আসকারিয়াইনের মাজারে ধ্বংসযজ্ঞ

wikishia থেকে

নিবন্ধটি হারামাইন আসকারিয়াইনের মাজারে ধ্বংসযজ্ঞ সংশ্লিষ্ট। ইমাম হাদি (আ.) ও ইমাম আসকারির (আ.) মাজার সম্পর্কে জানতে পড়ুন।

আসকারিয়াইনের মাজারে ধ্বংসযজ্ঞ বলতে এখানে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক বিস্ফোরণের মাধ্যমে ইমাম হাদি (আ.)ইমাম হাসান আসকারির (আ.) মাজার ধ্বংসকে বোঝানো হয়েছে। ঘটনাটি ২০০৬ ও ২০০৭ সালের। এ পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মারজায়ে তাকলীদশিয়া ব্যক্তিত্বগণ এ ধ্বংসযজ্ঞের নিন্দা জানান। আতাবাতে আলিয়াত (ইরাকের মাজারসমূহ) সংস্কার বিষয়ক অধিদপ্তর ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে আসকারিয়াইনের (আ.) মাজার সংস্কারের কাজ সম্পন্ন করে।

আসকারিয়াইনের মাজারটি হলো, ইরাকের সামাররা শহরে অবস্থিত ১০ম ইমাম হযরত ইমাম হাদি (আ.) (শাহাদাত ২৫৪ হি.) ও তাঁর সন্তান এবং শিয়াদের ১১তম ইমাম হযরত ইমাম হাসান আসকারির (আ.) (শাহাদাত ২৬০ হি.) পবিত্র মাজার শরিফ ও শিয়াদের গুরুত্বপূর্ণ যিয়ারতের স্থান।[১]

১ম বারের ধ্বংসযজ্ঞ

২০০৬ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি (১২ মহররম ১৪২৭ হিজরী) আল-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ত সন্ত্রাসীরা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে মাজারে বিস্ফোরণ ঘটায়।[২] ঐ বিস্ফোরণের ফলে গম্বুজের উপরে স্থাপিত ইট খসে পড়ে, একইভাবে গিল্ডিংয়ের যে কাজ করা হয়েছিল সেগুলোও এবং টাইলস ধ্বসে পড়ে। তবে গম্বুজের ভিত ও পিলার এবং এর দেয়ালগুলো সুরক্ষিত ছিল[৩]

প্রতিক্রিয়া

এ ঘটনায় মারজায়ে তাক্বলীদগণ, ইরান ও ইরাকের হাওযা ইলমিয়ার উলামা ও উস্তাদগণ নিজেদের পাঠদান বন্ধ রাখেন।[৪] ইরান ও ইরাকের বাজার, শপিংমলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সর্বত্র সাধারণ শোক ঘোষণা করা হয়।[৫] ইরানের কোম শহরের মসজিদে আ’যামে মারজাগণ এবং হাওযা ইলমিয়া কোমের আলেম-উলামাদের উপস্থিতিতে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।[৬] একইভাবে আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ীসহ ইরান ও ইরাকের অপর রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ বিবৃতি প্রদান করে এ ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন করেন।[৭] এছাড়া বিভিন্ন মুসলিম ও ইউরোপীয় দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারাসহ তৎকালীন জাতিসংঘের মহাসচিবও এ পদক্ষেপের নিন্দা জানান।

দ্বিতীয় ধ্বংসযজ্ঞ

২০০৭ সালের ১৩ জুন (২৭ জমাদিউল আওয়াল ১৪২৮ হিজরী) আসকারিয়াইনের মাজারে আবারো বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এবারের বিস্ফোরণে গম্বুজ পরিপূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়।[৮] এর আগে ১৩৫৫ ও ১৩৫৬ হিজরীতে মাজারে হামলা এবং মাজার লুট করা হয়।[৯]

