরুত, দারু ইহয়ায়িত তুরাছিল আরাবি, চাপে হাফতুম, ১৩৬২ (ফার্সি সন),
- তাবাতাবাঈ ইয়াজদি, মুহাম্মদ কাযিম, আল উরওয়াতুল ওয়াছকা, বৈরুত, মুআসসাসাতুল আ'লামি লিল মাতবুআত, ১৪০৯ হি./১৯৮৮ ঈ.,
- ফারহাঙ্গে ফিকহে মুতাবিকে মাযহাবে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম, তাহকিক ওয়া তাআলিফে মুআসসাসায়ে দায়েরাতুল মাআরিফে ফিকহে ইসলামি বারা মাযহাবে আহলে বাইত আলাইহিমুস সালাম; যিরে নাযারে মাহমুদ হাশেমি শাহরুদি, কুম, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৮২ (ফার্সি সন)।