নৃত্য
- নিবন্ধটি ফিকাহ সংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ের সংজ্ঞা ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিয়ে রচিত এবং ধর্মীয় আমলের মানদণ্ড নয়। আমলের লক্ষ্যে অন্য সূত্রের শরণাপন্ন হোন।
নৃত্য; বিশেষ ছন্দে ও সমন্বিতভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন ও নড়াচড়াকে বোঝায় যা সাধারণত গান এবং সঙ্গীতের সাথে হয়ে থাকে। ফকীহগণের অনেকে সকল প্রকার নৃত্যকে হারাম মনে করলেও তাদের কারো কারো মতে ঐ নৃত্য হারাম যা অপর কোন হারাম কাজের সাথে সংঘটিত হয়; যেমন যৌন কামনা জাগরণ। আবার কোন কোন ফকীহ নারীর জন্য নারীর নৃত্য এবং স্বামীর জন্য স্ত্রীর নৃত্যকে হারামের বিধান থেকে পৃথক করেছেন এ শর্তে যে যেন তার সাথে অন্য কোন হারাম যুক্ত না হয়।
পরিভাষা পরিচিতি
নৃত্য হল বিশেষ ছন্দ ও তালে এবং সমন্বিতভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালন ও নড়াচড়াকে বোঝায় যা সাধারণত গান এবং সঙ্গীতের সাথে হয়ে থাকে।[১] ফকীহগণ নৃত্য সংশ্লিষ্ট আলোচনা ‘মাকাসেবে মুহাররামাহ’ (হারাম লেনদেনসমূহ) ও ‘মাসায়েলে মুস্তাহদেসাহ’ (নতুন উত্থাপিত মাসআল-মাসায়েল)-এর অধ্যায়ে করে থাকেন।[২]
নৃত্যের ফিকহী বিধান
নৃত্যের বিষয়ে ফিকাহ শাস্ত্রে সার্বিকভাবে দু’ ধরনের মত রয়েছে: ১ম মত যা বেশীরভাগ ফকীহ পোষণ করে থাকেন; স্বয়ং নৃত্য হারাম।[৩] কিন্তু দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী স্বয়ং নৃত্য হারাম নয় তবে তা অপর একটি হারাম কাজের সাথে যুক্ত হলে হারাম হয়।[৪] অথবা যৌন কামনা জাগরণের কারণ হলে[৫]
একইভাবে ফকীহগণের মতে নৃত্য দেখার বিধান হল স্বয়ং নৃত্যের বিধানের ন্যায়।[৬] যদি তা যৌন কামনা জাগরণের কারণ হয় এবং গুনাহগারকে সমর্থন বা গুনাহের উদ্দীপক হয় ও ফাসাদের উদ্রেককারী হিসেবে বিবেচিত হয় তবে তা জায়েয নয়।[৭]
নৃত্য হারাম হওয়ার কারণ
ফিকাহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লেখনীতে নৃত্য হারাম হওয়ার পক্ষে নিম্নোক্ত দলীলাদি উল্লেখ করা হয়েছে:
১. নৃত্য হল অর্থহীন কর্ম ও খেল-তামাশা; আর অর্থহীন কর্ম ও খেল-তামাশা হল হারাম।[৮]
২. মহানবি (স.) থেকে বর্ণিত একটি রেওয়ায়েতে নৃত্যকে নিরঙ্কুশভাবে হারাম বলা হয়েছে।[৯]
৩. নৃত্য হল ফাসাদের মূল এবং লজ্জা শেষ করে দেয়।[১০]
নৃত্যের বিধান থেকে যেগুলোকে পৃথক করা হয়েছে
যে সকল ফকীহগণের মতে নৃত্য হারাম তারা কিছু কিছু বিষয় নৃত্যের বিধান থেকে পৃথক করেছেন:
