বিষয়বস্তুতে চলুন

কিবলার আয়াত

wikishia থেকে
কিবলার আয়াত
আয়াতের নামকিবলার আয়াত
সূরার নামসূরা বাকারা
আয়াত নম্বর১৪৪
পারা নম্বর
শানে নুযুলমুসলমানদের কিবলা মসজিদ আল-আকসার পরিবর্তে কাবাকে কিবলা করার ঘোষণা
অবতীর্ণের স্থানমদীনা
বিষয়ফিকহী
প্রসঙ্গকিবলা পরিবর্তন
সংশ্লিষ্ট আয়াতসূরা আল-বাকারা-১১৫


কিবলার আয়াত (আরবি: آية القبلة); বলতে সূরা আল-বাকারার ১৪৪ নম্বর আয়াতটিকে বলা হয়, যা মুসলমানদেরকে তাদের কিবলা মসজিদ আল-আকসা থেকে মসজিদ আল-হারামে পরিবর্তন করার নির্দেশ দেয়। মুসলমানদের মদিনায় হিজরতের পর এই শহরের ইহুদি বাসিন্দারা ইসলাম ধর্মের সত্যতা না থাকার প্রমাণ হিসেবে আল-আকসা মসজিদকে মুসলমানদের কিবলা হিসেবে গ্রহণকে উল্লেখ করে প্রচার করতে থাকে। ইহুদিদের এই প্রবণতার জন্য নবী (সাঃ) আকাঙ্খা করেন যাতে কাবা মুসলমানদের কিবলা হয়।

কিছু মুফাসসির আল-বাকারার ১৪২ থেকে ১৪৪ নম্বর আয়াতকে কেবলা পরিবর্তনের আয়াত বলে মনে করেছেন এবং অন্যরা সূরা আল-বাকারার ১৫০ নম্বর আয়াত বলে মনে করেছেন। মুফাসসিরগণ মনে করেন, কিবলা পরিবর্তনের আয়াতটি মদিনায় হিজরতের সাত থেকে উনিশ মাসের মধ্যে অবতীর্ণ হয়েছে।

বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুসারে, যে স্থানটিতে কিবলা পরিবর্তনের আয়াতটি নাযিল হয়েছিল সেটি হল এই তিনটি স্থানের একটি: কিবলাতাইন মসজিদ, বনি সালেম বিন আউফ গোত্রের মসজিদ এবং মসজিদে নববী।

টেক্সট ও অনুবাদ

قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ


অর্থ: নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে।



সূরা বাকারা: ১৮৩


শানে নুযুল

প্রখ্যাত মুফাসসির মুহাম্মাদ বিন জারির তাবারি থেকে বর্ণিত, মদিনার ইহুদিরা মহানবি (সা.) ও মুসলমানদের আল-আকসা মসজিদের দিকে ফিরে নামাজ পড়ার কারণে ইসলাম ধর্মের অসত্যতা প্রমাণের অপপ্রচার চালায় এবং বলে যে, মুহাম্মদ (সা.) আমাদের ধর্মের বিরোধিতা করে; কিন্তু আমাদের কিবলার ফিরে নামাজ পড়ে।

এই কারণেই মহানবি (সা.) আকাঙ্খা করতেন যাতে মুসলমানদের কিবলা স্বাধীন হয় এবং কাবার দিকে মুখ করে নামাজ পড়তে পারেন। এই আকাঙ্খা নিয়ে, নবী (সা.) বার বার আকাশের দিকে তাকাতেন এবং অপেক্ষা করতেন কখন মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কিবলা পরিবর্তনের নির্দেশ আসবে। তখন এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছিল এবং তখন মুসলমানরা কাবার দিকে ফিরে নামাজ আদায় করে।

অবতীর্ণের সময় ও স্থান

মুফাসসিরদের মতে, এই আয়াত হিজরতের সাত বা উনিশ মাস পর নাযিল হয়েছে। তাফসিরে আল-মিযান প্রনেতা অল্লামা তাবাতাবায়ী কিবলা পরিবর্তনের তারিখ বিবেচনা করে যেটি হিজরীর দ্বিতীয় বছর রজব মাসে সংঘটিত হয়েছে, হিজরতের ১৭ মাস পরের অভিমতটিকে সবচেয়ে সঠিক সময় বলে মনে করেন। আয়াতুল্লাহ মাকারেম শিরাজীর মতে, যোহরের নামায আদায়রত অবস্থায় কিবলা পরিবর্তনের আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং এই সময়ই নারী ও পুরুষ একসাথে তাদের স্থান পরিবর্তন করে।

বিভিন্ন ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুসারে, কিবলা পরিবর্তনের আদেশ জারি করার স্থানটি এই তিনটি স্থানের একটি-

  • মদিনার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বনি সালেমা [১০] গোত্রের মসজিদ [১১], যা মসজিদ কিবলাতাইন (দুই কিবলার মসজিদ) নামে পরিচিত।
  • "বনি সালেম বিন আউফ" গোত্রের মসজিদ, যেখানে নবী (সা.) প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেছিলেন।
  • মসজিদে নববী (সা.)।

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি

  • ইবনে সাদ, মুহাম্মাদ বিন মুনিঅ, তাবাকাতুল কুবরা; সম্পাদনায়- মুহাম্মাদ আব্দুল কাদের আতা, বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১৮ হি.।
  • ইবনে সাইয়্যিদুন নাস, মুহাম্মাদ বিন মুহাম্মাদ, উয়ুনুল আসার; তাহকিক- ইবরাহিম মুহাম্মাদ, বৈরুত, দারুল কালাম, ১৪১৪ হি.।
  • তাবাতাবাতায়ী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হোসাইন, তাফসিরে আল-মিযান, বৈরুত, মুয়সসাসাতুল আলামি, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৩৯০ হি.।
  • তাবারসী, ফাযল বিন হাসান, মাজমাউল বায়ান, তেহরান, নাসের খসরু, ১৩৭২ (সৌরবর্ষ)।
  • তাবারী, মুহাম্মাদ বিন জারির, জামিউল বায়ান, সম্পাদনায়- সাদাকী জামিল, বৈরুত, দারুল ফিকর, ১৪১৫ হি.।
  • তানতাভী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ, তাফসিরুল ওয়াসিত, কায়রো, দারুল মায়ারেফ, ১৪১২ হি.।
  • কায়েদান, আসগার, তারিখ ওয়া আসারে ইসলামিয়ে মক্কা মুকাররামা ওয়া মদিনা মুনাওয়ারা, তেহরান, মাশয়ার, ১৩৮৬ (সৌরবর্ষ)।
  • কুম্মী, আলী ইনে ইবরাহিম, তাফসিরে কুম্মী; সম্পাদনায়- জাযায়েরী, কোম, দারুল কিতাব, ১৪০৪ হি.।