আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ
আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ; মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি) এবং হযরত খাদিজার (আ.) ঔরসজাত সন্তান আব্দুল্লাহ শিশুকালেই মৃত্যবরণ করেন। ঐতিহাসিক সূত্র মতে, আব্দুল্লাহ এর মৃত্যুর পর আস ইবনে ওয়ায়েল মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি)-কে নির্বংশ বা লেজকাটা বলে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করলে মহান আল্লাহ এর প্রতিবাদে পবিত্র কুরআনের সূরা আল-কাউসার নাযিল করেন।
অধিকাংশ ঐতিহাসিক উল্লেখ করেছেন, আব্দুল্লাহ মহানবির (সা.) বে’সাতের (নবুয়ত ঘোষণা) পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[১] অবশ্য, অন্য একটি সূত্র তাঁর জন্ম মহানবির (সা.) বে’সাতের (নবুয়ত ঘোষণা) পূর্বে হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। [২] ওহী অবতীর্ণ ও ইসলাম পদার্পণের তাঁর জন্ম হয়েছিল বলে তাঁকে তাইয়্যেব ও তাহের [৩] উপাধি দেওয়া হয়েছিল।[৪]
আব্দুল্লাহ শিশুকালেই মক্কায় মৃত্যবরণ করেন। আহমাদ ইবনে ইয়াহয়া বালাজুরী তার আনসাবুল আশরাফ কিতাবে উল্লেখ করেছেন, আব্দুল্লাহ এর মৃত্যুর পর আস ইবনে ওয়ায়েল মহানবি হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি)-কে নির্বংশ বা লেজকাটা বলে ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছিল, এজন্য যে তাঁর কোনো ছেলে সন্তানই জীবিত থাকেনা (তখন মহানবি সা. দ্বিতীয় কোনো ছেলে সন্তান জীবিত ছিলনা)। এই ধৃষ্টতার প্রতিবাদে সূরা কাউসার এবং এই আয়াত অবতীর্ণ হয়[৫]-
অর্থ: (হে রাসূল) নিশ্চয়ই, আপনার শত্রুরাই নির্বংশ ও লেজকাটা।[৬]
শেইখ কুলাইনী তাঁর আল-কাফী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, আব্দুল্লাহ এর মৃত্যুর পর হযরত খাদিজা (আ.) কান্না করতেন, তখন মহানবি (সা.) তাঁকে বলেন, তুমি কি এতে সন্তুষ্ট হবে না যে বেহেশতের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে তাঁর (আব্দুল্লাহ ) সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং সে যখন তোমাকে দেখবে তোমার হাত ধরে বেহেশতের সর্বোত্তম স্থানে নিয়ে যাবে...পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহ এর থেকে অনেক ঊর্ধ্বে ও সুমহান যে, কোন বান্দা থেকে তার প্রিয় জিনিসটি কেড়ে নিবেন এবং সেই বান্দা মহান আল্লহর জন্য ধৈর্য্য ধারণ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, অথচ দয়ালু আল্লাহ তাকে আযাব প্রদান করবে।[৭]
তথ্যসূত্র
- ↑ ইবনে হাজার আসকালানী, আল-ইছাবাতু ফি তাময়িযিস্ সাহাবা, ১৪১৫ হিঃ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৪৪৫।
- ↑ ইবনে ইসহাক, সিরাতে ইবনে ইসহাক, ১৪১০ হিঃ, পৃষ্ঠা নং-৮২।
- ↑ ইবনে হাজার আসকালানী, আল-ইছাবাতু ফি তাময়িযিস্ সাহাবা, ১৪১৫ হিঃ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-৪৪৫
- ↑ আমিন, আয়ানুশ্ শিয়া, ১৪০৬ হিঃ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২২৩।
- ↑ বালাজুরী, আনসাবুল আশরাফ,১৪১৭ হিঃ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-১৩৫-১৩৮
- ↑ সূরা কাউসার-৩।
- ↑ কুলাইনী, আল-কাফি, ১৩৬২ (সৌরবর্ষ), তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২১৯।
গ্রন্থপঞ্জি
- ইবনে ইসহাক, মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক, সিরাতে ইবনে ইসহাক, কোম, দাফতারে মুতালেয়াতে তারিখ ও মায়ারেফে ইসলামী, প্রথম প্রকাশ, ১৪১০ হিঃ।
- ইবনে হাজার আসকালানী, আহামাদ ইবনে আলী, আল-ইছাবাতু ফি তাময়িযিস্ সাহাবা, বৈরুত, দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪১৫ হিঃ।
- আমিন, মুহসিন, আয়ানুশ্ শিয়া, বৈরুত, দারুত-তায়ারুফ্ লিল্ মাতবুয়াত, ১৪০৬ হিঃ।
- বালাজুরী, আহমাদ ইবনে ইয়াহয়া, আনসাবুল আশরাফ, বৈরুত, দারুল ফিকর্, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৭ হিঃ।
- তাবারসি, ফায্ল ইবনে হাসান, ইলামুল ওয়ারা বি আলামিল হুদা, কোম, আলুল বাইত, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৭ হিঃ।
- শেইখ কুলাইনী, মুহাম্মাদ ইবনে ইয়াকুব, আল-কাফি, তেহরান, ইসলামিয়্যাহ, দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৩৬২ (সৌরবর্ষ)।