স্বামী ও স্ত্রী’র পরস্পরের জন্য নৃত্য; ফকীহগণের কেউ কেউ স্বামীর জন্য স্ত্রীর নৃত্যকে জায়েজ বলে মনে করেন।[১১] তাদের মধ্যে একটি দল স্ত্রীর জন্য স্বামীর নৃত্যকে জায়েয মনে করেন,[১২] অপর দলটি না।[১৩] অবশ্য স্বামী ও স্ত্রীর পরস্পরের জন্য নৃত্য ঐ অবস্থায় জায়েয যখন তার সাথে অপর কোন হারাম কর্ম যুক্ত না হয়।[১৪] বিশিষ্ট মারজায়ে তাকলীদ ‘আয়াতুল্লাহ মুহাম্মাদ তাকী বাহজাত’ স্বামী ও স্ত্রীর পরস্পরের জন্য নৃত্যকেও হারাম বলে মনে করেন।[১৫]
নারীদের উদ্দেশ্যে নারীদের নৃত্য: কিছু কিছু ফকীহর মতে -যারা নৃত্যকে হারাম বলে মনে করেন- নারীর জন্য নারীর নৃত্য জায়েয।[১৬] তবে এ নৃত্য তখনই জায়েয হবে যখন তার সাথে গানের মত অন্য কোন হারাম কর্ম যুক্ত না হয় এবং কোন পুরুষই -এমনকি ঐ নারীর কোন মাহরাম পুরুষও- সেখানে উপস্থিত না থাকে।[১৭]
সামা
সুফীগণ ‘সামা’ (سماع) নামক এক প্রকার নৃত্য নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে আঞ্জাম দিয়ে থাকে। তাদের বিশ্বাস এ ধরনের মুভমেন্টের মাধ্যমে তাদের মাঝে এক ধরনের আন্দোলন ও আবেগপূর্ণ আনন্দের অবস্থা তৈরি হয়, আর এভাবে তারা প্রভুর নিকটবর্তী হতে পারে।[১৮] তবে তাদের কেউ কেউ নৃত্য ও সূরকে সুফীদের জন্য জায়েয বলে মনে করেন না।[১৯]
তথ্যসূত্র
- ↑ মেহেরবানী, রাক্স, পৃ. ২১৫।
- ↑ মুআসসেসেয়ে দাএরাতুল মাআরেফে ইসলামি, ফারহাঙ্গে ফিকহ, ১৩৮৯ সৌরবর্ষ, খ. ৪, পৃ. ১২৪।
- ↑ অধিক অবগতির জন্য দেখুন, গোলপায়গানী, ইরশাদুল মাসায়েল, প্রকাশকাল ১৪১৪ হিজরী, পৃ. ১৫৬; মুন্তাযেরি, রিসালায়ে ইস্তিফতাআত, খ. ১, পৃ. ১৪৪; সিস্তানী, আল-ফাতাউই আল-মাইসারাহ, ১৪১৬ হিজরী, পৃ. ৪৩৬ ও ৪৩৭; মাকারেম শিরাযী, ইস্তিফতাআতে জাদীদ, ১৪২৭ হিজরী, খ. ১, পৃ. ১৫৫।
- ↑ খুয়ী, সিরাতুন নাজাহ, ১৪১৬, খ. ১, পৃ. ৩৭২।
- ↑ খামেনেয়ী, আজবেবাতুল ইস্তিফতাআত, ১৪২৪ হি., পৃ. ২৫৬।
- ↑ মাকারেম শিরাযী, ইস্তিফতাআত, ১৪২৭ হি., খ. ১, পৃ. ১৫৫, প্রশ্ন নং ৫৩৬।
- ↑ খামেনেয়ী আজবেবাতুল ইস্তিফতাআত, ১৪২৪ হিজরী, পৃ. ২৫৬, প্রশ্ন নং ১১৬৯।
- ↑ আরদেবিলী, রিসালাতুন ফিল গিনা, ১৪১৮ হি., পৃ. ২৭; তাবরিযী, ইস্তিফতাআতে জাদীদ, খ. ১, পৃ. ২১৯।
- ↑ মুন্তাযেরি, রিসালাতুল ইস্তিফতাআত, বি-তা, খ. ১, পৃ. ১৪৪।
- ↑ ফাযেল লানকারানী, জামেউল মাসায়েল, ১৪২৫ হি., পৃ. ৪৪৩।
- ↑ দ্রষ্টব্য, তাবরিযী, সিরাতুন নাজাহ, খ. ৫, পৃ. ৩৮৫; শিরাযী, ইস্তিফতাআতুল গিনা, পৃ. ৪৮; মাকারেম শিরাযী, ইস্তিফতাআতে জাদীদ, ১৪২৭ হি., খ. ১, পৃ. ১৫৫।
- ↑ তাবরিযী, সিরাতুন নাজাহ, খ. ৫, পৃ. ৩৮৫; শিরাযী, ইস্তিফতাআতুল গিনা, পৃ. ৪৮।
- ↑ মাকারেম শিরাযী, ইস্তিফতাআতে জাদীদ, ১৪২৭ হি, খ. ১, পৃ. ১৫৫।
