বিষয়বস্তুতে চলুন

ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ

wikishia থেকে

ইসরাইল-ইরান যুদ্ধ ২০২৫ সালের ১৩ জুন তারিখে ইরানে ইসরাইলি হামলার মাধ্যমে শুরু হয় এবং ইরানের কিছু পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি এবং আবাসিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়। উক্ত হামলায় ইরানের মুহাম্মাদ বাকেরি, হুসাইন সালামি এবং আমির আলী হাজিজাদেহ’র ন্যায় কয়েকজন সিনিয়র সামরিক কমান্ডার ছাড়াও কয়েকজন পারমাণু বিজ্ঞানী এবং কিছু বেসামরিক নাগরিক শাহাদাত বরণ করেন।

যায়নবাদী ইসরাইলের এই হামলার লক্ষ্য হিসেবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচী সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা, ইরানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন ঘটানো, ইসরাইলের অস্তিত্বের জন্য ইরানের অব্যাহত হুমকি হ্রাস করা, গাজা যুদ্ধ হতে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া এবং ঐ যুদ্ধে তাদের পরাজয় ভুলিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আল-জাজিরা ও এক্সিওসের ন্যায় পশ্চিমা ও আরব মিডিয়াগুলোর প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরাইল দীর্ঘদিন থেকে ইরানের উপর হামলার পরিকল্পনা করছিল এবং উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় ছিল। ইরানে ইসরাইলের হামলা, আন্তর্জাতিক পরমাণু কমিশনের (আইএইএ) ইরান বিরোধী প্রস্তাব অনুমোদন, পরমাণু চুক্তিতে পৌঁছানোর ব্যপারে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ইরানকে ৬০ দিনের বেঁধে দেওয়া সময়ের পর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবুজ সংকেতে সংঘটিত হয়। ইরানের সাথে ইসরাইলের যুদ্ধের দশম দিনে অর্থাৎ ২ জুলাই সকালে মার্কিন সামরিক বাহিনী ইসরাইলের আগ্রাসনের সমর্থনে এবং তাদের সহযোগিতায় ফোরদু, নাতানয এবং ইস্ফাহান পরমাণু স্থাপনাগুলোতে বোমা বর্ষণ করে।

ইসরাইলের এই হামলার জবাবে ইরান কয়েকটি ধাপে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করার মাধ্যমে অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩ পরিচালনা করে; উক্ত অভিযানে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক, গোয়েন্দা ও গুপ্তচরবৃত্তি কেন্দ্র বিশেষ করে ওয়াইজম্যান ইনস্টিটিউট, আমান, মোসাদ ও কিছু বিমান ঘাঁটিকে ইরান লক্ষ্যবস্তু করে।

ইরানের উপর ইসরাইলি হামলার ফলে একের পর এক বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ও পরিণতি লক্ষ্য করা যায়। শিয়া মারজায়ে তাক্বলীদগণ এবং বিভিন্ন দেশের সরকার এবং সংসদ সদস্যগণ এই হামলার নিন্দা জানান এবং এটিকে ইরানের সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। একটি টেলিভিশন বার্তায়, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী ইরানের উপর ইসরাইলি হামলাকে যুদ্ধের সূচনা, একটি বড় ভুল বলে অভিহিত করেন এবং এর পরিণতি ইসরাইলকে দুর্বিষহ করে তুলবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। তিনি কঠোর প্রতিশোধের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন যে, ইরান ইহুদিবাদী সরকারকে এই অপরাধ থেকে অক্ষত অবস্থায় বেরিয়ে আসার অনুমতি দেবে না।

ইহুদিবাদী সরকার বেসামরিক এলাকা ও ব্যক্তির উপর যেমন আবাসিক এলাকা, সম্প্রচার কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার মাধ্যমে বারংবার জেনেভা কনভেনশন ও জাতিসংঘের সনদ লঙ্ঘন করেছে।

ইরান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা বাতিল, ইসরাইলি অর্থনীতির বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি এবং ইসরাইল ছেড়ে অন্যান্য দেশে ইহুদিবাদীদের অভিবাসন হচ্ছে এই যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য পরিণতি।

ইসরাইল যুদ্ধ শুরু করে

ইসরায়েল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার দাবি করে[১] ইরানের পারমাণবিক [2] এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার লক্ষ্যে[3] ১৩ জুন, ২০২৫ তারিখে সকালে, দেশটির কিছু পারমাণবিক স্থাপনা, সামরিক ঘাঁটি এবং সামরিক কর্মকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের বাড়িতে হামলা চালায়।[৪]

ঐ হামলায়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ১০০ থেকে ২০০টি যুদ্ধবিমান দিয়ে ইরানের ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করে।[5] এই যুদ্ধে, তেহরান, ইস্ফাহান, আরাক, লোরেস্তান, হামেদান, তাবরীয, কেরমানশাহ এবং ইলামের মতো বিভিন্ন ইরানি শহর ইসরায়েলি বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় এবং বেশ কয়েকজন সিনিয়র ইরানি সামরিক কমান্ডার এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়।[6] সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনা ছাড়াও, ইসরায়েল কিছু আবাসিক এলাকায়ও আক্রমণ করে, যার ফলে বেশ কিছু ইরানি বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়।[7]

ইরানের উপর ইসরায়েলের আক্রমণকে "অপারেশন রোয়ারিং লায়ন/রাইজিং লায়ন" বলা হয়।[8]

ইসরায়েলের লক্ষ্য

ইসরায়েল, ইরানের মাটিতে হামলাকে ইসরায়েল একটি অগ্রিম পদক্ষেপ[৯] এবং ইরানকে পারমাণবিক বোমা ও অস্ত্র অর্জন থেকে বিরত রাখার জন্য হামলা হিসেবে ঘোষণা করে। [10] ইউরোনিউজ, ইরানে ইসরায়েলের আক্রমণের লক্ষ্য হিসেবে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার কথা উল্লেখ করে; [2] কিন্তু আল জাজিরা দাবি করে, ইসরায়েলের লক্ষ্য হলো ইরানের রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটানো, কেবল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস ও নির্মূল করা নয়। [11]

ইরানের উপর ইসরায়েলের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের অন্যান্য লক্ষ্যও উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: ইসরায়েলের টিকে থাকার জন্য ইরানের হুমকি হ্রাস করা, গাজা যুদ্ধ থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়া এবং ঐ যুদ্ধের পরাজয় ভুলানো, ইরানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে আলোচনা বন্ধ করা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের সাথে যুদ্ধে সরাসরি জড়ানো, অস্থিতিশীলতা তৈরি করা, ইরানে প্রতিষ্ঠিত শাসনব্যবস্থা উৎখাত করা এবং নেতানিয়াহুর জন্য অভ্যন্তরীণ বৈধতা নিশ্চিত করা। [12]

জায়নবাদী ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে এক যৌথ বিবৃতিতে, ইরানের উপর আক্রমণের মূল কারণ হিসেবে গাজা যুদ্ধ এবং ফিলিস্তিনি আন্দোলন ও প্রতিরোধ অক্ষের প্রতি ইরানের অব্যাহত সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন। [13] কিছু কিছু সংবাদ সংস্থার মতে, ইসরায়েল ইরানের উপর আক্রমণের পূর্বে, এ ব্যাপারে পরিকল্পনা এবং পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করেছিল এবং উপযুক্ত সময় এবং আমেরিকার সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় ছিল।[14]