হামলাকারীদের লক্ষ্য

হিউম্যান সায়েন্স এ্যান্ড কালচারাল স্ট্যাডিজ অব ইরানের ফ্যাকাল্টি মেম্বার কামিয়ার সেদাকাত সামার হুসাইনের মতে আসকারিয়াইনের মাজার ধ্বংসের নেপথ্যে রাজনৈতিক ও মাযহাবগত কারণ রয়েছে। তার ভাষ্যমতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও ইসরাইলের লক্ষ্যের পথে শিয়া ও সুন্নিদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা ছিল এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য। এছাড়া এর মাযহাবগত উদ্দেশ্য, কবর যিয়ারতমাজার নির্মাণ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ওয়াহাবিদের আকিদার সাথে সম্পৃক্ত।[১০] ইবনে তাইমিয়া’র দৃষ্টিতে কবরের উপর কোন ভবন নির্মাণ করা হারাম এবং সেগুলো ধ্বংস করা ওয়াজিব।[১১] ওয়াহাবিরা এই উদ্দেশ্যে এবং তাদের মুফতিদের ফতওয়ার ভিত্তিতে ১৩৪৪ হিজরীতে বাকী কবরস্থানের সকল কবর ও ঐতিহাসিক নিদর্শন ভেঙ্গে দেয়।[১২] অবশ্য এ প্রসঙ্গে ওয়াহাবিদের আকিদা অপর মুসলমানদের আকিদার পরিপন্থী।[১৩]

সংস্কার

আসকারিয়াইনের মাজার ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত থাকায় ধ্বংসযজ্ঞের পর মাজার সংস্কারের কাজ ইউনেস্কোর তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও সংস্কার কাজের গতি অত্যন্ত মন্থর হওয়ায় পরবর্তীতে ইরাকের মাজার সংস্কার বিষয়ক অধিদপ্তর এ দায়িত্ব ইরানকে দেয়।১৪] ইমামাইন আসকারিয়াইনের (আ.) মাজার সংস্কারের কাজ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে সমাপ্ত হয়। ইরানের মাজার সংস্কার বিষয়ক অধিদপ্তর প্রধানের ভাষ্যানুযায়ী কয়েকটি পর্যায়ে এ প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে; গম্বুজ তৈরি, গিল্ডিংয়ের কাজ এবং সেগুলোকে স্থাপন, টাইলসের কাজ, আয়নার ডেকোরেশন ও মাজারের অভ্যন্তরে মোজাইকের কাজ ইত্যাদি। [১৫]

নতুন যারিহ

সংস্কার প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্যে যারিহ তৈরির দায়িত্ব নেয় বিশিষ্ট মারজায়ে তাকলীদ আয়াতুল্লাহ সিস্তানির দপ্তর।[১৬]

ইমামাইন আসকারিয়াইনের যারিহ নির্মাণ প্রকল্প ইরানে আয়াতুল্লাহ সিস্তানির প্রতিনিধি সাইয়্যেদ জাওয়াদ শাহরিস্তানির তত্ত্বাবধানে ২০১০ সালে কোমে শুরু হয়। এ প্রকল্প প্রধানের দায়িত্বে থাকা লাজেভারর্দির ভাষ্যানুযায়ী এতে ৪ হাজার ৫০০ কেজি রৌপ্য, ৭০ কেজি স্বর্ণ এবং ১১ হাজার কেজি সেগুন কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে।[১৭]

আসকারিয়াইনের যারিহ’র নির্মাণ কাজ ২০১৪ সালে সমাপ্ত হয়[১৮] এবং ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সামাররাতে স্থানান্তরীত করা হয়, অতঃপর ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল প্রদর্শনীতে রাখা হয়।[১৯]

একইভাবে ইমাম হাদি (আ.), ইমাম আসকারি (আ.), নারজিস খাতুন ও ইমাম জাওয়াদের কন্যা হাকিমাহ খাতুনের কবরকে আবৃত করার জন্য ব্যবহৃত সিন্দুকগুলো ইরানের শিরাজ শহরে নির্মিত হয়, প্রকল্পটি শেষ হতে সময় লাগে ২ বছর।[২০]

তথ্যসূত্র

গ্রন্থপঞ্জি