- ↑ খামেনেয়ী আজবেবাতুল ইস্তিফতাআত, ১৪২৪ হি., পৃ. ২৫৬, প্রশ্ন নং ১১৭২
- ↑ বাহজাত, ইস্তিফতাআত, ১৪২৮ হি., খ. ৪, পৃ. ৫৩১।
- ↑ ফাযেল লানকারানী, আজবেবাতুস সায়িলীন, ১৪১৬ হি., পৃ. ১৪৮; তাবরিযী, ইস্তিফতাআতে জাদীদ, খ. ২, পৃ. ২১৯।
- ↑ দ্রষ্টব্য তাবরিযী, ইস্তিফতাআতে জাদীদ, খ. ২, পৃ. ২১৯।
- ↑ নৌরুযী তালাব, মুতালেয়ে তাতবিকী রাক্স ওয়া রাক্সে সামা, পৃ. ১৯।
- ↑ কাশানী, মিসবাহুল হিদায়াহ, ১৩৭৬ সৌরবর্ষ, পৃ. ১৭৮।
গ্রন্থপঞ্জি
- আরদেবিলী, রিসালাতুন ফিল গিনা, তাছহিহ ও তাহকিক; আলী আকবার যামানী নেজাদ, কোম, মিরসাদ, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৮ হিঃ।
- বাহজাত, মুহাম্মাদ ত্বাকী, ইস্তিফতাআত, কোম, দাফতারে আয়াতুল্লাহ বাহজাত, প্রথম প্রকাশ, ১৪২৮ হিঃ।
- তাবরিযী, জাওয়াদ, ইস্তিফতাআতে জাদীদ, প্রথম প্রকাশ, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
- তাবরিযী, জাওয়াদ, সিরাতুন নাজাহ, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
- খামেনেয়ী, সাইয়্যেদ আলী, আজবেবাতুল ইস্তিফতাআত, কোম, দাফতারে মাকামে মুয়াযযামে রাহবারী দার কোম, প্রথম প্রকাশ, ১৪২৪ হিঃ।
- খুয়ী, সাইয়্যেদ আবুল কাসেম, কোম, মাকতাবে নাশরে আল-মুন্তাখাব, সিরাতুন নাজাহ, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৬ হিঃ।
- সিস্তানী, সাইয়্যেদ আলী, আল-ফাতাভীল মাইসারাহ, সংগ্রহে সাইয়্যেদ আব্দুল হাদী হাকিম, কোম, দাফতারে হযরত আয়াতুল্লাহ সিস্তানী, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৬ হিঃ।
- শিরাযী, সাইয়্যেদ সাদেক, ইস্তিফতাআতুল গিনা, (প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।
- ফাযেল লানকারানী, মুহাম্মাদ, আজবেবাতুস সায়িলীন, কোম, দাফতারে আয়াতুল্লাহ ফাযেল লানকারানী, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৬ হিঃ।
- ফাযেল লানকারানী, মুহাম্মাদ, জামেউল মাসায়েল, কোম, আমির কালাম, প্রথম প্রকাশ, ১৪২৫ হিঃ।
- কাশানী, ইযযুুদ্দিন মাহমুদ, মিসবাহুল হিদায়াহ, তাছহিহ, জালালুুদ্দিন হুমায়ী, তেহরান, নাশরে হুমা, ১৩৭৬ (সৌরবর্ষ)।
- গুলপায়গানী, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ রেযা, ইরশাদুস্ সায়েল, বৈরুত, দারুস সাফওয়াহ, দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৪১৪ হিঃ।
- মাকারেম শিরাযী, নাসের, ইস্তিফতাআতে জাদীদ,কোম, ইন্তেশারাতে মাদরাসেয়ে ইমাম আলী ইবনে আবু তালিব (আ.), দ্বিতীয় প্রকাশ, ১৪২৭ হিঃ।
- মুন্তাযেরি, হোসাইন আলী, রিসালাতুল ইস্তিফতাআত, কোম, প্রথম প্রকাশ,(প্রকাশের তারিখ অজ্ঞাত)।